Archive | October 2017

৫৬ তম পর্ব। কী আবিস্কার করিয়া এই বিজ্ঞানীত্রয় মেডিসিন বা ফিজিওলজী তে ২০১৭ এর নোবেল বিজয়ী হলেন? মানব দেহের জৈব ঘড়ির নাম কি কখনো শুনেছেন?

 

1

 

 

চিত্র-১

Source of figure-https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2017/press.html

বাম হতে ডানে-

1) Jeffrey C. Hall

Born: 1945, New York, NY, USA

Affiliation at the time of the award: University of Maine, Maine, ME, USA

Prize motivation: “for their discoveries of molecular mechanisms controlling the circadian rhythm”

2) Michael Rosbash

Born: 1944, Kansas City, MO, USA

Affiliation at the time of the award: Brandeis University, Waltham, MA, USA, Howard Hughes Medical Institute

Prize motivation: “for their discoveries of molecular mechanisms controlling the circadian rhythm”

3) Michael W. Young

Born: 1949, Miami, FL, USA

Affiliation at the time of the award: Rockefeller University, New York, NY, USA

Prize motivation: “for their discoveries of molecular mechanisms controlling the circadian rhythm”

জী হ্যা, আজ আপনাদেরকে মানব দেহের এমন একটি কর্মকান্ডের কথা শুনাব যা পূর্বে অনেকেই হয়তো শুনেননি।

তা হল আমাদের কোষে জৈব ঘড়ি ছেট করা রয়েছে। ঠিক একই ভাবে বৃক্ষাদি সহ সকল প্রানীর মধ্যেও রয়েছে।

মানব দেহ তার নিজস্ব ঘড়ির সময় অনুসরন করে দেহের জৈব ক্রীয়াদি সম্পন্ন করে থাকে ঠিক যেমনটা আমরা সৌর-ঘড়ি অনুসরন করে অফিসে যাওয়া আসা ও অন্যান্য কাজ কর্ম সমাধা করে থাকি।

এই জৈব ঘড়ীকে সৌর ঘড়ীর সময়ের সংগে সমন্বিত হয়ে কাজ চালাতে হয়।

সৌর ঘড়ী বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি, যে ঘড়ী দ্বারা আমরা দিবা-রাত্রের ২৪ ঘন্টা হিসাব করে থাকি।

বিভিন্ন দেশে সূর্যের অবস্থানের তারতম্যের সংগে খাপ খাইয়ে সৌর ঘড়ীর কাটার তারতম্য হয়।

আগে আমাদের জীবন প্রনালীতে সচরাচর বাস্তব ঘটমান কিছু ঘটনার উদাহরণ দিলে আমাদের জৈব ঘড়ী কী এবং সৌর ঘড়ীর সংগে এর সম্পর্কও বা কী তা বুঝতে সহজ হবে।

 

যেমন ধরুন আপনি প্লেনে করে ২২ ঘন্টা ভ্রমন করে ঢাকা হতে নিউ ইয়র্কে পৌছাইলেন। তখন দেখা যাবে এখানে এসে অ্ন্ততঃ ৫-৭ দিন, দিনের বেলায় গভীর ঘুম দেওয়া লাগতেছে।

কারণ আপনার দেহের জৈব ঘড়িই আপনাকে আপনার বাংলাদেশে অবস্থান কালীন ঘুমের সৌর-ঘড়ীর দেওয়া রাত্রের সময় রেকর্ড করে রেখেছে, আপনি বাংলা দেশে রাত্রে ঘুমাতেন, এবং নিউ ইয়র্কে যখন দিনের বেলা তখন বাংলাদেশে রাতের বেলা।

আপনার দেহের জৈব ঘড়ী এখনো নিউইয়র্কের সৌর-ঘড়ীর সংগে  মিলিয়ে লইতে পারে নাই , তাই ঠিক সেই বাংলাদেশের সৌর-ঘড়ীর রাতের সময়ে আপনার ঘুম ঘটাচ্ছে যদিও তখন  নিউয়র্কের সৌর ঘড়ী অনুসারে দিনের বেলা।

 

এটা মিলিয়ে লইতে ৫-৭ দিন পর্যন্ত লেগে যায়।

স্বভাবতঃ রাত্র হলে আমাদের ঘুম আসে ও আমরা ঘুম দেই?

কিন্তু কেন রাত্র হলে আমাদের ঘুম আসে?

তার কারণ আমাদের BIOLOGICAL CLOCK এ রাত্র হয়ে গেলে তখন এই BIOLOGICAL CLOCK , আমাদের মস্তিস্কের কেন্দ্রে অবস্থিত PINEAL GLAND নামক ছোট্ট একটি ENDOCRINE GLAND হতে MELATONIN নামক একটি হরমোন নিঃসরিত করায় যার একটি কাজ হল আমাদের ঘুম আনয়ন করা।

রাতের অন্ধকার একে নিঃসরন হতে STIMULATE করে।

 

 

ঠিক এভাবেই শরীরের  BIOLOGICAL CLOCK সৌর ঘড়ীর সংগে খাপ খাইয়ে আমাদের শরীরের বহুবিধ জৈব ক্রিয়াদি সময়মত সম্পন্ন করিয়ে আমাদের দেহকে সুস্থ রাখে।

 

তার মানে দাড়াল সূর্য আমাদের দেহে আমাদেরই অজ্ঞাতে আমাদের কোষে BIOLOGICAL CLOCK এ সময় স্থাপন করে আমাদের দৈনন্দিন আচরণ নিয়ন্ত্রন করে।

 

( নীচে চিত্র-৬ দেখুন) এই চিত্রে দেখানো হয়েছে কী ভাবে আমাদের জৈব ঘড়ী দিবা রাত্রের বা সৌর ঘড়ীর সময়ের সংগে সমন্বীত হয়ে একত্র কাজ শরীরের হরমোন ও জৈব ক্রীয়াদির উপর প্রভাব ফেলে।

 

এই গ্রহের প্রতেকটা প্রাণীকেই সূর্যকে সাড়া দিতে হয়।

এজন্য কিছু কিছু বিজ্ঞানীরা বলেন, আমরা সূর্যের দাস।

 

এই ত্রি- বিজ্ঞানী আমাদের কোষে এই BIOLOGICAL CLOCK কী ভাবে কাজ করে, তারই রহস্য উদঘাটন করে ২০১৭ এর নোবেল বিজয়ী হয়েছেন।

 

তারা কীভাবে এর রহস্য উন্মোচন করলেন সেইটা এখানে বর্ণনার বিষয়বস্তু।

আসুন তাহলে–

 

কী ভাবে বিজ্ঞানীগণ এই জৈব ঘড়ীর সন্ধান পান?

জী হ্যা?

১৮ শতাব্দীর দিকে জ্যোতির্বিদ Jean Jacques d’Ortous de Mairan,   MIMOSA নামক একটি উদ্ভিজ্জের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পেলেন এর পাতাগুলী দিনের বেলায় খুলে প্রশারিত হয়ে যায় আর সূর্য ডোবার সাথে সাথে কুচকিয়ে বুজে যায়।

তিনি এরপর ঐ উদ্ভিজ্জগুলীকে দিবারাত্র জুড়ে কৃত্রিম রাত্র তৈরী করে গভীর অন্ধকারে রাখতে থাকলেন।

তিনি অতিশয় আশ্চার্যান্বিত হয়ে লক্ষ করলেন, উদ্ভিজ্জের পাতাগুলী ঠিক পূর্বের ন্যায়ই আচরণ করছে। অর্থাত দিনে পাতাগুলী খুলতেছে ও সন্ধায় বুজে যাচ্ছে যদিও তাকে সর্বক্ষনই কৃত্রিম রাত্র সৃষ্টি করে গভীর রাতের মত অন্ধকার যায়গায় স্থাপন করা হয়েছে।(চিত্র-২)

 

2

Source of figure-https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2017/press.html

চিত্র-২

লক্ষ করুন, এই চিত্রের উপরি অংসের উদ্ভিজ্জগুলী স্বাভাবিক সৌর দিবা-রাত্রের মধ্যে রাখলে যে আচরণ করতেছে, নীচের অংসের চিত্রে উদ্ভিজ্জগুলীকে অনবরত কৃত্রিম রাত্রের গভীর অন্ধকারের মধ্যে রাখলেও ঠিক একই আচরণ করতেছে।

 

এর দ্বারা কী অনুমান করা গেল?

এর দ্বারা এটাই অনুমিত হল যে তার অভ্যন্তরে এমন কোন জৈব ঘড়ি রয়ে গিয়েছে যা বাহিরের স্বাভাবিক সৌর-ঘড়ীর দিবারাত্রির সংগে মিলিয়ে রেকর্ড করে রেখেছে। যার ফলে পরে বাহিরের সৌর দিবারাত্রের স্পর্ষ হতে দূরে রাখলেও তার আভ্যন্তরীন জৈব ঘড়ীতে রেকর্ড করে রাখা স্বাভাবিক সৌর ঘড়ীর সময়কে অনুসরণ করে ঠিকই পূর্বের ন্যায় আচরণ করতেছে। (চিত্র-২)

 

১৯৭০ এর দিকে এসে বিজ্ঞানীগন এ ব্যাপারে আরো গভীরে যেতে মনোযোগী হলেন।

এ সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী Seymour Benzer ও  তার ছাত্র Ronald Konopka  প্রশ্ন  রাখলেন, জীব দেহের সংগে সৌর-দিবারাত্রের এই সম্পর্ক যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় “CIRCADIAN RHYTHM” বলে,, এর সংগে DNA এর কোন জ্বীন এর সম্পর্ক আছে কিনা।

ল্যাটিন শব্দ CIRCA অর্থ AROUND, DIES অর্থ DAY.

তারা FRUIT FLIES কে গবেষনার জন্য নির্বাচন করে এর উপর গবেষনা চালিয়ে যেতে থাকেন।

তারা কী কৌশল অবলম্বন করলেন?

তারা ঐ  FRUIT FLIES এর একটি অজ্ঞাতনামা জ্বীন কে MUTATION (MUTATION কী,তা পর্ব-১২ দেখুন)(৮) করে দিয়ে দেখতে পেলেন FRUIT FLIES এর CIRCADIAN RHYTHM ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার দেহ এখন পূর্বের ন্যায় দিবা-রাত্র চিনে সেরুপ আচরণ করতে পারতেছেনা।

তখন তারা ধরে নিলেন এই জ্বীনটিই প্রাণীর দেহে দিবা রাত্রের আচরনের পরিবর্তন বা CIRCADIAN RHYTHM ঘটিয়ে BIOLOGICAL CLOCK এর কাজ করায়।

এভাবে এই বিজ্ঞানীগণ BIOLOGICAL CLOCK এর রহস্যের প্রায় কাছাকাছি উপনীত হয়ে গেলেন।

তখন তারা এই জ্বীনটির নামকরণ করলেন “PERIOD” জ্বীন।

খুব ভাল কথা। বুঝলাম দেহের CIRCADIAN RHYTHM ও BIOLOGICAL CLOCK এর জন্য এই “PERIOD” জ্বীনটাই দায়ী।

কিন্তু বিজ্ঞানীগন এতটুকু জেনেই তৃপ্ত হতে পারলেননা।

তারা এবার প্রশ্ন রাখলেন, কী ভাবে এই জ্বীনটা দেহের CIRCADIAN RHYTHM বা BIOLOGICAL CLOCK এর কাজ করে? বা কোন পদ্ধতিতে এটা ঘটায়?

এই রহস্যটা উদ্ঘাটন করেছেন এ বৎসরের এই ত্রি- নোবেল বিজয়ী, 1) Jeffrey C. Hall, 2) Michael Rosbash, ও 3) Michael W. Young

.

কী ভাবে তারা এর উদ্ঘাটন করলেন?

 

জী হ্যাঁ,

এরাও FRUIT FLIES এর উপর গবেষণা করতেছিলেন এবং এদের ও গবেষনার লক্ষবস্তু ছিল এটা উদ্ঘাটন করা, যে প্রকৃতপক্ষে এই  BIOLOGICAL CLOCK প্রানী দেহে কীভাবে কাজ করে।

১৯৮৪ সালে  Jeffrey C. Hall, Michael Rosbash, BOSTON এর BRANDIES UNIVERSITY তে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে এবং MICHAEL W. YOUNG নিউ ইয়র্কের ROCKEFELLER UNIVERSITY তে গবেষনার কাজ চালাচ্ছিলেন।

তারা এই সময় PERIOD জ্বীন কে পৃথক করে ফেলতে সমর্থ হন। এবং Jeffry Hall ও Michael Rosbash, আবিস্কার করতে সমর্থ হলেন যে এই PERIOD জ্বীন টা জেনেটিক কোড এর মাধ্যমে কোষের CYTOPLASM এ  অবস্থিত RIBOSOME এর দ্বারা  “PER” নামক একটি প্রোটীন কোষে উৎপন্ন করে রাতভর নির্দিষ্ট মাত্রায়  জমা রাখে, আর দিন হলে এটা ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে এর মাত্রা শূন্য হয়ে যায়।

( কোষ কী বুঝতে পর্ব-১৬  ও পর্ব-১৭ পড়ুন)

( কি ভাবে জ্বীন কোড প্রয়োগের মাধ্যমে প্রোটীন উৎপন্ন করে তা জানতে ১১ তম পর্ব পড়ুন।) (চিত্র-২ দেখুন)

(৪,৫,৬ দেখুন)

এভাবে “PER” প্রোটীন একবার কোষের CYTOPLASM এ জমা হয়ে LEVEL (মাত্রা) ঠিক রাখা  ও পরবর্তীতে এটা ভেঙ্গে গিয়ে ও এর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে এর মাত্রা (LEVEL) শূন্যের কোঠায় আনার  মাধ্যমে কোষের জৈব ঘড়ী, সৌর-ঘড়ীর সংগে একত্রে সমন্বিত ভাবে ২৪ ঘন্টা ব্যাপী কাজ করে। এবং এর জন্যই শরীর সময় মত তার  দিবা রাত্র চিনতে পারে ও তদ্রুপ আচরণ করে।

অর্থাৎ BIOLOGICAL CLOCK এই PER প্রোটীনটার কোষে উৎপন্ন হয়ে কোষে এর মাত্রা ঠিক থাকাটাই  শরীরকে সৌর ঘড়ীর রাত্রের আগমনের বার্তা ও এর নিঃশেষ বা মাত্রা শূন্যের কোঠায় আনার মাধ্যমে সৌর ঘড়ীর দিনের আগমনের বার্তা প্রদান করে। (চিত্র-৩ দেখুন)

এভাবে সৌর ঘড়ীর দিবারাত্রির চক্রের সংগে BIOLOGICAL ঘড়ীর দিবারাত্রির চক্র একত্রে মিলিত হয়ে কাজ করে আমাদের শরীরের জৈব ক্রীয়াদি সময়মত সুশৃংখল ভাবে সম্পন্ন করে আমাদের শরীরকে শুস্থ রাখে।(১,২)

 

PERIOD  GENE এর CHROMOSOME অবস্থান দেখে নিন-(৩)

Cytogenetic Location: 2q37.3, which is the long (q) arm of chromosome 2 at position 37.3

Molecular Location: base pairs 238,244,038 to 238,290,102 on chromosome 2 (Homo sapiens Annotation Release 108, GRCh38.p7) (NCBI)

 

3

SOURCE OF FIGURE- https://ghr.nlm.nih.gov/gene/PER2#location

চিত্র- ৩,

 

কিন্তু বিজ্ঞানীদের কৌতুহলী মন  শুধু এতটুকু জেনেই সন্তুষ্ট থাকতে পারে নাই।

এর পরেও তাদেরকে আরো কিছু প্রশ্নের সমাধান দিতে হয়েছে যেমন –

১) এটা না হয় বুঝলাম কোষে PERIOD জ্বীন রাতের বেলায় PER প্রোটীন উৎপন্ন করে তার মাত্রা ঠিক রেখে শরীরকে রাতের আগমন বার্তা প্রদান করে তার শরীরের রাতের জৈব ক্রীয়াদি সমাধান করল।

কিন্ত প্রশ্ন হল দিনের বেলায় এই প্রোটীন এর কার্য না থাকায় PERIOD জ্বীন কী ভাবে প্রোটীন উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে এর মাত্রা শুন্যের কোঠায় এনে দিনের আগমনের বার্তা দেয়?

যদি দিনের বেলায়ও এটা উৎপাদন করতে থাকতো, তাহলে বায়োলজীকাল ঘড়ীর সময়ের কাটা ভূল সময় প্রদান করে শরীরের জৈব ক্রীয়াদি ভূল পথে চালিয়ে দিয়ে আমাদের অশুস্থ করে দিত।

এর উত্তর তারা এভাবে দিয়েছেন যে কোষ এটা FEED BACK পদ্ধতি প্রয়োগ করে বন্ধ করে। শরীরে আরো বহু ক্ষেত্রে এই FEED BACK পদ্ধতি চালু আছে। যারা PHYSIOLOGY পড়েছেন তারা এটা জানেন।

FEED BACK পদ্ধতি কী?

FEED এর অর্থ-THE MACHINE ALWAYS CONTINUES

BACK এর অর্থ- TOWARDS FORMER LOCATION

তাহলে FEED BACK এরপূর্ণ অর্থ দাড়াল- THE MACHINE ALWAYS CONTINUES TOWARDS FORMER LOCATION.

এখানেও ঠিক তাই ঘটে।

কারণ যখন PER প্রোটীন কোষের CYTOPLASM এ যথাযথ পরিমান উৎপন্ন হয়ে গেল তখন এই PER প্রোটীন কোষের নিউক্লীয়াসের মধ্যে ঢুকে যায় যেখানে এর উৎপাদক জ্বীন PERIOD অবস্থান করে।

আর  সংগে সংগে PERIOD জ্বীন “PER” প্রোটীন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ PERIOD জ্বীন টা এমন অনুভূতি লয়ে সৃষ্ট যে এর কাছে PER প্রোটীন পৌছে গেলেই এ PER প্রোটীন উৎপাদন বন্ধ করে দিবে।

ফলে PER প্রোটীন এর মাত্রা কোষে শূন্য হয়ে যাবে।

একেই শরীরের জৈব প্রকৃয়ার FEED BACK পদ্ধতি বলে।

একটা সাধারণ ঘটনার উদাহরণ দিলে FEED BACK পদ্ধতি কী করে কাজ করে বুঝতে সহজ হবে

যেমন ধরুন-

আপনি আপনার কোন এক কম্পিউটার ইঞ্জীনীয়ার বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে দেখতে পেলেন তিনি একটি AQUARIAUM এ GOLDEN FISH চাষ করতেছেন।

AQUARIAUM TANK এর উচ্চতা ৬ ফুট । এর সংগে জলের অটোমেটিক পাইপ লাগানো রয়েছে।

ট্যাংকটিতে প্রাথমিক অবস্থায় ৫ ফুট পর্যন্ত জল ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিদিন এটা শুকাতে শুকাতে নীচের দিকে নামছে।

ট্যাংকটির জল কখনোই ৪ ফুট এর নীচে যাবেনা এবং উপরে কখনোই ৫ ফুটের উপরে উঠবেনা অটোমেটিক পদ্ধতিতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৪ ফুট পর্যন্ত জল নামলেই পাইপের সুইচ স্বয়ংক্রীয় ভাবে খুলে গিয়ে ট্যাংকটিতে পাইপ দিয়ে জল পড়ে ট্যাংকটি ভর্তি হতে থাকবে। জল ভর্তি হতে হতে পূর্বের জলের লেভেল ৫ ফুট পর্যন্ত উঠলেই  তখনই সাথে সাথেই স্বয়ংক্রীয় ভাবে পাইপ এর সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আবার জল শুকাতে শুকাতে ৪ ফুট পর্যন্ত যখনি নামবে, তখনি পুনরায় পাইপের সুইচ স্বয়ংক্রীয় ভাবে ON হয়ে গিয়ে ট্যাংকটিতে জল ভর্তী হতে থাকবে।

স্বয়ংক্রীয়ভাবে একই ঘটনা বারবার ঘটে ট্যাংকটি জলের মাত্রা ৪ হতে ৫ ফুটের মধ্যে রাখতেছে।

এইটাই FEED BACK পদ্ধতি।

এটা কী ভাবে করেছে?

ঐ কম্পিউটার ইঞ্জীনিয়ার তার একটা কম্পিউটারে ঐভাবে প্রোগ্রাম ছেট করে, ট্যাংক গাত্রে ঐ ৪ ও ৫ ফুট লেভেলে SENSOR বসিয়ে তাকে ও পাইপের সুইচের সংগে যথাযথ ভাবে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে সংযুক্ত করে দিয়েছে।

ট্যাংক এর জলের মাত্রা যখনি ৪ ফুট লেভেলে  নেমেছে তখনি সেখানকার SENSOR কম্পিউটারকে সুইচ ON করার বার্তা পাঠাচ্ছে, আর কম্পিউটার তখন পাইপের সুইচ ON করে দিয়ে ট্যাংকটিতে জল ভরাচ্ছে।

আবার যখন ট্যাংটিতে জলের লেভেল ৫ ফুট পর্যন্ত উঠছে তথন সেখানকার SENSOR কম্পিউটারকে পাইপের সুইচ OFF করার বার্তা পাঠাচ্ছে। আর কম্পিউটার তখন সুইচ OFF করে দিয়ে জল বন্ধ করে দিয়ে জলের সরবাহ বন্ধ করে দিচ্ছে।

এভাবেই এখানে FEED BACK পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে ট্যাংকটিতে জল একবার ৪ ফুট পর্যন্ত নামাচ্ছে ও পরক্ষনেই জলকে ৫ ফুট পর্যন্ত উঠাচ্ছে ও এই চক্র অনবরত চলতেছে।

এটা তৈরী করা ইঞ্জিনীয়ারদের পক্ষে নিতান্ত সাধারণ ব্যাপার।

আর শরীরের DNA তো আরো অনেক বেশী জটীল,শুক্ষ্য ও উন্নত মানের কম্পিউটার।

ঠিক এভাবেই  বরং এর চাইতেও আরো অনেক বেশী সূক্ষ, জটীল ও উন্নত পযুক্তি প্রয়োগ করে, DNA এর জ্বীন গুলী প্রয়োজন অনুসারে যেখানে যে গুন সম্পন্ন প্রোটীন প্রয়োজন হয় ঠিক সেই ধরনের কোড প্রয়োগ করে সেই গুন সম্পন্ন প্রোটীন উৎপাদন করে শরীরের যাবতীয় জৈব ক্রীয়াদি সম্পন্ন করে আমাদের সুস্থ রাখে ও বাচিয়ে রাখে।

শরীরের DNA এর জ্বীন গুলীতেও কমপিউটারের প্রোগ্রাম SETTING এর মত করে প্রতিটা প্রোটীন উৎপাদনের জন্য সরাসরি কোড SET করা রয়েছে।

আর কোড mRNA এর মাধ্যমে কোষের CYTOPLASM এ অবস্থিত প্রোটীন উৎপাদক ফ্যাক্টরী RIBOSOME নামক ক্ষুদ্র ORGANELLE এর দ্বারা উৎপাদন করিয়ে সেই প্রোটীন এর দ্বারা কাজ করানোর জন্য সঠিক জায়গায় পাঠিয়ে দেয়।

( কি ভাবে জ্বীন কোড প্রয়োগের মাধ্যমে প্রোটীন উৎপন্ন করে তা জানতে ১১ তম পর্ব পড়ুন।) (৪)

এখানে বলা যায় শরীর এর কম্পিউটারটা DNA আকারে কাজ করছে এবং প্রোটীনটা SENSOR হিসাবে কাজ করছে। তবে শরীরের কৌশল অনেক বেশী সূক্ষ, জটীল ও উন্নত।

২) এরপর বিজ্ঞানীরা আর একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যান-

তা হল, এটা না হয় বুঝলাম যে কোষের CYTOPLASM এ ‘PER” প্রোটীন যথাযথ পরিমান উৎপন্ন হয়ে গেলে তখন সে কোষের NUCLEUS এর মধ্যে ঢুকে এর উৎপাদক জ্বীন PERIOD এর কাছে গিয়ে তার উৎপাদন বন্ধ করার বার্তা পৌছে দেয়।

কিন্তু এখানে পশ্ন হল, PER প্রোটীন এই কাজটা কেন করতে যায় বা অন্য কেহ কি তাকে এই কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ করায়?

জী হ্যা, এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে বিজ্ঞানী MICHAEL YOUNG ১৯৯৪ সনে জৈব ঘড়ীর দ্বিতীয় একটি জ্বীন আবিস্কার করে ফেলেন। এই জ্বীনটার নাম দিলেন TIMELESS GENE. এই জ্বীনটা কোডের মাধ্যমে TIM নামক একটি প্রোটীন উৎপাদন করায়। আর এই TIM প্রোটীনটা যখন PER প্রোটীনটার সংগে যুক্ত হয়ে যায়, তখনি PER প্রোটীনটা NUCLEUS এর দিকে ধাবিত হয়ে নিউক্লীয়াসের মধ্যে ঢুকে যায়।

এটাও বলতে পারেন, এই TIM প্রোটীনটা PER প্রোটীনটার কেমন যেন হাতটা ধরে পথ চিনিয়ে নিউক্লীয়াসের মধ্যে ঢুকিয়ে সঠিক লক্ষ্যে লয়ে যায়।

আর PER প্রোটীনটা কেমন যেন তার উৎপাদক PERIOD জ্বীন কে এই বার্তাটি কানে কানে পৌছে  দেয় “এখন আর কোড পাঠাইবেননা, এখন আর PER প্রোটীন  উৎপাদনের প্রয়োজন নাই”।

আর ঠিক তখনি PERIOD জ্বীনটাও সাথে সাথে কোড পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে  PER প্রোটীন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।    (চিত্র-৫ দেখুন)

কী বুঝলেন?

DNA কত বড় কৌশলী দেখলেন তো?

একটা জ্বীন,PERIOD, দ্বারা একটা প্রোটীন,PER, উৎপাদন করে BIOLOGICAL CLOCK এর রাতের ঘড়ীটা চালাল। একজনের দ্বারা কী আর সব কাজ চলে?

তাই এবার BIOLOGICAL CLOCK এর দিনের কাজ সম্পন্ন করানোর জন্য দ্বিতীয় আর একটা জ্বীন, TIMELESS, এর দ্বারা আর একটা প্রোটীন ,TIM, উৎপাদন করে দিয়ে প্রথম প্রোটীনটাকে হাত ধরে সঠিক জায়গায় বার্তা পাঠিয়ে PER প্রোটীন  উৎপাদন STOP করে দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিল যাতে সে BIOLOGICAL CLOCK এর দিনের কাজটাও যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করতে পারে।

এটা কেন করায়?

এটা না করালে তো BIOLOGICAL CLOCK এর দিবা-রাত্রের OSCILLATION বা দোলন এর RHYTM নষ্ট হয়ে ঘড়ীর কাটার সঠিক সময়টা নস্ট হয়ে যাবে ও ভূল সময় দেখাবে। আর একই সংগে এর প্রভাব BIOLOGIAL কর্মকান্ডের ও আমাদের শরীর এর  উপর পড়ে আমরাও অশুস্থ হয়ে যাব।

RHYTHM বলা হয় কোন একটি পূর্ণ ঘটনা একই মাত্রাকারে ও একই সময়ের পার্থক্যে চক্রাকারে অনবরত  চলতে থাকা, যেমন আমাদের হৃদপিন্ড RHYTHM আকারে একবার প্রসারণ ও আর একবার সংকোচন এর মাধ্যমে HEARTBEAT  দিয়ে আমাদেরকে বাচিয়ে রাখতেছে।

BIOLOGICAL CLOCK ও যদি SOLAR CLOCK এর  সংগে RHYTHM আকারে না চলতো তা হলেও এই BIOLOGICAL CLOCK এর উদ্যেশ্য ব্যর্থ হয়ে যেত।

 

সারাংস-

১) আমাদের শরীরের DNA , শরীরের কোষের অভ্যন্তরে, শরীরের জৈব প্রকৃয়া সময়মত সুসম্পন্ন করার জন্য, অতি শূক্ষ্য ও জটীল কলা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সৌর-ঘড়ীর সময়ের সংগে সমন্বীত রেখে BIOLGICAL CLOCK বা জৈব ঘড়ী ছেট করে  রেখেছে।

২) এই BIOLOGICAL CLOCK কে পরিচালনা করায় DNA এর মধ্যে অবস্থিত ২টা জ্বীন, PERIOD GENE ও TIMELESS GENE, কোডের মাধ্যমে ২টা প্রোটীন যথাক্রমে, PER ও TIM, উৎপাদন করিয়া।

৩) কোষে PER প্রোটীন যথাযথ মাত্রায় অবস্থিতির দ্বারা BIOLOGICAL CLOCK শরীরকে ‘রাত” এর আগমনের বার্তা ও PER প্রোটীন এর উৎপাদন STOP করে দিয়ে, এর মাত্রা  শূন্য লেভেলে আনার মাধ্যমে ‘দিন” এর আগমনের বার্তা দেয়।

৪) BIOLOGICAL CLOCK এর সময় মেনে আমাদের শরীর তার জৈব ক্রীয়াদি সম্পন্ন করে আমাদেরকে শুস্থ রাখে।

( DNA কী ও কী ভাবে কাজ করে বুঝতে ১০ম১১তম পর্ব পড়ুন) (৭,৪)

 

আশা করি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে।

4

Source of figure- https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2017/press.html

চিত্র-৪, এই চিত্রে দেখানো হয়েছে, PER প্রোটীন রাতের বেলায় কোষে অবস্থান করে শরীরকে “রাত্র” এর আগমনের বার্তা ও দিনে অন্তর্ধান হয়ে “দিন” এর আগমনের বার্তা দেয়।

5

Source of figure- https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2017/press.html

চিত্র-৫,

এই চিত্রে দেখানো হয়েছে, কী ভাবে TIM প্রোটীন PER প্রোটীন এর সংগ যুক্ত হয়ে তাকে টেনে লয়ে NUCLEUS এর মধ্যে  ঢুকতেছে।

6

Source of figure- https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2017/press.html

Figure- ৬

এই চিত্রে দেখানো হয়েছে কী ভাবে আমাদের জৈব ঘড়ী দিবা রাত্রের বা সৌর ঘড়ীর সময়ের সংগে সমন্বীত হয়ে একত্রে কাজ করিয়া শরীরের হরমোন ও জৈব ক্রীয়াদির উপর প্রভাব ফেলে।

এ ভাবে নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানী ত্রয়  অগাধ পরিশ্রম করে এ সবের উত্তর খুজে বের করেছেন। তারপরই তারা নোবেল বিজয়ী হয়েছেন।

ধন্যবাদ এইসব অক্লান্ত পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল বিজ্ঞানীদেরকে।

 

পূর্ববর্তী পর্বগুলী দেখতে এখানে ক্লিক করুন- http://Chkdr02.wordpress.com

 

৫৬ তম পর্বের রেফারেন্স সমূহ-

১। https://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2017/press.html

২। https://www.theguardian.com/science/2017/oct/02/nobel-prize-for-medicine-awarded-for-insights-into-internal-biological-clock

৩. PERIOD GENE-

https://ghr.nlm.nih.gov/gene/PER2#location

৪) ১১তম পর্ব ,ডিএন এ কী ভাবে কোড পাঠিয় প্রোটীন নির্মান করায়।

https://chkdr02.wordpress.com/2014/02/22/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A7%A7%E0%A7%A7%E0%A6%B6-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%ACgene-%E0%A6%95%E0%A7%80-dna-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%AD%E0%A6%BE/

৫) ১৬ তম পর্ব (কোষ এর বর্ণনা)

https://chkdr02.wordpress.com/2014/02/22/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A7%A7%E0%A7%AC-%E0%A6%A4%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A5%A4-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%93/

৬) ১৭ তম পর্ব (স্নায়ূ কোষ)

https://chkdr02.wordpress.com/2014/02/22/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A7%A7%E0%A7%AD-%E0%A6%A4%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A5%A4-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%93/

৭) ১০ম পর্ব, DNA কী

https://chkdr02.wordpress.com/2014/02/22/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A7%A7%E0%A7%A6%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9C-2/

৮) ১২ তম পর্ব( MUTATION)-