হৃদপিন্ড, আপনি কি একটি সুস্থ দীর্ঘায়ু পেতে চান? আমাদের খাদ্য পানীয় ও জীবন প্রণালী কী ধরণের হওয়া বাঞ্চনীয়? হৃদপিন্ডের সংগে DNA এর কি কোন সম্পর্ক আছে? পর্ব-৩৯(৮)
,
হৃদপিন্ড, আপনি কি একটি সুস্থ দীর্ঘায়ু পেতে চান? আমাদের খাদ্য পানীয় ও জীবন প্রণালী কী ধরণের হওয়া বাঞ্চনীয়? হৃদপিন্ডের সংগে DNA এর কি কোন সম্পর্ক আছে? পর্ব-৩৯(৮)
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ?
তাহলে এই হৃদপিন্ড সিরিজটা পড়ুন।
আপনারা পূর্বের পর্ব সমূহে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।
এবার তাহলে জানুন হৃদপিন্ডকে যে ভাবে আপনি সুস্থ রাখতে পারবেন।
আর মনে রাখবেন হৃদপিন্ডই তো আপনার জীবন।
১) খাদ্য- যেহেতু আমরা যাই কিছু খাই না কেন, তা পরিপাক হওয়ার পর, তার প্রান্তিক-উৎপন্ন দ্রব্য (END PRODUCT, যেমন, শর্করা জাতীয় খাদ্যের একটা END PRODUCT গ্লুকোজ, সমস্ত প্রোটীন এর END PRODUCT এমিনো এসিড, সমস্ত চর্বী ও তৈল জাতীয় খাদ্যের END PRODUCT ফ্যাটি এসিড) হৃদপিন্ডের ধমনীর মধ্য দিয়ে(মূলতঃ সর্ব শরীরের ধমনীর মধদিয়ে)অতিক্রম করা লাগে, তাই আমাদের ভুক্ত দ্রব্যের বিরাট একটা ভূমিকা রয়ে গিয়েছে, হৃদপিন্ড সহ আমাদের সমগ্র রক্ত সঞ্চালনতন্ত্রের উপর।
তাই আমাদের খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে আমাদের বিশেষ সজাগ দৃষ্টি রাখা একান্ত প্রয়োজন।
আপনি দিনে কতবার এবং কখন কখন খাইবেন?
আপনি কখন কখন খাইবেন, দিনে ২ বার খাইবেন নাকী ৪ বার খাইবেন এটা আপনি আপনার ইচ্ছামত পছন্দ করতে পারেন, তাতে কিছু আসে যায়না।
কী পরিমান খাইবেন?
এটাও ব্যক্তি হতে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে পৃথক হয়। শরীরের আয়তন বেশী থাকলে ও পরিশ্রম বেশী হলে খাদ্য বেশী তো লাগবেই। যেমন একটি বড় ইঞ্জিনের বেশী মাল টানতে হলে, তার জ্বালানীটাও তো বেশী লাগবেই।
তবে এতটুকু কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে যে আপনার দিনে সর্বমোট যতটুকু পরিমান খাদ্যের একেবারে নিতান্তই প্রয়োজন, দিনে সর্বমোট খাবারের পরিমান যেন তার চেয়ে সামান্যতম পরিমান ও বেশী না হয়, একটু কম হলে ক্ষতি নাই, বরং সুস্থতার জন্য অত্যন্ত ভাল।
কারণ, আপনি যতই বেশী খান না কেন, শরীর তার কোষ ইঞ্জিন পরিচালনার জন্য যতটুকু তাপ (এটা শরীর তাপ বিজ্ঞানের ক্যালরী ইউনিট দ্বারা মেপে ব্যবহার করে) প্রয়োজন হবে, এবং সেই তাপ টুকু উৎপাদন করতে আপনার ভক্ষিত ও পরিপাককৃত যত টুকু খাদ্য-সারাংস হতে পাইবে, শরীর তার এক তিল পরিমান ও বেশী ব্যবহার করিতে পারিবেনা।
এভাবেই শরীরের কোষগুলী অতি উন্নত কম্পিউটার কলাকৌশল ব্যবহার করে সৃষ্ট।
তাহলে অতিরিক্ত খাদ্য বস্তু গুলী শরীর কী করবে?
অতিরিক্ত খাদ্যগুলী শরীর চর্বী (FAT)তে রুপান্তরিত করিয়া শরীরে জমা রাখিবে, তা আপনি যদি চর্বী একেবারে নাও খান, তবুও অতিরিক্ত খাইলে আপনার শরীরে চর্বী জমতে থাকবে, যে চর্বী হৃদপিন্ড সহ সমগ্র রক্ত সঞ্চালনতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আমার এক আত্মীয় সেদিন বল্ল, তার এক ৩২ বৎসরের তরুন ইঞ্জিনীয়ার বন্ধু হঠাৎ HEART STROKE এ আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে পৌছাইবার পূর্বেই মারা গিয়াছে। সে নাকী অত্যন্ত স্বাস্থবান ও মোটা ছিল।
কারন? কারন সহজেই অনুমেয় সে অতিরিক্ত চর্বি অথবা ভোজন প্রীয় ছিল। রক্তের CHOLESTEROL মাত্রা অত্যধিক ছিল, স্বাস্থ্য সম্পর্কে মোটেই সচেতন ছিলনা।
আপনার দৈনিক কী পরিমান ক্যালরীর খাদ্যের প্রয়োজন?
উত্তর-এটা কতকগুলী FACTOR এর উপর নির্ভর করে PERSON TO PERSON পৃথক হয়।
এটা আপনি নিজেই আমেরিকার CANCER INSTITUTE এর দেওয়া টুলে ঢুকে আপনার তথ্য প্রদান করে এই মুহুর্তেই CALCULATE করে ফেলতে পারেন, যে আপনার দৈনিক কত ক্যালরীর খাদ্য প্রয়োজন।
এই লিংকে টুল টি পাইবেন
http://www.cancer.org/healthy/toolsandcalculators/calculators/app/calorie-counter-calculator (1)
একজন ৩০ বৎসর বয়স্ক, ৫ফুট ৬ ইঞ্চি উচু, ১৩০ পাঃ ওজন, MODERATELY ACTIVE, পুরুষ ব্যক্তির দৈনিক ক্যালরীর CALCULATE করলে তার উত্তর পাওয়া যায় এই রুপ –
“To maintain your current weight, you can eat:
Approximately 2707 calories per day”
তাহলে বুঝতেই পারলেন উক্ত ব্যক্তির জন্য দেনিক ২৭০৭ ক্যালরীর উর্ধে খাদ্য ভক্ষন করলে তার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হইবে। এর বেশী ক্যালরীর খাদ্য সে গ্রহন করলে সেটা ক্ষতিকর চর্বীতে পরিণত হয়ে যাবে।
তবে বাস্তবে তো আপনি আপনার ক্যালরীর সংগে ম্যাচ করে করে খাদ্য মেপে মেপে খাইতে পারিবেননা, তাই সব সময় নিম্ম ক্যালরীর খাদ্য ও পরিমানে শুধু মাত্র কোনরকমে ক্ষুধাটা মেটানো পর্যন্ত খাওয়াই নিরাপদ। আর যথেষ্ঠ ক্ষুধা না আসিলে শুধুমাত্র জল ছাড়া আর কিছুই খাইবেননা বা পান করিবেননা।
সব সময় খাওয়ার সময়নুবর্তিতা মেনে চলবেন। অসময় কিছুই খাইবেন না। তাতে পরিপাক ব্যহত হয়ে পেটের পীড়া হতে পারে।
মনে রাখতে হবে উচ্চ ক্যালরীর খাদ্য (চর্বি বা তৈল জাতীয় খাদ্য)আপনার ক্ষুধা তৃপ্তির পূর্বেই অতি সত্বর আপনার প্রয়োজনীয় ক্যালরীর মাত্রাধিক্য হয়ে যাবে ও আপনার শরীরে চর্বি জমাবে, রক্তের CHOLESTEROL মাত্রা বাড়াবে ও দ্রুত হৃদপিন্ডের ক্ষতি করিবে।
কাজেই সব সময় খাদের পরিমান কম রাখা সবচেয়ে নিরাপদ।
কম আহার করলে যে দীর্ঘ সুস্থায়ূ এর অধিকারী হওয়া যায়, এটা আজ বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।
আর অধিক আহারে বিভিন্ন জটীল রোগ ও বার্ধক্য জনিত সমস্যা দ্রুত আসতে থাকে।
এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন ৫৪ তম পর্ব (১০) ও ৫৫ তম পর্ব।(১১)
তাহলে এবার জানতে চান, কোন খাদ্য হতে কী পরিমান ক্যালরী আসে?
উত্তর-
১ গ্রাম শর্করা (যেমন,চাউল শুজীর পরিপাক কৃত সারাংস) হতে ৪ ক্যালরী আসে।
১ গ্রাম প্রোটীন (যেমন,মাছ, মাংস, ডিমের সাদা অংস, ডাউল, শাক শবজী এর পরিপাক কৃত সারাংস) হতে ৪ ক্যালরী আসে।
১ গ্রাম চর্বী (FAT)বা তৈল (যেমন ঘী, বাটার, মাংসের চর্বী, মাছের চর্বি, ছায়াবীন, সরিসা, অলিভ অয়েল, বাদাম এর পরিপাক কৃত সারাংস) হতে ৯ ক্যালরী আসে।(৩)
ক্যালরী কী?
ক্যালরী হইল তাপ শক্তি এর পরিমান মাপার একক। এক গ্রাম গ্রাম জলকে ১ ডিগ্রী পরিমান উত্তপ্ত হতে যতটুকু পরিমান তাপ শক্তি প্রয়োজন হয়, ততটুকুই তাপ এর পরিমান কে ১ ক্যালরী বলা হয়।
বুঝতেই পারছেন FAT বা চর্বী বা তৈল একটি HIGH-CALORY খাদ্য।
দুধের মধ্যে প্রচুর চর্বী (ঘী আকারে)সহ সব ধরনের খাদ্য বিদ্যমান।
ডিমের সাদা অংশ শুধু প্রোটীন ও হলুদ অংশে চর্বী ভর্তী থাকে।
ডিম খাওয়ার সময়ে ডিমের হলুদ অংশ টুকু ফেলে দিবেন।
এ ছাড়া ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ইত্যাদিতে কোন ক্যালরী দেয়না। এবং শাক শবজী ফল মূল ইত্যাদিতে অতি সামান্য পরিমান ক্যালরী, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আস (SOLUBLE FIBRE) জাতীয় খাদ্য থাকে। আস জাতীয় খাদ্য হৃদপিন্ডের CHOLESTEROL পরিস্কার করে।
WHOLE GRAIN FOOD বলা হয় যে খাদ্য বস্তু REFINE না করে তার খোসা সহ খেয়ে ফেলা হয়, যেমন আপনি ছোলা ভিজিয়ে তার খোসা সহ চাবিয়ে খেয়ে ফেল্লেন, অনেক রুটি বা আটা পাওয়া যায় খোসা সহ পিশে বাজার জাত করা।
WHOLE GRAIN FOOD, ও ফলের (যেমন আলু,ছোলা,আপেল, লাউ , কুমড়া ইত্যাদি) খোসায় মধ্যে প্রচুর পরিমানে DISSOLVED FIBER (আস)থাকে যা হৃদপিন্ডের রক্ত নালীর CHOLESTEROL পরিস্কার করে।
কোন্ খাদ্যে কী আছে আপনাকে তার একটা মোটামোটি স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। নইলে এমন হতে পারে, যে খাদ্যটি আপনি অত্যন্ত উপকারী মনে করে অনবরত ভক্ষন করে যাচ্ছেন, সেটা আপনাকে চরম ক্ষতি করতেছে, অথচ আপনার জন্য যেটা পরম উপকারী ছিল সেটা বাদ দিয়ে যাচ্ছেন।
মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বা আলু জাতীয় সবজী তে একেবারে আস ছাড়া একেবারে নিরেট শর্করা জাতীয় খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকে- তাই এটা খাইবেননা অথবা অতি অল্প খাইবেন।
প্রতিটা আহারের সংগে কিছু পরিমান টাটকা ফল, যাই হোক না কেন, কিছুটা খাইবেন- গবেষনায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত আহারের সংগে ফল খাইতে অভ্যস্ত তাদের STROKE কম হয়।
বাজার হতে ক্রয় করে ফ্যাক্টরীতে উৎপন্ন ফলের রস খাইবেননা। কারণ এটাকে রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য কিছু না কিছু রাসায়নিক দ্রব্য অবশ্যই মিশ্রনের প্রয়োজন হয়, যার ক্রীয়া শরীরের উপর ক্ষতিকর ও হতে পারে।
চর্বী (FAT) ৩ প্রকারের- ১).LECITHIN (7) ২). CHOLESTEROL . ৩).TRIGLYCERIDE.
এর মধ্যে CHOLESTEROL টা (HDL বাদে) আমাদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে।
CHOLESTEROL কী?
CHOLESTEROL এক ধরনের FAT বা চর্বী জাতীয় খাদ্য। এটা ৩ প্রকার-
১) LOW DENSITY CHOLESTEROL (LDL), SATURATED FAT
২) TRANS FAT- এটা LDL এর সমান কাজ করে,
৩) HIGH DENSITY CHOLESTEROL (HDL) UNSATURATED FAT- MONOUNSATURATED FAT বা POLYUNSATURATED FAT. (১৪)
১) LOW DENSITY CHOLESTEROL (LDL), SATURATED FAT,
এই LDL FAT টিই শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর। এইটাই হৃদপিন্ডের বা মস্তিস্কের ধমনী আটকিয়ে STROKE করায়, আবার এটা ARTERIOSCLEROSIS ও ATHEROSCLEROSIS ও ঘটায় (৩৭ পর্বে বিস্তারিত দেখুন) (১২)।
এই LDL এর উৎপত্তি প্রানী (ANIMAL)হতে, যেমন, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শুকর এর মাংস, দুগ্ধ, ও দুগ্ধ জাত সমগ্র বস্তু যেমন, ঘী, মাখন,পনীর, ছানা, দধি ইত্যাদি, ইলিস মাছ, ও বড় বড় মাছের চর্বির অংস, মস্তিস্কের ঘিলু, হাস, মুরগীর চামড়ার ও মাংসের ভিতরের তৈল, ডিমের হলুদ অংস, ও উদ্ভিদ উৎস যেমন, নারিকেল তৈল ও পাম অয়েল।
এই ভয়ংকর ঘাতক পদার্থটি ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে অথচ অত্যন্ত দৃঢ় ভাবে এবং IRREVERSIBLE পদ্ধতিতে (অর্থাৎ একবার যত খানি অগ্রসর হয়, সেখান থেকে আর পূর্বের অবস্থায় ফিয়িয়ে আনা যায়না-বড় মারাত্মক ব্যাপার বটে) আমাদের অজান্তে আমাদেরই দেহাভ্যন্তরে এগিয়ে যেতে থাকে। এই অবস্থায় কোন উপসর্গ না থাকায় চিকিৎসকের নিকট ও যাওয়া হয়না। আর তা ছাড়া সাধাারণ পরীক্ষা নীরিক্ষায় ও এই পর্যায়ে তেমন কিছু ধরা যায়না। নিজেকে পূর্ণ সুস্থ সক্ষম মনে হবে। এভাবে BLOCK এর মাত্রা বেড়ে গেলে, হঠাৎ কোন এক মুহূর্তে এই ভয়ংকর ঘাতক আমাদের হৃদপিন্ডের ধমনীর পথ একেবারে আটকিয়ে আমাদের হঠাৎ মেরে ফেলে দেয়। শুধু তখনই আমরা জানতে ও বুঝতে পারি, সে HEART STROKE অথবা BRAIN STROKE করে লোকটি মারা গেল।
অতএব খাদ্যগুলী সম্পূর্ণ রুপে পরিত্যাজ্য।
২) TRANS FAT- এটা বেকারীতে UNSTURATED FAT (HDL) দ্বারা বেকারী খাদ্য যেমন.COOKIES, CAKES, DONUTS ইত্যাদি ভাজার সময় তাপে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে UNSATURATED FAT (HDL)এ হাইড্রোজেন অনু যোগ হয়ে (একে HYDROGENATION বলে) LOW DENSITY CHOLESTEROL (LDL), SATURATED FAT এ পরিণত হয়ে যায়। এটা প্রস্তুত কৃত খাদ্য বস্তুর SHELF LIFE দীর্ঘায়িত করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অতএব এগুলীও LDL এর সমপর্যায়ের ও সম্পূর্ণ রুপে পরিত্যাজ্য।
৩) HIGH DENSITY CHOLESTEROL (HDL), UNSATURATED FAT-এটা MONOUNSATURATED FAT, অর্থাৎ যখন ১টা CHEMICAL BOND UNSATURATED থাকে, বা POLYUNSATURATED FAT, অর্থাৎ যখন অনেকগুলী CHEMICAL BOND UNSATURATED থাকে, আকারে হতে পারে।
এই FAT টি শরীরের কোন ক্ষতি তো করেইনা বরং LDL কে দুরিভূত করে শরীরের উপকার সাধন করে। এজন্য এটাকে উপকারী CHOLESTEROL বলে।
এই FAT টি পাওয়া যায় সমগ্র উদ্ভীজ্জ তৈল (একমাত্র নারিকেল ও পাম অয়েল বাদে)হতে, ও সমস্ত ছোট ছোট ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মৎস্য ( যেমন চেলা পুটি, বাশ পাতা ইত্যাদি) হতে।
উদ্ভিজ্জ তৈলের উদাহরণ-
সরিষার তৈল, ছায়াবীন তৈল, OLIVE OIL, CANOLA OIL, AVOCADOS, PEA NUT সহ সমগ্র প্রকারের বাদাম।(3,4,5,6)
এই জাতীয় তৈলাক্ত পদার্থে কোন ক্ষতি নাই, বরং উপকার আছে। তবে এটা ও মনে রাখিতে হইবে, এটাও একটা FAT, এবং এটা ও একটা উচ্চ ক্যালরীর খাদ্য। অতএব এটা সরাসরি উপকার করিলেও, যদি আপনার প্রয়োজনীয় ক্যালরীর মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন এটা শরীরে FAT আকারে জমে LDL এ পরিণত হয়ে হৃদপিন্ডের ধমনী কে ব্লক করিবে।
আপনার প্রয়োজনীয় ক্যালরীর উর্ধে যে কোন খাদ্য শরীরে ক্ষতিকর FAT বানিয়ে শরীরে জমা করে রাখে যা ক্ষতিকর।
তবে শরীর এই অতিরিক্ত ক্যালরী FAT আকারে জমা রাখে ভবিষ্যতে যদি কখনো শরীরে ক্যালরীর ঘাটতি দেখা দেয়, তখন এখান থেকে লয়ে পূরন করার জন্য। ঠিক যেমনটা আমরা যেমন বেশী টাকা হলে সম্পদ আকারে জমা রাখি ভবিষ্যতের প্রয়োজনের সময়ের জন্য।
তবে অতিরিক্ত FAT কী ভাবে হৃদপিন্ড-ধমনী গাত্রে জমা হয়ে আমাদের অকালে প্রান নাস ঘটায়?৩৭ পর্ব দেখুন।(১১)
এই ২ ধরনের চর্বি কী ভাবে চোখে দেখে সহজে এদের পার্থক্য করতে পারবেন?
LOW DENSITY CHOLESTEROL (LDL), ও HIGH DENSITY CHOLESTEROL (HDL), বাহ্যিক ভাবেও পৃধক করা যায় এভাবে যেমন সরিষা, ছায়াবীন তৈল (যা HDL গ্রুপের) রুম তাপ মাত্রায় জমেনা, তরল ই রয়ে যায়।
কিন্ত ঘী, মাখন, গরু, ভেড়ার চর্বী (যা LDL গ্রুপের) রুম তাপ মাত্রায় জমে যায়, আর এরাই এই ভাবে হৃদপিন্ড ধমনীর গাত্রে মোমের ন্যায় জমতে জমতে BLOCK ঘটায়।
প্রতিবার আহারের সংগে যথেষ্ঠ পরিমান শাক-শবজী, কিছুটা টাটকা যে কোন ফল, ১টা কাচা মরিচ, লেবুর রস, ২ খোয়া কাচা রসুন, কিছুটা কাচা আদা খাইবেন। মাংস কমিয়ে মাছ বেশী খাইবেন।
আমি একটা বিজ্ঞান অনুষ্ঠানে একটা গবেষনার ফলাফলে শুনেছিলাম নিয়মিত কাচা আদা সেবন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। ঠিক একই কাজ করে হলুদ ও (একটা পত্রিকায় দেখেছিলাম)
২)পানীয়-
আপনার তৃষ্ণা মিটাতে কী ধরনের পানীয় ব্যবহার করবেন?
১) জল- একমাত্র দুষনমুক্ত শীতল জল ই সব চাইতে উত্তম পাণীয়।
২) কোক বা কোক জাতীয় তরল? সর্বত ভাবে পরিত্যাজ্য।
আমার কিছু বাস্তব দেখা ঘটনা-
আমার একজন পরিচিত ব্যক্তি (৫০ এর কাছাকাছি) যাকে আমি নিজ চোখে দেখেছি তিনি অত্যন্ত কোক এর ভক্ত ছিলেন।
কয়েক বৎসর পর শুনতে পেলাম তার ২টা কডনীই অকেজো হয়ে গিয়েছে এবং তিনি হসপিটাল হতে নিয়মিত ডায়ালাইছিছ করিয়ে বেচে আছেন।
কিছুদিন পূর্বে জানতে পারলাম তিনি কিডনী সমস্যায় মারা গেছেন।
হসপিটালের চিকৎসক রা মন্তব্য করেছেন কোক জাতীয় পানীয়ের মধ্যে কিছু কিছু উপাদান আছে যা তার কিডনী কে নষ্ট করে দিয়েছে।
২) আর একজন পরিচিত ব্যক্তি (৪০ এর কাছাকাছি)।
তিনিও কোক জাতীয় তরলের অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন। কিছুদিন পর দেখা গেল তার দুই পা ক্রমান্বয়ে অসাড় হয়ে ঘাচ্ছে।
হসপিটালে গেলে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে থাকলেন। কিন্তু মাসাধিককাল অতিবাহিত হয়ে যাইতে থাকলেও তার সমস্যার কোনই উন্নতির লক্ষন দেখা যায়না।
তারপর একদিন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একত্রে মিলে বোর্ড বসিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কী নিয়মিত কোক পান করেন ?
তিনি উত্তর দিলেন “হ্যা”
তখন চিকিৎসকরা তাকে বল্লেন “ কোক এর মধ্যের ডাইরেক্ট সুগার আপনার স্নায়ুতন্ত্র কে আঘাত করে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিচ্ছে এজন্য এই সমস্যা হচ্ছে। আপনি আজ হতে কোক সেবন করা বন্দ করে দিন, তা হলে রোগমুক্ত হয়ে যাবেন।
এরপর ঐ ব্যক্তি কোক জাতীয় পানীয় সেবন বন্দ করে দিলে সম্পুর্ণ হয়ে গেছেন।
এই সমস্ত চিকিৎকগন নিউইয়র্ক এর হসপিটালের খ্যতনামা চিকিৎসকবৃন্দ।
৩) আমাদের দৈনন্দিন জীবন প্রণালী ও আচরন কী ধরণের হওয়া উচিৎ?
১) ব্যায়াম
বয়স অনুসারে দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা হতে দেড় ঘন্টা পর্যন্ত ব্যয়াম বা পরিশ্রম, বা ৩ ঘন্টা লম্বা পা ফেলে হাটিবেন। বয়স ৬০ এর উর্ধে হলে দৈনিক ৩ ঘন্টা করে হাটা ব্যায়াম সবচেয়ে ভাল। ব্যায়াম এর দ্বারা শরীরের চর্বী BURN হয়ে যায়, শরিরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে অন্যান্য বহু রোগ হতে ও রক্ষা করে, বার্ধক্য জনিত বহু রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিছ, পারকিনসন্স ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। তাই বলে ব্যায়াম করে বেশী খাইলে, আবার সেই একই ক্ষতি এসে যাবে। লাভ-লোকসান সমান হয়ে যাবে।
২)মানসিকতা-
সব সময় ঠান্ডা ও ধীর স্থির মেজাজ ধরে রাখতে হবে। অত্যধিক রাগ, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা দ্রুত হৃদপিন্ডের রোগী বানিয়ে দেয়। হঠাৎ অত্যধিক উত্তেজনা, শরীরের কিছু হরমোন যেমন ADRENALINE অত্যধিক নিঃসরিত হয়ে একজন ব্যক্তির হৃদপিন্ডকে তৎক্ষনাৎ STOP করে মেরে ফেলতে পারে। এরুপ একটি ঘটনা আমার বাস্তব জানা আছে।
৩) আহারের পর, বিশেষ করে দুপুরে, বয়স অনুপাতে অন্ততঃ আধা ঘন্টা হতে দেড় ঘন্টা পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রাম লইবেন।
৪) কখনো সুনিদ্রার ব্যাঘাত ঘটতে দিবেননা।
৫)রক্ত চাপ, ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিছ হতে সতর্ক থাকিবেন। এই গুলী STROKE এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
৬) লবন- লবনের ছোডিয়াম দ্রুত ধমনীতে ATHEROSCLEROSIS ঘটিয়ে হৃদপিন্ডের ক্ষতি করে। অতএব কখনো খাওয়ার সময় লবন নিজে লয়ে খাইবেন না। শাক শবজী, তরকারী তে যথেষ্ঠ লবন থাকে।
আমেরিকান HEART INSTITUTE এর পরামর্শ, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি দিনে যেন ১৬ মিঃগ্রাঃ এর বেশী লরন না খায়।
৭)যাতে অত্যধিক আয়রন রয়েছে যেমন প্রানীর কলিজা, তা বেশী খাইবেননা, যদি না শরীরের আয়রন প্রয়োজন না থাকে। অতিরিক্ত আয়রণ ডিপোছিট হয়ে হৃদপিন্ডের ক্ষতি করে। (একটি গবেষনার ফলাফলে দেখেছিলাম)
৮) প্রয়োজন না থাকিলে অত্যধিক ভিটামিন “এ” ও ভিটামিন “ডি” খাইবেননা। এদের মাত্রাতিরিক্ত ডিপোছিট হয়ে ATHEROSCLEROSIS ঘটায়।(আমার একটি বিজ্ঞান পুস্তকে দেখা)
৯) পুরুষ যৌন হরমোন Testosterone এ ATHEROSCLEROSIS ঘটায় (আমার একটি বিজ্ঞান পুস্তকে দেখা)
১০) SEX- ৪০-৫০ উর্ধ পুরুষের জন্য HEART STROKE, BRAIN STROKE, ও IMMUNODEFFICIENCY (রোগ প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙ্গে যাওয়া -মারাত্মক ব্যাপার বটে) ঘটানোর তাৎক্ষনিক বড় ধরনের কারণ হয়।
IMMUNODEFFICIENCY (রোগ প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙ্গে যাওয়া)- এটা হলে ক্যানসার,শ্বাষকষ্ট , নিমোনিয়া সহ যে কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ( শরীর কী ভাবে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রক্ষা করে তা জানতে পর্ব- ৪১ হতে পর্ব ৪৮ দেখুন)
তবে SEX বিষয়টা যেহেতু নিতান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয় একারনে এতবড় একটা মারাত্মক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর বিজ্ঞানীদের পক্ষে কোন গবেষনা চালানো সম্ভবপর হয় নাই।
বিজ্ঞানীগন এটার উপর গবেষনা করতে পারলে এটা অবশ্যই কারণ সহ ধরা পড়বে,এবং বহু লোক এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া হতে রক্ষা পাবে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত , কারণ আমার ও আমার কিছু সহকর্মীদের এ ব্যাপারে বাস্তব বেশ কিছু ঘটনার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আমি একটি বিজ্ঞান পুস্তকে দেখেছিলাম। একদল গবেষক বিজ্ঞানী কোরিয়ান যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের দেহ ডিছেকশন করিয়া তাদের হৃদপিন্ডের ধমনী পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছিলেন।
ফলাফল পেয়েছিলেন-যারা সকালের নাস্তায় বাটার খাইতোনা, তাদের হৃদপিন্ড ধমনীতে কোন ব্লক জন্মাতে দেখতে পায়নাই, (নীচের চিত্র-১ দেখুন)
আর যারা সকালের নাস্তায় নিয়মিত বাটার খাইতো, তাদের হৃদপিন্ড-ধমনীতে বিভিন্ন মাত্রার ব্লক দেখতে পেয়েছিল।এমনকি কারো কারো প্রায় বন্ধ হয়ে ও গিয়েছিল। (নীচের চিত্র-১ দেখুন।)
চিত্র-১
এই চিত্রে লক্ষ্য করুন, উপরের রক্ত নালীতে চর্বী না খাওয়ার কারণে পরিস্কার আছে। আর নীচের সারীর নালী চর্বী ভক্ষনের কারণে নালীপথ ক্রমান্বয়ে সংকীর্ণ হয়ে আসতেছে।
হৃদপিন্ডের সংগে জ্বীন (GENE) এর সম্পর্ক।
কোন শিশু দুর্ভাগ্য বসতঃ কিছু কিছু Mutated (পরিবর্তিত) জ্বীন পেয়ে গেলে Fallots Tetralogy নামক ভয়াবহ রোগের শিকার হয়ে যায়। (MUTATION কী? পর্ব ১২ দেখুন)(১৩)
এই রোগে আক্রান্ত শিশুটির হৃদপিন্ডের ৪টি প্রকোষ্ঠের নীচের দুইটি প্রকোষ্ঠের মাঝখানের প্রাচীরে বড় ছিদ্র থাকে ও একই সংগে হৃদপিন্ডের ভালভ গুলী সহ মোট ৪ ধরনের সমস্যা থাকে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা নগন্য। প্রতি ১০ হাজারে ৫ জন। নারী ও পুরুষ সমান ভাবে আক্রান্ত হয়।
এটা হলে রোগীকে সার্জারী করানো লাগে।(৮)
এই লিংকে (15) গিয়ে একজন FALLOTS TETRALOGY রোগী এর বাস্তব বিবরন দেখতে পারেন। তার সার্জারীর খরচের জন্য এখানে সাহায্যেরও আবেদন জানানো হয়েছিল। আপনারা সেটা দেখেওছিলেন।
এই জ্বীনগুলী হৃদপিন্ডের গঠনের কাজ করে, যেমন-
নীচে(চিত্র-২) NKX2-5 জ্বীনের ম্যাপ অবস্থানটা দেখে নিন (9)
Cytogenetic Location: 5q35.1, which is the long (q) arm of chromosome 5 at position 35.1
Molecular Location: base pairs 173,232,104 to 173,235,312 on chromosome 5 (Homo sapiens Annotation Release 108, GRCh38.p7) (NCBI)
Source of figure- http://ghr.nlm.nih.gov/gene/NKX2-5
চিত্র-২
খাদ্য সম্পর্কে এক জন বিশেষজ্ঞের কিছু উপদেশ-
WHAT TO EAT AND NOT BY DOCTOR LEON B EISIKOWITZ
কয়েকটি জ্বীন এর মধ্যে এই জ্বীনটির Mutation(পরিবর্তন)ও Fallots Tetralogy এর কারণ হয়ে থাকে।
NKX2-5 জ্বীনটি ৫নং ক্রোমোজোম এর q বাহুর ৩৪ অবস্থানে আছে।
আরো সূক্ষভাবে, NKX2-5, base pair 173,232,103 হইতে 173,235,311 base pair পর্যন্ত chromosome 5 এ জায়গা দখল করে রয়েছে।
পূর্বের পর্বগুলী এখানে দেখুন-
https://chkdr02.wordpress.com/
UPDATED ON 05/23/2019
৩৯ তম পর্বের সূত্র সমুহ-
1) CALORY CALCULATION
http://www.cancer.org/healthy/toolsandcalculators/calculators/app/calorie-counter-calculator
2) CALORIES IN CARB,PROTEIN,FAT
http://healthyeating.sfgate.com/gram-protein-carbohydrates-contains-many-kilocalories-5978.html
3) CHOLESTEROL
http://www.nhlbi.nih.gov/health/health-topics/topics/hbc/
4) SATURATED FAT
5) SATURATED,UNSATURATED,TRAS, OMEGA 3, COCONUT, PALM, AND PALM KERNEL
http://lowfatcooking.about.com/od/lowfatbasics/a/fats1004.htm
6) SOURCES OF HDL
http://www.livestrong.com/article/237662-what-are-the-food-sources-of-hdl-cholesterol/
7) LECITHIN
http://www.dailymail.co.uk/health/article-62013/Lecithin–fat-burner-control-cholesterol.html
8) FALLOTS
http://en.wikipedia.org/wiki/Tetralogy_of_Fallot
9) GENE RELATION
http://ghr.nlm.nih.gov/gene/NKX2-5
1০) ৫৪ তম পর্ব-
11) ৫৫ তম পর্ব-
- ৩৭ তম পর্ব-
https://chkdr02.wordpress.com/2014/09/20/%E0%A6%B9%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%B8/
13) MUTATION-
14) MONOSATURATED AND POLY SATURATED FATS-
http://extension.illinois.edu/diabetes2/subsection.cfm?SubSectionID=46
- FALLOTS TETRALOGY
হৃদপিন্ড , ATHEROSCLEROSIS কী?কী ভাবে হৃদপিন্ড ও শরীরকে সুস্থ রাখবেন? DNA সম্পর্ক । আপনি কী একটা দীর্ঘ সুস্থ জীবন পেতে চান? পর্ব-৩৮(৭)
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ?
তাহলে আমার সংগে থাকুন।
আপনারা পূর্বের পর্ব সমূহে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।
ATHEROSCLEROSIS বা ARTERIOSCLEROSIS আমাদের হৃদপিন্ডের জন্য, তৎসহ অন্যান্য অর্গানের তথা আমাদের জীবনের জন্য একটা মারাত্মক হুমকী।
আপনারা আগেই জেনেছেন আমাদের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি টা সব সময় একটা CLOSED CIRCUIT এর মধ্য দিয়ে একমুখী (ONE WAY) পদ্ধতিতে পাম্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। হৃদপিন্ড হইল এই তন্ত্রের পাম্প যন্ত্র।
যেমন যদি হৃদপিন্ডের বাম নিলয়(VENTRICLE) হতে সঞ্চালনটার প্রারম্ভ ধরা হয়, তাহলে রক্ত চলাচলের আবর্তন টা কী ভাবে হয় দেখুন –
বাম নিলয় হতে (ফুসফুস হতে আগত অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত,হৃদপিন্ড সংকোচনের মাধ্যমে)সেখান থেকে>AORTA (সবচেয়ে মোটা ধমনী)>মাঝারী ধমনী> সরু ধমনী > আরো সরু ধমনী> তারচেয়েও আরো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধমনী> শরীরের প্রতিটা কোষে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহ করিল>
এবার (শরীরের সমগ্র কোষ হতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করিয়া)অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিরা>কিছুটা মোটা শিরা > আরো একটু মোটা শিরা > তারচেয়ে আরো মোটা শিরা > এভাবে সবচেয়ে মোটা শিরা INFERIOR VENACAVE ও SUPERIOR VENACAVA এর মধ্য দিয়ে> ডান অলিন্দ(হৃদপিন্ড প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে) > ডান নিলয় > ফুসফুস (এখানে রক্ত ফুসফুস এর প্রশ্বাস এর মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে দিল ও নিশ্বাষ এর মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহন করিল)> তারপর বাম অলিন্দ>বাম নিলয়>> পুনরায় সেখান থেকে AORTA>>>> এ ভাবে রক্তের সঞ্চালনটা চক্রাকারে মৃত্যু পর্যন্ত বিনা বিশ্রামে ২৪ ঘন্টা আবর্তিত হতে থাকে। একই সংগে ফুসফুস ও প্রতি মিনিটে ১৮ বার করে সংকোচন ও সম্প্রসারনের মাধ্যমে রক্ত হতে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন ও বায়ূ মন্ডল হতে রক্তে অক্সিজেন মিশ্রিত করে।
এভাবে শ্বাষ প্রষ্বাস তন্ত্র রক্ত সঞ্চালন তন্ত্রকে সহযোগিতা করে একত্রে সমন্বীত ভাবে কাজ করে।
ফুসফুস ও এই সঞ্চালন থেমে যাওয়ার অর্থ হল আমাদের নিশ্চিত মৃত্যু। নীচে চিত্র–২ লক্ষ করুন।
মনে রাখবেন ধমনী বা Artery সর্বত্র (একমাত্র ফুসফুস ধমনী ছাড়া) অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত ও শিরা বা Vein সর্বত্র (একমাত্র ফুসফুস শিরা ছাড়া) Carbon di oxide মিশ্রিত রক্ত বহন করে। অতএব ফুসফুস ধমনী বা Artery কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত রক্ত বহন করে ও ফুসফুস শিরা বা Vein অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত বহন করে।
এখানে লক্ষ করুন–
১)হৃদপিন্ড যখন সংকোচন করে তখন রক্ত সম্মুখ দিকে ধাবিত হয় প্রথমে মোটা ধমনীর মধ্য দিয়ে ও ক্রমান্বয়ে সরুতম ধমনীর দিকে, ঠিক যেমনটা ধরতে পারেন, সমুদ্রের যখন জোয়ারের সময় পানীর চাপ বাড়লে প্রথমে সবচেয়ে প্রশস্ত নদী ও পরে ক্রমান্বয়ে সরু নদী ও খালের মধ্য দিয়ে পানী প্রবাহিত হয়ে জমিতে সরবরাহ করে।
২) শরীরের রক্ত সষ্ণালন একমুখী আবর্তনের মধ্য দিয়ে হয়। কখনো সমুদ্রের ভাটার পানির ন্যায় একই পথে পিছনের দিকে ফিরেনা।
রক্ত হৃদপিন্ডের পাম্পের সময়, (বাম নিলয় হতে) কোষ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সরু ধমনীর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। এরপর প্রতিটা কোষকে অক্সিজেন খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থ সরবরাহ করিয়া এবং কোষ হতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করার পর, অন্য আর একটি পথে (শিরার মধ্য দিয়ে) হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দে ফিরে আসে।
আমি যেটা বুঝাতে চাচ্ছি তা হল, ধমনীতে রক্তের প্রবাহ একমুখী এবং তাও আবার প্রবাহটা প্রশস্ত ধমনী হতে ক্রমান্বয়ে সরু ধমনী দিকে হওয়ার কারনেই (এছাড়া প্রতিটা কোষে রক্ত সরবরাহের অন্য কোন ভাল উপায় ও নাই)আমাদের HEART BLOCK অতি সহজে হয় ও অতি দ্রুত খারাপের দিকে যায়।
কেন ও কী ভাবে HEART BLOCK হয়?
সোজা উত্তর। পর্ব– ৩৭ এ দেখেছেন হৃদপিন্ডের ২ টা ধমনী কীভাবে হৃদপিন্ডকে রক্ত সরবরাহ করে বাচিয়ে রাখতেছে।
এখন কী কল্পনা করতে পারেন, যদি এই ধমনী নালীর রক্ত চলাচলের পথে ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের বল গিয়ে আটকে যায়, তাহলে এই রক্তনালীটার পথ কী আর কোন ভাবে খোলাসা হওয়ার পথ থাকে?
রক্তের একমুখী প্রবাহ হওয়ার ফলে এই বলটাকে পিছনের রক্ত অনবরত তার সম্মুখের সরু ধমনীর দিকে চাপ দিতে থাকে ও বলটা ক্রমান্বয়ে ধমনীতে আরো শক্ত করে আটকাতে থাকে।
কারন বলটি সামনে এগুবে কী করে। তার সামনের পথ তো আরো বেশী সরু।
তবে, হ্যা, তার পিছনের পথ প্রশস্ত সেদিক দিয়ে বেরুতে পারত, যদি রক্তের প্রবাহ একমুখী না হয়ে , যদি রক্তের প্রবাহটা একই ধমনী নালী দিয়ে একবার সম্মুখ দিকে ও আর একবার পিছন দিকে হত।
তাহলে তখন আটকে যাওয়া বলটি পিছন দিকের প্রবাহ পরিস্কার করে দিতে পারতো।
এভাবে কোন একটি ধমনী নালী আটকে গেলে তার দ্বারা রক্ত সরবরাহের অঞ্চলের কোষগুলী রক্তের মাধ্যমে প্রেরিত খাদ্য ও অক্সিজেন হতে বঞ্চিত হয়ে যায়, কোষ ও টিসু গুলী মরতে থাকে এবং তখনি সেখানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয়।
এরুপ ভাবে কোন স্থানে রক্ত চলাচল লাগাতার ভাবে বন্ধ থাকলে সেই কোষ ২০ মিনিট এর উর্ধে আর বাচতে পারেনা।
এটাই হার্টের রক্তনালীর HEART BLOCK বা HEART STROKE
এই একই সমস্যাটা, শরীরের অন্যত্রও হয়ে ধাকে যেমন, মস্তিস্ক.কিডনী ও পায়ের নীচের অংস(LOWER LEG)।
মস্তিস্কে হলে তাকে BRAIN STROKE বলে, ও হৃদপিন্ডে হলে তাকে HEART STROKE বলে। কিডনীতে হলে কিডনী নষ্ট হয়ে যায়। পায়ে হলে, পায়ে প্রচন্ড যন্ত্রনা ও খিচুনী হয় ও সময়মমত চিকিৎসা না নিলে পায়ে পচন ধরে।
তবে এর ফলাফল টা নির্ভর করে BLOCK এর মাত্রার উপর ও কত কম বা কত বেশী অষ্ণলের কোষ আক্রান্ত হয়েছে।
একটি মোটা ধমনী আটকিয়ে একটা প্রশস্ত অঞ্চল আক্রান্ত হলে যদি দ্রুত হসপিটালের চিকিৎসা না পায়, তাহলে মৃত্যু অবধারিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্রশ্ন– ধমনী নালীর মধ্যে প্লাস্টিকের বল আবার কোথা হতে আসে?
উত্তর– খুবই ভাল প্রশ্ন। এই প্লাস্টিক বলটা হল বিজ্ঞানের ভাষায় PLAQUE, যা বিভিন্ন কারনে বয়স বৃদ্ধির সংগে সংগে ও চর্বি (CHOLESTEROL) খাওয়ার ফলে ধমনী নালীর আভ্যন্তরীন গাত্রে এটে গিয়ে একটি জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া–প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়।
এই প্রক্রিয়াটার নাম ATHEROSCLEROSIS. (২,৩,৪)। এটা উচ্চ রক্ত চাপকে ত্বরান্বীত করায়। আর এর রসদ যোগান আসে চর্বী (CHOLESTEROL) জাতীয় খাদ্য হতে।
এই PLAQUE কী ভাবে তৈরী হয় নীচের ইউ টিউব গুলী দেখুন। ওখানে খুব সুন্দর ভাবে বর্ণণা করা হয়েছে।
ধমনী গাত্রে আর এক ধরনের জৈব প্রতিক্রিয়া ঘটে, তার নাম ARTERIOSCLEROSIS. স্বাভাবিক অবস্থায় ধমনী নালী গুলী ELASTIC অর্থাৎ সম্প্রসারন শীল ও সংকোচন শীল থাকে, যার ফলে এটা সহজে ভঙ্গুর বা ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরন হতে পারেনা। কিন্ত ARTERIOSCLEROSIS হলে ধমনী গুলীর ELASTICITY হারিয়ে ফেলে। হৃদপিন্ডের রক্ত পাম্প করার সময় এটা প্রয়োজন মত সম্প্রসারন ও কংকোচন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটা হলে ধমনী সরু ও শক্ত হয়ে যায় ও,সহজে ভেঙ্গে বা ফেটে যাওয়ার মত হয়ে যায়।(১)
এর ফলে এখানে ৩ টা খারাপ পরিস্থিতির অভ্যুদয় হয়–
১) এই সরু শক্ত ধমনী নালীটার অভ্যন্তর প্রাচীরে চর্বী আটকাতে আটকাতে এক সময় রক্ত চলাচল পথ একেবারে বন্ধ করে দেয়। তবে এই পদ্ধতিতে ধমনী আটকে যাওয়াটা PLAQUE আটকানোর মত হঠাৎ দ্রুত হয়না। এতে যথেষ্ঠ সময় লয়।
২) সমগ্র রক্ত নালী গুলী সরু ও শক্ত হওয়ার কারনে এর উপর রক্তের চাপ ও বৃদ্ধি পেয়ে যায়, যা এটার জন্য আরো ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসে। কারণ এই ধমনী নালী গুলীর প্রাচীর ইতিধ্যেই, শক্ত ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার কারনে একটু অধিক রক্তচাপ সহ্য করার ক্ষমতা তো ইতিমধ্যে হারিয়েই ফেলেছে। এ যেন মড়ার উপর খাড়ার আঘাতের মত হয়।
৩)যেহেতু এই নালীটী এর ELASTICITY হারিয়ে সরু ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে যায়, এবং হৃদপিন্ডের রক্ত পাম্প করার সময় অনবরত এর উপর একটা চাপের উঠা নামা হয় (স্বাভাবিক রক্ত চাপ মাত্রা ১২০–৮০ মিঃ মিঃ পারদ), কোন এক সময় নিজের অজান্তে রক্তচাপ কিছুটা বেড়ে গেলে তখন এটা আর সহ্য করতে পারেনা, এর ফলে ধমনী ফেটে গিয়ে, আভ্যন্তরীন রক্তক্ষরন হয়ে BRAIN STROKE বা HEART STROKE ঘটায়ে থাকে।
এ কারণে ৫০ উর্ধ যারা, তারা সব সময় চর্বি ও লবন খাওয়া পরিত্যাগ করে, ধুম পান পরিত্যাগ করে, ব্যায়াম করে বা দৈনিক অন্ততঃ ৩ ঘন্টা হেটে ও নিয়মিত চেক–আপ ও চিকিৎসার মাধ্যমে রক্ত চাপ ১২০/৮০ MM HG এর কাছা কাছি রাখিবেন।১৪০/৯০ এর পরে উঠিলেই চিকিৎসকের সংগে পরামর্শ করে নিয়মিত রক্ত চাপ নিরোধক ঔষধ সেবন করিবেন। অন্যথায় যে কোন সময় কোন পূর্ব সংকেৎ ছাড়াই আপনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেতে পারেন।
এরুপ অজস্র ঘটনা আমার দেখা আছে। আপনারাও দেখে থাকেন।
এই উভয় পদ্ধতি মূলতঃ খুব নিকটবর্তির এবং এদের কারণ ও প্রায় একই।(চিত্র–১)
প্রশ্ন– কত বয়স থেকে এটা আরম্ভ হয়?
ঊত্তর– তরুন বয়স থেকেই এই প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়ে যায়। তবে এর লক্ষনাদি প্রকাশ হতে হতে ৪০>৫০>৬০>৭০–বছর বয়স পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
জ্বীনগত ত্রুটি বিচ্যুতির কারণেও এটা হতে পারে। নীচে দেখুন।
এটা আবার নির্ভর করে, তরুন বয়স হতে কে কতটা সতর্কতা অবলম্বন করে, কে কতটা চর্বী ও লবন কম বা বেশী খায়, কে কতটা শারিরীক পরিশ্রম, ব্যায়াম বা হাটা হাটি করে।
প্রশ্ন– তাহলে আমরা এর থেকে কীভাবে রক্ষা পেতে পারি?
উত্তর– খুব ভাল প্রশ্ন। এর থেকে একেবারে সম্পূর্ণ ভাবে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে ধমনী নালীর এই পরিবর্তন (ARTERIOSCLEROSIS) জৈব ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবে ঘটবেই।
এটা না ঘটলে মানুষের সুস্থ জীবন সম্ভবতঃ আরো ২–শতাধিক বৎসর হয়ে যেত(কোন কোন বিজ্ঞানীগন এরুপ ধারনা করেন, হয়তো ভবিষ্যতে বিজ্ঞান এটা আয়ত্বে আনিতে পারিবে)।
তবে আমরা যতটুকু করতে পারি তাহল সতর্ক থাকার মাধ্যমে এটাকে ধীরগতি সম্পন্ন করে দীর্ঘায়িত করতে পারি।
কত দীর্ঘায়িত করতে পারি?
তা ধরুন, আপনি অসতর্ক হলে আপনি ৩০–৪০ বা ৫০ বৎসর বয়সের কোঠায় আক্রান্ত হতে পারেন, আবার একটু সতর্কতা অবলম্বন করে এটাকে ৭০–৮০–৯০–১০০ বা তদুর্দ্ধ বয়স পর্যন্ত ঠেকিয়ে রেখে একটি সুস্থ জীবন যাপন ও করতে পারেন।
এটা আপনার নিজেরই সদিচ্ছার উপর নির্ভর করতেছে। এখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপের ব্যাপার নাই।
এর নিরাময়ক চিকিৎসা হসপিটালে আছে।
তবে প্রতিরোধ মুলক চিকিৎসা আরো বেশী ভাল। যেমন আপনি যদি একটা গাড়ী দুর্ঘটনার পরে মেরামত করে ভাল করানোর চাইতে, গাড়ীটাকে পূর্ব হতেই সতর্ক থেকে দুর্ঘটনাটা এড়িয়ে থাকা আরো বেশী ভাল।
পর্ব দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে।পাঠকদের জন্য কষ্টকর হয়ে যেতে পারে। সংগে থাকুন এর প্রতিরোধ সম্পর্কে আগামী কোন এক পর্বে বলব।
Source of figure- http://www.medindia.net/news/healthinfocus/hdl-increasing-drugs-do-not-benefit-patients-with-coronary-artery-disease-112699-1.htm
.
চিত্র–১, লক্ষ্য করুন, বাম পার্শের ধমনী নালীটা পরিস্কার ও ডান পার্শের ধমনী নালিটা চর্বী জমতে জমতে প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে।
Source of figure- https://www.online-sciences.com/the-living-organisms/the-blood-circulation-in-the-circulatory-system/
চিত্র–২, লক্ষ্য করুন, রক্ত সমগ্র শরীরে একটি CLOSED CIRCUIT এর মধ্যে থেকে আবর্তন করতেছে। লাল রং ধমনীর অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত বুঝাচ্ছে। এবং নীল রং কার্বনডাই অক্সাইড মিশ্রিত শিরার রক্ত বুঝাচ্ছে। আরো লক্ষ্য করুন, হৃদপিন্ডের বাম অলিন্দ ফুসফুস হতে অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত গ্রহন করে, বাম নিলয়ে পাঠাচ্ছে। আর বাম নিলয় এই রক্ত সংকোচন ও পাম্পের মাধ্যমে শরীরের উপরের অংশের (মস্তিস্ক সহ)ও নীচের অংশের সমস্ত কোসে সরবরাহ করিতেছে।
এরপর সমস্ত কোষ এই রক্ত হতে অক্সিজেন গ্রহন করিয়া, এবং কোষে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত করিয়া ভিন্ন্ অন্য পথে শিরার (নীল রংএর)মধ্য দিয়া, হৃদপিন্ড প্রসারিত হওয়ার সময়ে, ডান অলিন্দে পৌছাইতেছে। তখন এই রক্ত ডান নিলয়ে পৌছাইতেছে।এর পর ডান নিলয় এই রক্ত সংকোচনের মাধ্যমে দু ফুসফুসে পাঠাইতেছে।
ফসফুসে তখন এই রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে দিয়ে ও অক্সিজেন গ্রহন করিয়া, হৃদপিন্ডের বাম অলিন্দে ও সাথে সাথে বাম নিলয়ে চলে আসতেছে, যখন হৃদপিন্ড প্রসারিত হয়।
এভাবেই সর্বক্ষন রক্ত সঞ্চালনের এই আবর্তন হদপিন্ড, ফুসফুস, ও সর্ব শরীরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে শরীর হতে বিষাক্ত বর্জ কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয় এবং শরীরকে অক্সিজেন ও খাদ্যও সরবরাহ করে, ও আমরা বেচে থাকি। এটা পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে।
পশ্ন এই Atherosclerosis এর সংগে কী কোন জ্বীন এর সম্পর্ক আছে?
উত্তর– জী হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। ABCA1 (চিত্র–৩) জ্বীন এর সংগে সম্পর্কিত ।
এই জ্বীনটায় এমন প্রোটীন নির্মান করায় (জ্বীন কীভাবে প্রোটীন নির্মান করায় জানতে ১১তম পর্ব
দেখুন) যা শিরা/ধমনী প্রাচীর গাত্রের CHOLESTEROL দূর করিয়ে পরিস্কার রাখে।
এই জ্বীনটা MUTATION ( কী ভাবে জ্বীন MUTATION হয় জানতে ১২ তম পর্ব
দেখুন) হয়ে গেলে Tangier disease (TD) নামক ব্যাধি হয় যাতে রক্তের HDL কমে যায় ও CHOLESTEROL বেড়ে যায়।
ABCA1 gene
Cytogenetic Location: 9q31.1, which is the long (q) arm of chromosome 9 at position 31.1
Molecular Location: base pairs 104,781,002 to 104,928,246 on chromosome 9 (Homo sapiens Annotation Release 108, GRCh38.p7) (NCBI)
Source of figure- https://ghr.nlm.nih.gov/gene/ABCA1#location
চিত্র–৩
রক্ত তাহলে আমাদের বেচে থাকার জন্য কতবড় ভূমিকা পালন করতেছে তা নিশ্চয় বুঝতে পারতেছেন। এ ছাড়াও রক্ত আরো বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। পরে সময় ও সুযোগ পেলে কখনো রক্ত সম্পর্কে আলোচনা করব।
U TUBE গুলী দেখুন–
1. Pathophysiology of Coronary Artery Disease (ANDREW WOULF)
https://www.youtube.com/watch?v=pXluagz53kc
2. Pathophysiology of Atherosclerosis
https://www.youtube.com/watch?v=rktoF7BHRiQ
3. Inflammation In Atherosclerotic Plaque Formation YouTube
https://www.youtube.com/watch?v=Na6-kP9VYCU
4. Atherosclerosis – Part 1
https://www.youtube.com/watch?v=1JudNLK1-Ck
5. Arteriolosclerosis – Part 2
https://www.youtube.com/watch?v=EOnlvbWjFOE
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন–
http://www.chkdr02.wordpress.com/
UPDATED ON-01/09/2019
৩৮ তম পর্বের সূত্র সমুহ–
1. ARTERIOSCLEROSIS
http://en.wikipedia.org/wiki/Arteriosclerosis
2. MEDLINE PLUS
http://www.nlm.nih.gov/medlineplus/ency/article/000170.htm
3. PUBMED HEALTH
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmedhealth/PMH0001224/
4. WEBMD
http://www.webmd.com/heart-disease/what-is-atherosclerosis
হৃদপিন্ড যে ভাবে তার নিজস্ব কোষের রক্ত সরবরাহ করে থাকে, HEART BLOCK যে ভাবে ঘটে।হৃদপিন্ডই আমাদের জীবন। পর্ব-৩৭(৬)
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ?
তাহলে আমার সংগে থাকুন।
আপনারা পূর্বের পর্ব সমূহে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।
আপনারা ইতিপূর্বে হৃদপিন্ডের কাজ সম্পর্কে জেনেছেন যে হৃদপিন্ড তার স্পন্দনের দ্বারা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে আমাদের শরীরের প্রতিটা কোষে খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহ করিয়া জীবিত রাখে।
যদি কোন কোষ, রক্ত নালী কোন কারণ বসতঃ বন্ধ হয়ে, এই রক্ত সরবরাহ হতে বঞ্চিত থাকে তাহলে তখন সেই কোষ মরতে বসে। এরপর সেই অঞ্চল পচতে থাকে।
পায়ে এরুপ রক্ত চলাচল বন্ধ হলে তখন পা পচন ধরে। তখন পা কেটে ফেলে দেওয়া লাগে।
সর্ব শরীরের ন্যায় একই ভাবে হৃদপিন্ডের নিজের বেচে থাকার জন্যও তার নিজের প্রতিটা কোষেও অনবরত রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন আছে।
কোন্ ধমনী দ্বারা হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ হয়?
দুইটা ধমনী দ্বারা হৃদপিন্ডের রক্ত সরবরাহ হয়-
১) ডান হৃদপিন্ড ধমনী (RT CORONARY ARTERY).
২) বাম হৃদপিন্ড ধমনী (LEFT CORONARY ARTERY)
নীচে চিত্র ২, ও ইউ টিউব, ১,২, দেখুন।
এই ধমনী দুইটি বাম নিলয়ের উপরে শরীরের সব চাইতে মোটা ধমনী AORTA এর শুরুতে AORTIC VALVE এর ঠিক উপরের ডান ও বাম পার্শ হতে নির্গত হয়ে হৃদপিন্ডের দুই পার্শের পৃষ্ঠদেশ দিয়ে জালের মত বিস্তার লাভ করে, হৃদপিন্ডের সর্ব শরীরে অনবরত রক্ত সরবরাহ করে হৃদপিন্ডকে বাচিয়ে রাখতেছে।
এবার অনুমান করতে পারবেন, যদি এই ধমনীর শাখাগুলীর কোন একটা শাখার কোন জায়গায় যদি কোন কিছুতে আটকিয়ে ধরে, তাহলে কী ঘটবে?
তখন হৃদপিন্ডের যে অঞ্চল ঐ শাখা ধমনীর রক্ত সরবরাহের আওতায় ছিল, সেই অঞ্চলের কোষ গুলী মরতে বসে।
এভাবে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে তখন বুকের বাম পার্শে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয়।
নীচে চিত্র -১ দেখুন।
তখন কী করবেন?
উত্তর-অনতিবিলম্বে রোগীকে বড় হাসপাতালে পাঠাবেন, যেখানে হৃদপিন্ডের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
হাসপাতালে তখন পাইপ ঢুকিয়ে এটা পরিস্কার করে ফেলে।
প্রশ্ন- এটা কত বয়সে হয়? এটা কেন হয়? কাদের বেশী হয়? এর কী কোন পুর্ব সতর্ক থাকার ব্যবস্থা আছে?
এটা বেশীর ভাগ হয় বয়স ৪০ পেরুবার পর থেকে। তবে আগেও হতে পারে।
আমি ৩২ বৎসর বয়স্ক এক তরুন প্রফেসর এর ঘটনা জানি। মধ্য রাতের দিকে তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। তাকে হাসপাতালে নিতে নিতেই মারা যান।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে হৃদপিন্ড ধমনীর আভ্যন্তরীন প্রাচীরে CHOLESTEROL নামক চর্বি এটে গিয়ে জমতে জমতে ধমনী নালীর রক্ত চলাচল পথ বন্ধ করে দেওয়ার কারনে।
নীচে চিত্র-৩ এ দেখুন, ধমনী নালীতে CHOLESTEROL জমতে জমতে কী ভাবে রক্ত নালী পথ কে প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে।
প্রশ্ন- কারা কারা বেশী করে হৃদপিন্ডের রোগে আক্রান্ত হয়?
যারা শারীরীক পরিশ্রম করেনা, অতিরিক্ত খাদ্য খায়, অতিরিক্ত CHOLESTEROL চর্বি যুক্ত খাদ্য খায়, যারা ধুমপান করে, অতিরিক্ত মদ্যপান করে, অত্যধিক দুশ্চিন্তা করে, অত্যধিক রাগান্বীত ও উত্তেজিত হয়, নিয়মিত ও পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম লয়না ।
আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন,
একজন ৪৫ বৎসর বয়স্ক পূর্ণ সুস্থ সক্ষম ব্যক্তি, কোন একটি সামাজিক বিবাদে প্রডন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ার সংগে সংগে হৃদপিন্ডের কাজ ব্যহত হয়ে অল্পক্ষনের মধ্যেই সবার সম্মুখে মারা যায়।
কারন- অতিরিক্ত উত্তেজনার সময় শরীরে কিছু কিছু হরমোন অতিরিক্ত মাত্রায় নিঃসরিত হয়ে হৃদপিন্ডের কার্যের বিঘ্ন ঘটায়।
চিত্র-১, দেখা যাচ্ছ. লোকটি বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। হৃদপিন্ডের ধমনী কোন ভাবে আটকে গেলে বুকের বাম পার্শে এরুপ প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয়।
Source of figure- https://my.clevelandclinic.org/health/articles/heart-blood-vessels-coronary-arteries
চিত্র-২, হৃদপিন্ডের রক্ত সরবরাহ যে ভাবে হৃদপিন্ড ধমনী(CORONARY ARTERY) দ্বারা হয়।
Source of figure- http://www.medindia.net/news/healthinfocus/hdl-increasing-drugs-do-not-benefit-patients-with-coronary-artery-disease-112699-1.htm
চিত্র- ৩, CHOLESTEROL চর্বি জমতে জমতে যেভাবে হৃদপিন্ড ধমনী বন্ধ হয়ে এসেছে।
বাম পার্শেরটা শুস্থ ও ডান পার্শেরটা চ্র্বি-আক্রান্ত ধমনী।
ইউ–টিউবে হৃদপিন্ডের রক্ত সরবরাহ দেখুন–
CIRCULATORY SYSTEM ANATOMY: Coronary circulation arteries and cardiac veins vessel model description
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-
http://www.chkdr02.wordpress.com/
UPDATED ON- 01/08/2019
৩৭ তম পর্বের সূত্র সমুহ-
1.http://medical-dictionary.thefreedictionary.com/coronary+arteries
2 http://science-naturalphenomena.blogspot.com/2011/09/coronary-arteries.html
হৃদপিন্ড যে ভাবে RHYTHMIC সংকোচন-সম্প্রসারনের মধ্য দিয়ে রক্তকে সঞ্চালন করিয়া থাকে,DNA সম্পর্ক।পর্ব-৩৬(৫)
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ?
তাহলে আমার সংগে থাকুন।
আপনারা পূর্বের পর্ব সমূহে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।
হৃদপিন্ডের RHYTHMIC সংকোচন বলতে কী বুঝায়? কিসে এই RHYTHMIC সংকোচন ঘটায়? কেন ঘটায়? এর প্রয়োজনীয়তাও বা কী?
RHYTHM এর অর্থ কী?
একই মাত্রা ও সময়ের একই পার্থক্যকে ঠিক রেখে কোন ঘটনা বার বার ঘটতে থাকা কে RHYTHM বলে।
একটি সুস্থ হৃদপিন্ডের BEAT(সংকোচন ও সম্প্রসারন) সব সময় RHYTHMIC অর্থাৎ সবদিক দিয়ে একই মাপের হয়।
অর্থাৎ প্রত্যেকটা BEAT এর সময়ের পার্থক্য ও তীব্রতা একই মাপের হয়।
প্রশ্ন-এই RHYTHMIC নিয়ন্ত্রন টা কে করায়?
উত্তর- এটা হৃদপিন্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র SA NODE করায়।(পর্ব-৩৩ দেখুন)
আপনারা ৩৩ পর্বে জেনেছেন হৃদপিন্ডের বাম অলিন্দের উপরি অংশে SA NODE নামক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তার উপকেন্দ্র AV NODE ও তার নিজস্ব বিদ্যুত পরিবাহী তার (PURKINJE FIBERS) দ্বারা হৃদপিন্ডের মাংসপেশীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করিয়া মাংস পেশীকে সংকোচন করাইয়া, হৃদপিন্ডের সংকোচন (CONTRACTION) ঘটায়।
হৃদপিন্ডের মাংসপেশীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটাইলে কেন হৃদপিন্ডের মাংস পেশী সংকোচন করে?
এটা যে কোন মাংসপেশীর ধর্ম যে, যে কোন মাংস পেশীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটাইলে, সেই বিদ্যুতের আঘাতে মাংস পেশী তখন সংকোচন করিবে। একে আমরা বৈদ্যুতিক শক বলে থাকি।
আপনারা হয়তো অনেকে লক্ষ্য করে থাকবেন, কোন কোন সময়ে আমাদের নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব ঘটনায় এরুপ বৈদ্যুতিক শক পাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকি।
আবার যখন সেই মাংস পেশী হতে বিদ্যুৎ প্রবাহ তুলে লওয়া হয়, অথবা বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়, তখন এই মাংস পেশী স্বাভাবিক ভাবেই পূর্বের সম্প্রসারিত অবস্থায় (DILATATION) বা বিশ্রামে থাকার অবস্থায় ফিরে আসে।
ঠিক এই প্রক্রিয়াটাই প্রয়োগ করে হৃদপিন্ডের মাংস পেশীতে একবার বিদ্যুত প্রবাহ চালিয়ে সংকোচন (CONTRACTION) করা হয় ও তার পরোক্ষনেই বিদ্যুৎ প্রবাহ টা বন্ধ করে দিয়ে সম্প্রসারন (DILATATION)বা বিশ্রাম ঘটানো হয়।
তবে হৃদপিন্ডের এই বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চার্জ অন্য যে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চার্জ হতে ঢের উন্নত, বিশেষায়িত ও সুনিয়ন্ত্রিত। কারন এই বিদ্যুৎ যদি অনবরত চলে, আর বন্ধ না হয় তাহলে হৃদপিন্ড একবার মাত্র সংকোচনের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে ঐ সংকুচিত অবস্থায় পড়ে থাকবে। আর সম্প্রসারিত হয়ে এর মধ্যে রক্ত টেনে আনতে পারবেনা।
ফলে আমাদের ও সাথে সাথে মৃত্যু হইবে।
অর্থাৎ হৃদপিন্ড চাইলে যে কোন মুহূর্তে আমাদেরকে মেরে ফেলে দিতে পারে এবং তা এর যান্ত্রিক তুটি বিচ্যুতির মাধ্যমে ঘটেও থাকে।
এই কারণে SA NODE একবার বিদ্যুৎ এর SWITCH ON করে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে, হৃদপিন্ডকে সংকুচিত করিয়ে ও রক্ত পাম্প করিয়ে, আবার সাথে সাথেই বিদ্যুৎ এর SWITCH টা OFF করে দেয়।
হৃদপিন্ডের মাংসপেশীতে বৈদ্যুতিক চার্জ না থাকিলে, তখন হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে ও সম্প্রসারিত হয়ে যায়। আর তখন রক্ত হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠে চলে আসে।
(রক্ত কোথা হতে কোন প্রোকোষ্ঠে আসে, বিস্তারিত পর্ব-৩৫ দেখুন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র SA NODE কে অন্ধের মত শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গেলেই হলনা।
তাকে একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর ন্যায় বিদ্যুৎ এর SWITCH টাকেও যথাযথ ভাবে জীবনভর নিয়ন্ত্রনে রাখতে হচ্ছে, যথা সময়েএকের পর এক, একবার ON করে ও একবার OFF করে। তাও আবার RHYTHM ঠিক রেখে।
প্রশ্ন- SWITCH এর এই নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বটা কে পালন করে?
উত্তর- SA NODE (বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র) একই সংগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও করে আবার সঠিক সময়ে ON/OFF ও করে ও RHYTHM ও ঠিক রাখতে হয়। ঠিক একজন সুকৌশলী প্রকৌশলীর ন্যায়।
তাহলে এটা বুঝা যাচ্ছে SA NODE শুধু বিদ্যুৎ উৎপান করতেই সক্ষম নয়, বরং দায়িত্বের সংগে ঠিক সময় মত SWITCH ON/OFF ও করতে সক্ষম।
এভাবেই আমাদের হৃদপিন্ড অনবরত চলতে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, হৃদপিন্ডের এই চালিকা শক্তির মূলে ঐ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
অন্য ভাবে বলা যায়, এই বিদ্যুৎ শক্তিই, প্রতি মুহূর্তে হৃদপিন্ডকে বৈদ্যুতিক শক মেরে মেরে, পিটানোর মাধ্যমে, জোর করে এই সংকোচনের কাজটি আদায় করে নিচ্ছে।
মনে রাখবেন হৃদপিন্ডকে এ ভাবে বৈদ্যুতিক শক মারা যে কোন ভাবে বন্ধ করে দিলে, হৃদপিন্ড আর এক মুহুর্তও এই পরিশ্রমের কাজ করতে যাবেনা।
তার ফলাফল কী জানেন তো? হৃদপিন্ড টি তখন বিশ্রামে চলে গেল বা স্তব্ধ হয়ে গেল। আর হৃদপিন্ডের বিশ্রামের সংগে সংগে আমাদেরও চির কালের জন্য বিশ্রাম এসে গেল।
তাহলে বুঝতেই পারলেন, আমাদের বেচে থাকার শক্তি, এই হৃদপিন্ডটার অনবরত পরিশ্রমের দ্বারা যোগানো হয়।( আরো বিস্তারিত পর্ব-৩৫ দেখুন)
হৃদপিন্ড কম্পনের মাত্রা (HEARTBEAT)কী, কত ও কেন?
হৃদপিন্ডের একবার সংকোচন ও সম্প্রসারন হওয়াকে হৃদপিন্ডের একটা বিট (BEAT)বা PULSE বলা হয়।
হৃদপিন্ডের এই PULSE আমরা হাতের কবজীর কাছে ও আরো কিছু কিছু জায়গার ধমনী হাতের আঙ্গুল টিপিয়া অনুভব ও গনণা করতে পারি।
আমাদের দেশে কবিরাজী চিকিৎসা শাস্ত্রে একে “নাড়ী দেখা” বলা হয়, যদিও পেটের নাড়ীর সংগে এর কোনই সম্পর্ক নাই।
এটা আরো পরিস্কার ও আরো তথ্য সহ জানতে পারি স্টেথোস্কোপ এর ডায়াফরাম বুকে হৃদপিন্ডের উপর বসিয়ে ও আরো সূক্ষ্ম ভাবে জানতে পারি ECG পরীক্ষার মাধ্যমে।
হৃদপিন্ডের এই কম্পনের মাত্রা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ৭২ বার। অর্থাৎ একটা BEAT দিতে এক সেকেন্ড সময়ের ও কম সময় লাগতেছে।
হিসাব করলে ১/ ৭২ = ০.০১৩৪ মিঃ সময়ে প্রতিটা বিট দিচ্ছে।
এই BEAT টা অনিয়মিত ভাবে হলে কাজ চলবেনা। এটা সম্পূর্ণ নিয়ম তান্ত্রিক হতে হবে। কী সেই নিয়ম কানুন?
একটা সুস্থ হৃদপিন্ডে দুই কম্পনের মধ্যখানের এই সময়ের পার্থক্য টা সব সময় একই অর্থাৎ ০.০১৩৪ সেকেন্ড থাকতে হবে। অর্থাৎ কখনো অতি দ্রুত আবার কখনো অতি ধীর গতি সম্পন্ন করা যাবেনা।
একেই RHYTHM বলে। এটা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।
এর ব্যতিক্রম যদি ঘটে তাহলে বুঝতে হবে হৃদপিন্ডে ত্রুটি এসে গেছে। এটা অশুস্থ হৃদপিন্ড। অতি দ্রুত হলে তাকে TACHYCARDIA, ও অতি ধীর গতি হলে তাকে BRADYCARDIA, ও গতির উত্থান পতন হতে থাকলে তাকে ARRHYTHMIA বলে।
এরুপ হলেও আমরা অশুশ্থ হয়ে যাব।
হৃদপিন্ডের আরো একটা বিষয় ঠিক রাখা লাগে, তা হল প্রতিটা সংকোচন সমান মাপের হতে হবে অর্থাৎ একবার একটু কম সংকোচন করল, আবার পরের বার একটু বেশী সংকোচন করল, তাহলেও বুঝতে হবে হৃদপিন্ড অশুস্থ হয়েছে। এবং তখন আমরাও অশুস্থ হয়ে যাব।
এটা ECG তে ভাল ধরা পড়ে।
প্রশ্ন-
হৃদপিন্ডের অনবরত এত দ্রুত ভাবে, অর্থাৎ প্রতি ০.০১৩৪ মিনিটে ১ বার করে কেন BEAT বা সংকোচন-সম্প্রসারন করা লাগে?
উত্তর-
হ্যাঁ উপযুক্ত পশ্ন বটে। উত্তর এক কথায় আমাদের কে বাচিয়ে রাখার এই হৃদপিন্ড নামক অর্গানটির এই কর্মকান্ড।
আমাদের বাচিয়ে রাখার জন্য এর বিকল্প আর কোনই পথ নাই।
মনে রাখবেন, জন্মের পর থেকেই আমাদের নিকট আমাদের বেচে থাকাটা একটা স্বাভাবিক ও সহজ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আরামে চলতেছে বলে মনে হলেও আসল ব্যাপারটা তা কিন্তু মোটেই নয়। এর জন্য হৃদপিন্ডটাকে প্রতিটা মুহুর্ত অনেক উন্নত প্রযুক্তির কারিগরি ব্যবহার করিয়া অপরিসিম পরিশ্রম ও মূল্য বহন করতে হচ্ছে।
নীচে ১নং ইউ টিউবে হৃদপিন্ডের স্পন্দন দেখুন।
প্রশ্ন- কী ভাবে হৃদপিন্ড আমাদেরকে বাচিয়ে রাখতেছে?
উত্তর-হ্যা, সঠিক প্রশ্ন।
পর্ব-৩৫ নং টা একটু ভাল করে পড়ুন। সেখানে জানতে পারবেন। একটি চলন্ত প্লেনের জন্য যেমন অনবরত জলন্ত জ্বালানীর ব্যবস্থা থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়, এক মূহুর্ত যেমন জলন্ত জ্বালানী না থাকিলে প্লেনটির ধংস অনিবার্য, ঠিক আমাদের শরীরের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ জীবন্ত থেকে আমাদের জীবনটাকেও প্লেনের মত অনবরত প্রচন্ড শক্তি উৎপাদন করে চালিয়ে লয়ে যাচ্ছে।
আর আমাদের কোষ এই শক্তিটা উৎপাদন করে আমাদের খাদ্যের সারাংস ও অক্সিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে।
আর হৃদপিন্ড কী করে?
হৃদপিন্ড অনবরত এই প্রত্যেকটি কোষকে রক্তের মাধ্যমে খাদ্য বস্তু ও অক্সিজেন এর সরবরাহ করে চলে। যদি হৃদপিন্ড অনবরত এভাবে পাম্প করে করে আমাদের প্রতিটা কোষে জ্বালানী সরবরাহ না করে তা হলে আমাদের কোষের ও মৃত্যু হবে, তথা আমাদেরও মৃত্যু হবে।
একটি ট্রেইন ইঞ্জিনে যেমন শক্তি ও তাপ ছাড়া ইঞ্জিনটি অচল হয়ে ট্রেইনটিকে অচল করে দেয়, ঠিক একই পদ্ধতিতে আমাদের কোষের ইঞ্জিন, MITOCHONDRIA, যদি জ্বালানী (খাদ্য)ও অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শক্তি ও তাপ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরাও অচল (মৃত) হয়ে যাব।
এর জন্যই হৃদপিন্ডকে আমাদের বেচে থাকার জন্যই অনবরত বিনা মূল্যে এই কঠোর শ্রমের কাজ চালিয়ে যাওয়া লাগে।
বিনা মূল্যে?
হ্যাঁ, একেবারেই বিনা মূল্যে। রোগাক্রান্ত হৃদপিন্ডে ছোট্ট একটা ব্যাটারী বসিয়েও যদি এই কাজ চালানো লাগতো, তাহলেও সবার পক্ষে এর খরচ বহন করা সম্ভবপর হয়না।
তাহলে এবার নিশ্চয়ই বুঝতে সক্ষম হয়েছেন, কেন হৃদপিন্ডকে অনবরত এত ঘন ঘন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে BEAT বা সংকোচন ও সম্প্রসারন করা লাগে।
HEARTBEAT এর সংগে DNA সম্পর্ক।
এবার দেখা যাক SA NODE এর এই সুনিয়ন্ত্রিত কর্ম কান্ড কী জ্বীন ও অন্যান্য কোন বস্তুর সংগে সম্পর্কিত আছে?
ঊত্তর- অবশ্যই আছে যেমন- ১) Hcn4, ও ২) Shox2.
১) HCN4 (4) চিত্র-২
হৃদপিন্ড অত্যন্ত স্পর্ষ কাতর অর্গান।
কোন দুর্ঘটনার কারণে শরীরে প্রচন্ড ধাক্কা লাগলে, এই ধাক্কাটা হৃদপিন্ডের উপরেও পড়ে। তখন এই ধাক্কার কারনে হৃদপিন্ডের বিদ্যূৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়ে হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে লোকটি সাথে সাথে মারা যাবে, যদিও দেখা যেতে পারে লোকটির শরীরে কোথাও দুর্ঘটনার আঘাতের চিহ্ন নাই।
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন,
আমি একটা বাস দুর্ঘটনার কথা জানি, যেখানে দুইটা চলন্ত বিপরীত মূখী বাস মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। সেখানে পরশ্পর সংঘর্ষের পর বাস ও যাত্রীদের তেমন কোন ভাংচুর বা আঘাত বা জখম হয় নাই। সংঘর্ষের পর বাস দুইটি শুধু দুই দিকে হেলে পড়েছিল।
জন সাধারন এসে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, কোন বাস যাত্রীদের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্নই নাই। যাত্রীরা যেন যার যার ছিটে ঘুমিয়ে আছে, অথচ সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
এখানে এদের মৃত্যু ঘটেছে শরীরের উপর আঘাতের কারণে নয়, বরং মৃত্যু হয়েছে হটাৎ প্রচন্ড ধাক্কায় হৃদপিন্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে বিঘ্ন হওয়ায় হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।
এতবড় ধাক্কা হৃদপিন্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সহ্য করতে পারে নাই।
এভাবে কারো বুকের উপর হঠাৎ একটা প্রচন্ড শক্তির ঘুসি মারলেও তার হৃদপিন্ডও সাথে সাথে বন্ধ হয়ে লোকটি সাথে মারা যেতে পারে।
প্রশ্ন- তাহলে আমাদের হৃদপিন্ড কী কখনো কোন পূর্ব সংকেৎ প্রদান ছাড়াই হঠাৎ STRIKE করে তার কাজ বন্ধ করে দিতে পারে?
উত্তর- জী,হ্যা, আমাদের এই হৃদপিন্ডটার এরুপ ধরনের বিশ্বাষ ঘাতকতা বা দায়িত্ব হীনতার অজস্র প্রমান রয়েছে, এবং এখনো করে চলেছে।
ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন,
আমি বেশ কয়েক জনের ঘটনা জানি, এদের বয়স ৪০-৫৫ বছরের মধ্যে। তারা দিব্বি সুস্থ, কর্মরত সক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। কোনদিন বুকে ব্যাথার বা অশ্বস্থি বোধ করার ও কোন অভিযোগ ছিলনা।
কাজ হতে ঘরে ফিরে শুধু বলেছে আমার খারাপ লাগতেছে, আমি শুয়ে পড়তেছি।
তার সেই ঘুম চির-নিদ্রায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
একজনের কথা জানি সে ৩৫ বৎসরের দিব্বি সুস্থ সক্ষম যুবক। সকালে তার ব্যবসায়িক কাজে রিকসা লয়ে বেরিয়েছে। পরে খুজতে খুজতে জানা গেল, ঐ ব্যক্তি ঐ রিকসাতে HEART ATTACK হয়ে অশুস্থ হয়ে পড়লে, রিকসা চালক তাকে ঢাকা মেডিকেলে লয়ে যায়। সেখানেই বা তার পৌছানোর পূর্বেই তার মূত্যু হয়।
অতএব আপনারা আপনাদের এই হৃদপিন্ড টাকে পূর্ণ মাত্রায় বিশ্বাষ করবেননা, যদিও নিজেকে সুস্থ সক্ষম মনে হতে থাকে।
মনে করবেন যে কোন মুহূর্তে, আপনার বুকের পিঞ্জরার খাচার মধ্যের এই সোনালী বর্ণের হলুদিয়া পাখিটি আপনার দুই চোখে ধুলো দিয়ে,কখন কোন বনে যে উড়ে চলে যাবে তা টের ও পাবেননা।
প্রশ্ন- তাহলে শুধুই কি হৃদপিন্ডের ত্রুটি? আমাদেরকে এ ব্যাপারে কিছুই করনীয় নাই?
উত্তর-
অত্যন্ত ভাল প্রশ্ন। না শুধু হৃদপিন্ডের ই ত্রুটি নয়। আমরা আমাদের অজ্ঞতার কারনে এমন অনেক কিছু করে চলেছি যা হৃদপিন্ডকে সঠিক ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে বিঘ্নের সৃষ্টি করে।
ফলে হৃদপিন্ড তার দায়িত্ব পালনে অকালেই অসমর্থ হয়ে পড়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
অর্থাত আমাদের নিজেদের ক্ষতি, অজান্তে আমরা নিজেরা অহরহই করে চলেছি।
আমরা অধিকাংশই আমাদের ধংশের কাজটি নিজেরাই জেনে বা না জেনে পছন্দ করে লয়ে থাকি।
আপনার এই সবচাইতে উপকারী বন্ধু আপনার হৃদপিন্ডটা কী ভাবে সুস্থ ও সক্ষম থাকতে পারে, আপনাকে ১নং প্রাধান্য দিয়ে সর্বাগ্রে সর্বক্ষন লক্ষ্য রাখতে হবে।
পূর্ব হতে একটু সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি হৃদপিন্ডের বড় বড় সমস্যা হতে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
এসম্পর্কে পরবর্তী কোন এক পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ততক্ষন ধৈর্য ধরে আরো কিছু জানতে আমার সংগে থাকুন। (১,২,৩,৪)
Source of figure– http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory/heart-pictures.htm
চিত্র- ১, হৃদপিন্ডের গঠন টি বাহির হতে যেমনটা দেখা যায়। এর বিভিন্ন অংসের নাম দেখুন।
Hcn4 GENE
SOURCE OF FIGURE- https://ghr.nlm.nih.gov/gene/HCN4
চিত্র-২
HCN4 GENE-
Cytogenetic Location: 15q24.1, which is the long (q) arm of chromosome 15 at position 24.1
Molecular Location: base pairs 73,319,859 to 73,369,264 on chromosome 15 (Homo sapiens Annotation Release 108, GRCh38.p7) (NCBI)
এই জ্বীনটা SA NODE এর CHANNEL এ NA+ K+ এর প্রবাহ (১৭ তম পর্ব (স্নায়ূ কোষ ) করিয়ে প্রত্যেকটা HEARTBEAT উৎপাদন করায়।
তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারছেন, যদি এই জ্বীন কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বা MUTATION ( ১২ তম পর্ব দেখুন) হয়ে গেলে আর কখনোই হৃদপিন্ডের স্পন্দন (HEARTBEAT) উৎপাদন হইবেনা ও আমরা তখন চিরনিদ্রায় শায়িত হইব।
ইউ টিউব–
১ হৃদপিন্ডের স্পন্দন দেখুন–
https://www.youtube.com/watch?v=0NmWOHuy-o8
২। হৃদপিন্ড–
https://www.youtube.com/watch?v=oHMmtqKgs50
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-
http://www.chkdr02.wordpress.com/
UPDATED ON 01/07/2019
৩৬ তম পর্বের সূত্র সমুহ-
1.CIRCULATION CIRCUIT
http://antranik.org/blood-flow-of-the-heart/
- TEXAS HEART INSTITUTE
http://www.texasheartinstitute.org/HIC/Topics/Cond/CoronaryArterySpasm.cfm
CORONARY BRANCH
GENETIC REGULATION OF HEART AND DEVELOPMENT
হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠ ও ভালভ সমূহ, হৃদপিন্ড যখন সম্প্রসারিত বা সংকুচিত হয়, তখন হৃদপিন্ডে যা ঘটে, ফুসফুস এর সহযোগিতা,৩৫(৪)পর্ব।
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ?
তাহলে আমার সংগে থাকুন।
আপনারা পূর্বের পর্ব সমূহে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।
হৃদপিন্ড মানুষের রক্তকে অনবরত পাম্পের মাধ্যমে একটা CLOSED CIRCUIT SYSTEM এর মধ্য দিয়ে আবর্তন করাতে থাকে।
যদি কখনো আঘাতের কারণে বা রক্তচাপ (BLOOD PRESSURE) বৃদ্ধির কারণে আভ্যন্তরীন কোন অর্গানে রক্ত নালী ছিড়ে বা ফেটে গিয়ে এই আবদ্ধ CIRCUIT নালীর বাহিরে টিসুর মধ্যে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে INTERNAL HEMORRHAGE বা “আভ্যন্তরীন রক্তক্ষরন” হইয়াছে বলা হয়। এটা ভয়ংকর বিপজ্জনক। বিশেষ করে যদি মস্তিস্কে অথবা হৃদপিন্ডে ঘটে তখন আরো বেশী বিপজ্জনক হয়।
মস্তিস্কে এটা ঘটলে তখন সার্জারী করা জরুরী হয়ে পড়ে।
নীচের ১ নং চিত্রে একটি হৃদপিন্ডকে বাহির হতে (সম্মুখ দিক দিয়ে) যেরুপ দেখা যায়, তা দেখতে পাচ্ছেন।
এর অভ্যন্তরে কী কান্ড কারখানা ঘটতেছে, শুধুমাত্র বাহির হতে দেখে তা কিছুই বুঝতে পারবেননা।
শুধু শরীরের বিষয়েই বা কেন, এ ব্যাপারটি সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তাই আসুন আজ আমরা আমাদেরই হৃদপিন্ডের অভ্যন্তরটায় কী আছে ও সেখানে কী ঘটতেছে তা একটু দেখে আসি। তবেই হৃদপিন্ডের কর্মকান্ড কিছুটা উপলদ্ধি করতে পারবেন।
কী করে হৃদপিন্ডের অভ্যন্তরে দেখবেন?
এটাকে না কেটে অভ্যন্তরে দেখবার কোনই উপায় নাই।
তা হলে আসুন হৃদপিন্ডটার ঠিক প্রায় মধ্যখান দিয়ে সমান দুই ভাগে এমন ভাবে ভাগ করে (CORONAL SECTION)ফেলি যাতে সমান ভাবে এক দিকে হৃদপিন্ডের সম্মুখের অর্ধাংস ও অপর দিকে পিছনের অর্ধাংস পড়ে।(চিত্র-২ দেখুন)
বুঝতে সহজ হওয়ার জন্য, বর্ণণা টা নীচের ২নং চিত্রের নীচে দেওয়া হল, যাতে চিত্রটি সামনে রেখে প্রাকটিকাল দেখে দেখে হৃদপিন্ডের অভ্যন্তরটা সহজে চিনতে ও কীভাবে কাজ করে তা সহজে বুঝতে পারেন।
তাহলে আসুন চিত্রটি দেখুন ও নীচের বর্নণা পড়তে থাকুন।
Source of figure– http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory/heart-pictures.htm
চিত্র-১, সম্মুখ দিক হতে একটি হৃদপিন্ডকে যে ভাবে দেখায়।
Source of figure- https://en.wikipedia.org/wiki/Circulatory_system
চিত্র-২, হৃদপিন্ডকে দুই খন্ডে বিভাজন (CORONAL SECTION) করার পর সম্মুখ হতে এর অভ্যন্তরের দৃশ্যপট। এতে কী দেখা যাচ্ছে?
লক্ষ করুন, এতে দেখা যাচছ-
৪টি প্রকোষ্ঠ, যেমন-
১) RIGHT ATRIUM (ডান অলিন্দ)-
২) RIGHT VENTRICLE (ডান নিলয়)-
৩) LEFT ATRIUM (বাম অলিন্দ)-
৪) LEFT VENTRICLE (বাম নিলয়)-
লক্ষ্য করুন ডান ও বাম অংসের মধ্যখানে শক্ত ও পুরু প্রাচীর (SEPTUM) রয়েছে, যা উভয় পার্শের রক্তকে পৃথক রাখার নিশচয়তা বিধান করে।
মনে রাখবেন সব সময় ডান পার্শের কক্ষ দুইটি (ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়) শরীর হতে বহন করে আনা কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত এনে ফুসফুসে অক্সিজেন (O2) মিশ্রনের জন্য পাম্প করে পাঠিয়ে দেয়। অলিন্দ গ্রহন করে ও নিলয় পাম্প করে পাঠিয়ে দেয়।
এবং বাম পার্শের প্রকোষ্ঠ দুইটি(বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়) ফুসফুস হতে অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত বিশুদ্ধ রক্ত এনে, পাম্প করে সর্ব শরীরে পাঠিয়ে দেয়। এখানেও অলিন্দ গ্রহন করে ও নিলয় পাম্প করে পাঠিয়ে দেয়।
হৃদপিন্ডের দুই পার্শের এই সম্পূর্ণ দুই বিপরীত ধরনের রক্ত পাশাপাশি থাকিলেও কখনো মিশ্রিত হতে পারেনা। কারণ এদের মাঝখানে শক্ত প্রাচীর থাকে যাকে SEPTUM বলা হয়। উপরে চিত্র-২ দেখুন।
এবার হৃপিন্ডের এই ৪টি প্রকোষ্ঠ এর বর্ণণা জানুন-(চিত্র-২ দেখুন)
১) RIGHT ATRIUM (ডান অলিন্দ)-হৃদপিন্ড সম্প্রসারিত হইলে SUPERIOR VENA CAVA ও INFERIOR VENA CAVA নামক সবচেয়ে মোটা দুইটি ধমনী এর মাধ্যমে, এখানে সর্ব শরীর হতে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত দুষিত রক্ত আনয়ন করা হয়।
প্রশ্ন- শরীরের কোথা হতে অনবরত এই বিপুল পরিমানের কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) আসে? শরীর তো বায়ূ মন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) কখনই গ্রহন করেনা, বরং অনবরত গ্রহন করে অক্সিজেন?
উত্তর- খুবই ভাল প্রশ্ন। এই কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) আমাদের শরীরের প্রতিটা কোষে অনবরত শরীরের বর্জ পদার্থ হিসাবে উৎপন্ন হচ্ছে, যেমনটা কারখানা ফ্যাক্টরী চললে সেখানে বর্জ পদার্থ উৎপন্ন হয়, এবং তা বর্জ্য ও ক্ষতিকর হিসাবেই ফেলে দেওয়া হয়।
আমাদের শরীরের ১০০ ট্রিলিয়নের প্রত্যেকটি কোষকে জীবিত থাকার জন্য অনবরত বাইরের যে কোন বৃহৎ ও জটিল ফ্যাক্টরীর চাইতেও অনেক বৃহৎ ও জটিল কাজ মৃত্যু পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা ব্যাপী চালিয়ে যেতে হয়। তবেই না আমাদের কোষগুলী তথা আমরা বেচে থাকি। আমরা ম্যাজিকের মত বেচে থাকতে সক্ষম নই। এটা আর এক ঘটনা। এখানে বলতে গেলে প্রবন্ধটি দীর্ঘ ও জটিল হয়ে যাবে। তাই এ গল্পটা আর একদিন শুনবেন। (কোষ কী ? ১৬তম পর্ব দেখুন)
২) RIGHT VENTRICLE (ডান নিলয়)-সংগে সংগে ডান অলিন্দে আনীত রক্ত TRICUSPID ভালভ এর মধ্য দিয়ে, ডান নিলয়ে চলে যায়।
৩) LEFT ATRIUM (বাম অলিন্দ)-হৃদপিন্ড সম্প্রসারিত হইলে ফুসফুস হতে PULMONARY VEIN(ফুসফুস শিরা) এর মাধ্যমে অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত বিশুদ্ধ রক্ত এখানে চলে আসে।
৪) LEFT VENTRICLE (বাম নিলয়)- বাম অলিন্দে আনীত রক্ত সংগে সংগে MITRAL VULVE এর মধ্য দিয়ে বাম নিলয়ে চলে যায়।
এবার হৃদপিন্ডের ভালভ সম্পর্কে জানুন-
(ভালব কী? কী ভাবে কাজ করে পর্ব-৩৪ দেখুন)
হৃদপিন্ডের ৪টি ভালব আছে, যেমন-
১) TRICUSPID ভালভ-এখানে ৩টি ঢাকনা কাজ করে। এজন্য একে TRICUSPID ভালব বলে। এটা ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মধ্যখানের প্রাচীরের ছিদ্র পথকে নিয়ন্ত্রন করে। এই ভালভ এই ছিদ্র পথকে উন্মুক্ত করে নীচে ডান নিলয়ের দিকে। অর্থাৎ এটা এমন ভাবে সাজানো যে যখন হৃদপিন্ড সম্প্রসারিত হয় তখন ডান অলিন্দে আনীত রক্ত এই ছিদ্রপথের মধ্য দিয়ে নীচে ডান নিলয়ে ঢুকে যায় ।
কিন্তু যখন হৃদপিন্ড সংকোচন করে তখন আভ্যনতরীন চাপে এই ভালবটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটে যায়,আর রক্ত উপরে ডান অলিন্দের দিকে REGURGITATE করতে পারেনা। ফলে এই রক্ত “ফুসফুস-শিরা” এর মধ্য দিয়ে ফুসফুসে চলে যায়।
২) PULMONARY VALVE-এটা ডান নিলয়ের উপরের দিকে যেখানে PULMONARY ARTERY (ফুসফুস শিরা) এর মুখ অবস্থিত, সেইমুখে এটা ফিট করা রয়েছে। এই ভালভটি ছিদ্র পথটিকে OPEN বা উন্মুক্ত করে বাহিরের দিকে, অর্থাৎ যে রক্ত নালী পথ ফুসফুসে চলে গিয়েছে। এটা এমন ভাবে ফিট রয়েছে যাতে, হৃদপিন্ড যখন সংকুচিত হয়ে অভ্যন্তরে চাপের সৃষ্টি করে তখন ডান নিলয়ে আনীত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত এই ভালভ টিকে খুলে দিয়ে বহি মুখে উন্মুক্ত করে দেয়। আর তখন এই কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত দুই পার্শে অবস্থিত দুইটি ফুসফুসে প্রবাহিত হয়ে যায়।
তাহলে এখানে মনে রাখুন হৃদপিন্ড সংকোচন করলে ডান নিলয়ের কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত প্রবাহিত হওয়ার একমাত্র উন্মুক্ত ছিদ্র পথ এই PULMONARY ARTERY (ফুসফুস শিরা) এর মুখ, যার মধ্য দিয়ে এই রক্ত ফুসফুসে প্রবাহিত হয়ে যায়।
এই রক্ত ফুসফুসে গেলে ফুসফুস প্রস্বাসের মাধ্যমে রক্তের এই কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)বায়ু মন্ডলে ছেড়ে দেয়। একই সংগে ফুসফুস নিস্বাষের মাধ্যমে বায়ুমন্ডল হতে অক্সিজেন (O2) সংগ্রহ করে এই রক্তেই মিশ্রিত করে দেয়।
তখন এই অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত রক্ত, হৃদপিন্ড সম্প্রসারিত হইলে PULMONARY VEIN (ফুসফুস ধমনী) এর মধ্য দিয়া হৃদপিন্ডের বাম অলিন্দে চলে আসে।
এবং সাথে সাথেই এই রক্ত MITRAL VALVE এর ছিদ্র পথ দিয়ে, বাম নিলয়ে পৌছে যায়।
এরপর যখন হৃদপিন্ড সংকোচন করে তখন এই রক্ত, সবচেয়ে মোটা ধমনী AORTA এর মুখের AORTA VULVE এর ছিদ্র পথ দিয়ে ঢুকে শরীরের সমগ্র কোষ তথা ১০০ ট্রিলিয়ন কোষকে সরবরাহ করে।
সারাংস-
মনে রাখবেন, হৃদপিন্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারন উভয় পার্শের (ডান ও বাম) কাজ একই সংগে তালে তাল মিশিয়ে সমান ভাবে করতে থাকে। অর্থাত হৃদপিন্ড সম্প্রসারিত হইলে, ডান পার্শে সর্ব শরীর হতে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) মিশ্রিত রক্ত চলে আসে, আর ঠিক তখনি বাম পার্শে ফুসফুস হতে অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত রক্ত চলে আসে।
আবার এর পরক্ষনেই যখন হৃদপিন্ড সংকোচন করে, তখন ডান পার্শের কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) মিশ্রিত রক্ত ডান নিলয় হতে উভয় ফুসফুসে চলে যায়, আর ঠিক তখনি হৃদপিন্ডের বাম পার্শের অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত রক্ত, বাম নিলয় হতে সর্ব শরীরে চলে যায়।
হৃদপিন্ড এভাবে সর্বক্ষন ছন্দের তালে তাল মিশিয়ে সংকোচন ও সম্প্রসারনের মধ্য দিয়ে আমাদের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে।
হৃদপিন্ডের এই ছন্দের তাল এর পতন হইলেই আমাদের জীবন এর ও পতন বা মৃত্যু হয়।
এইটাই রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
প্রশ্ন- কেন আমাদের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের প্রত্যেকটি কোষকে এভাবে বায়ুমন্তল হতে ফুসফুস ও রক্তের মাধ্যমে অনবরত অক্সিজেন (O2)সরবরাহ করা লাগে?
উত্তর- খুবই ভাল প্রশ্ন। খাদ্য ও অক্সিজেন ছাড়া আমাদের কোষ গুলী তথা আমরা জীবিত থাকতে পারিনা। আগেই বলেছি আমাদের প্রতিটা কোষকেই এক একটা বৃহৎ ফ্যক্টরী বা জগত বলতে পারেন।
এই কোষ গুলীকে জীবিত থাকতে গেলে এমনি এমনিই জীবিত থাকতে পারেনা। এদের বেচে থাকার জন্য একটি সাক্ষাত “শক্তি”(ENERGY)ও নির্দিষ্ট “তাপ মাত্রা” প্রয়োজন।
কোষে এইটা উৎপাদন করে আমাদের মুখ দিয়ে সরবরাহ কৃত খাদ্যবস্তুর সারাংস ও নাক দিয়ে সরবরাহ কৃত অক্সিজেন, এর মধ্যে একটা জটিল বিক্রিয়ার মাধ্যমে । তবেই আমরা বেচে থাকি।
আমাদের ব্যবহারিক জীবনের ছোট্ট একটা উদাহরণ দেখুন-
আমরা চুলায় পাক করতে আগুনের উত্তাপ প্রয়োজন হয়। কীভাবে আগুনের উত্তাপ পাই?
এর জন্য আমরা চুলায় কাঠ দিয়া আগুন ধরিয়ে এই উত্তাপ শক্তি পাই। এখানেও এই তাপ শক্তি উৎপাদন হতে অক্সিজেন (O2)এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেখানকার বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন না থাকিলে কাঠ জ্বলতেও পারবেনা ও তাপ ও দিতে পারবেনা। আবার কাঠ জ্বলে জ্বলে তাপ দেয় ও একই সংগে বায়ুমন্ডলে বর্জ পদার্থ হিসাবে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ও ছড়িয়ে দেয়।
ঠিক তদ্রুপই আমাদের কোষ গুলি আমাদের খাদ্য বস্তুর সারাংস গুলিকে রাসায়নিক ক্রীয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন (O2) এর সংস্পর্ষে কাঠের মত জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে শরীর কে শক্তি ও তাপ দেয় আর একই সংগে ক্ষতিকর বর্জ্য হিসাবে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) উৎপন্ন করে।
আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা। ৯৮০ ফাঃ। এই তাপমাত্রাটা শরীরের কোষগুলী এভাবে অনবরত খাদ্যবস্তুকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে অনবরত ধরে রাখে।
নইলে আমরা শীতল হয়ে মারা যাব।
কোষের মধ্যের যে অতিশয় ক্ষুদ্র অর্গানটি বহু রকম ENZYME, CO-ENZYME ব্যবহার করে অত্যন্ত জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই শক্তি উৎপাদনের কাজটি করে তার নাম MITOCHONDRIA।
আর এই প্রক্রিয়াটার নাম METABOLISM।
এখানে বিস্তারিত বলতে গেলে প্রবন্ধটি দীর্ঘ ও জটিল হয়ে যাবে। তাই এ গল্পটা আর একদিন শুনবেন।
৩) MITRAL VULVE- বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের প্রাচীরের মধ্য খানে থাকে।এটা ২টা ঢাকনা দ্বারা তৈরী। এটা ছিদ্র পথকে নীচের দিকে অর্থাৎ বাম নিলয়ের দিকে OPEN বা উন্মুক্ত করে। অর্থাৎ বাম অলিন্দের রক্তকে বাম নিলয়ে পৌছে দেয়।(২নং চিত্র লক্ষ করুন)
উপরেই জেনেছেন।
৪) AORTIC VULVE- এটা বাম নিলয়ের উপর দিকে শরীরের সবচেয়ে মোটা ধমনী, AORTA, যার মধ্য দিয়ে সমগ্র শরীরে অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করা হয়, তার মুখে অবস্থিত। এই ভালভ এই ছিদ্র পথটাকে বাহিরের দিকে OPEN বা উন্মুক্ত করে। অর্থাত,হৃদপিন্ড,সংকোচনের,সময় এই অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত রক্ত তখন AORTA এর মধ্য দিয়ে সমগ্র শরীরে পৌছে যায়। (২নং চিত্র লক্ষ করুন)
উপরেই জেনেছেন।
এবার ২নং চিত্রটি আবার একটু লক্ষ্য করুন –
RIGHT ATRIUM (ডান অলিন্দ)এ OPEN বা উন্মুক্ত হয়েছে SUPERIOR VENA CAVA, ও INFERIOR VENA CAVA নামক দুইটি শরীরের সবচেয়ে মোট শিরা। এর কী কাজ জানেন? হৃদপিন্ড সম্প্রসারনের সময় এই ২ টি মোটা শিরা সর্ব শরীর হতে অসংখ্য ছোট ছোট শিরার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত বহন করিয়া হৃদপিন্ডের এই RIGHT ATRIUM (ডান অলিন্দ)নামক প্রকোষ্ঠে আনে।
SUPERIOR VENA CAVA, শরীরের উপরি অংশের সমগ্র কোষ হতে আর INFERIOR VENA CAVA, আনে শরীরের নিম্নাংসের সমগ্র কোষ হতে।
কয়েকটা বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করুন-
১) ডান অলিন্দে ও ডান নিলয়ে শিরার মধ্য দিয়ে আগত শুধুমাত্র একটি বিশেষ ধরনের রক্ত ধারন করে। আর তাহল অবশ্যই বুঝতে পারছেন, এই রক্ত টা শুধু মাত্র কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত, তাতে কোনই সন্দেহ নাই।
অন্য কথায় একটা নীরোগ হৃদপিন্ডে, তার ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ে বা তার ডান পার্শের প্রকোষ্ঠে শুধু মাত্র কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত থাকতেছে। এই ডান পার্শে কোন অক্সিজেন (O2)মিশ্রিত রক্ত থাকতে পারেনা।
২) হৃদপিন্ডের বাম পার্শের প্রকোষ্ঠে, অর্থাৎ বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ে ঠিক এর বিপরীত, অর্থাৎ এখানে শুধু মাত্র অক্সিজেন (O2)মিশ্রিত রক্ত থাকতেছে।
৩) উভয় বিপরীত ধর্মী রক্ত হৃদপিন্ডের মধ্যে একেবারে পাশাপাশি থাকলেও এরা যাতে মিশ্রিত না হতে পারে, তার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে, উভয়ের মাঝে শক্ত প্রাচীরের (SEPTUM) ব্যবস্থা করে।
যদি জন্মগত ভাবে জেনেটিক বৈকল্যের কারনে কারো কারো এই প্রাচীরে ছিদ্র থেকে যায়। তখন তাদের এই উভয় রক্ত মিশ্রিত হয়ে জীবন বিপন্ন করে তোলে। তখন হৃদপিন্ড শরীরকে একেবারে বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করতে সক্ষম হয়না। (১,২,৩)
তখন তাদের সার্জারীর মাধ্যমে এই ছিদ্র মেরামত করা লাগে।
এরুপ একটি বাস্তব রোগীর বর্নণা জানতে পড়ুন আমার এই প্রবন্ধ-
ইউ টিউব-
https://www.youtube.com/watch?v=0NmWOHuy-o8
১। এই ইউ টিউবে হৃদপিন্ডের স্পন্দন দেখুন্।
https://www.youtube.com/watch?v=oHMmtqKgs50
২। এই ইউ টিউবে হৃদপিন্ডের কাজ দেখুন।
সংগে থাকুন আরো জানতে পারবেন।
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-
http://www.chkdr02.wordpress.com/
UPDATED ON-01/07/2019
৩৫ তম পর্বের সূত্র সমুহ-
- FULL HEART DIAGRAM
http://www.cdc.gov/heartdisease/about.htm
- HEART SECTION DIADRAM
. http://en.wikipedia.org/wiki/Circulatory_system
3 Circulatory System
http://www.texasheart.org/HIC/Anatomy/
হৃদপিন্ড কী?হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে? চেক ভালভ, পর্ব-৩৪(৩)
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ? তাহলে এই সিরিজ পড়ুন।
আপনারা পূর্বের পর্বে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।
মানুষের রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র একটা CLOSED CIRCUIT. অর্থাত হৃদপিন্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারনের সময় যে রক্তটা সমগ্র শরীরের প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষকে খাদ্য ও অক্সিজেন (O2) সরবরাহ করে ও একই সংগে এই কোষ গুলী হতে বর্য্য পদার্থ কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)বহন করে আনে, তা কিছু বড় বড় ও অসংখ্য ক্ষুদ্র ও সরু শিরা,উপশিরা ও ধমনীর ভিতরে থেকে আবর্তন করার মধ্য দিয়ে হতে থাকে।
অর্থাত রক্ত কখনই শিরা ও ধমনীর CIRCUIT এর বাইরে যায়না।
কখনো কখনো অতিরিক্ত রক্ত চাপের কারণে বা দুর্ঘটনার কারণে, মস্তিস্কের এই ক্ষুদ্র শিরা ফেটে রক্ত এই CIRCUIT এর বাহিরে বেরিয়ে পড়লে সে স্থানে রক্ত সরবরাহ ব্যহত হয়ে যায় ও মস্তিকের কাজ ও ব্যহত হয়ে যায়।
তখন আমরা একে BRAIN STROKE হয়েছে বলে থাকি।
একারণে বয়স ৪০ পেরুলেই প্রত্যেকের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো ও রক্তচাপ অনবরত নিয়ন্ত্রনে রাখা একান্ত প্রয়োজনীয়।
একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি ৪.৭–৫.৭ লিটার রক্ত ধারন করেন।(২)
আর এইযে অসংখ্য শিরা উপশিরা রয়েছে এর সব চাইতে সরু গুলিকে CAPILLARY বলে। এগুলী চুলের মত সরু। এর মধ্যদিয়ে একটি মাত্র রক্তকোষ RBC একদিকে যেতে পারে।
আর সমগ্র শিরা গুলী যদি একত্র করে লম্বা লম্বি ভাবে যোগ করা যায়, তাহলে কী অনুমান করতে পারেন এর দৈর্ঘ কত হবে?
এর দৈর্ঘ হবে প্রায় ৬০,০০০ মাইল যা আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটাকে ২ বার পরিবেস্টিত করার পরও কিছু অবশিষ্ট থেকে যাবে।(৩)
তাহলে এবার বুঝুন আমাদের সমগ্র শরীরে রক্ত সরবরাহের জন্য কতবড় দীর্ঘ শিরা উপশিরা অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটা কোষে রক্ত সঞ্চালনের জন্য কতবড় উন্নত প্রযুক্তি কাজ করতেছে!!
এতবড় সুদীর্ঘ CLOSED CIRCUIT পাইপ এর মধ্য দিয়া হৃদপিন্ডকে সঠিক ভাবে কার্য চালনার জন্য CIRCULATION (প্রবাহ)টাকে সব সময় এক মূখী রাখতে হয়।
তা না করলে অক্সিজেন (O2)মিশ্রিত ও কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত একত্র মিশ্রিত হয়ে গিয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে, যা কিছু কিছু হৃদপিন্ডের রোগের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে (এ সম্পর্কে পরে কোন এক পর্বে আলোচনা করা হবে)।
যে পদ্ধতি অনুসরন করে হৃদপিন্ডকে কাজ চালাতে হয়–
১)সব সময় শরীরের কোষগুলীকে ফুসফুস হতে বিশুদ্ধ (অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত) রক্ত এনে, সরবরাহ করতে হবে।
২) সব সময় শরীরের সমগ্র কোষ হতে দুষিত (কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত) রক্ত বহন করে এনে, ফুসফুস কে এই কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) বের করে দেওয়ার উদ্যেশ্যে সরবরাহ করতে হবে।
৩) এই কাজটি করতে গেলে হূদপিন্ডকে রক্তের একমুখী সঞ্চালনের নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে। অর্থাত রক্ত কখনোই পিছন মুখে ফিরতে (REGURGITATE) করতে পারবেনা।
REGURGITATE এর ঘটনা ঘটলেই শরীরের কোষে বিশুদ্ধ রক্তের স্থলে দুষিত রক্ত পৌছে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।
৪)পাম্পের সময় REGURGITATE ঠেকাতে গেলে হার্টের যথোপযুক্ত জায়গায় নিজস্ব CHECK VALVE ফিট করে রাখতে হবে। রক্ত সম্মুখে এগুবার সময় CHECK VALVE খুলে যায়।আর রক্ত পিছনে যেতে চাইলেই, ভালভে চাপ পড়ার কারণে ভালভটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে, পথটি বন্ধ করে ধরে।
হৃদপিন্ড এই CHECK VALVE এর ছোট্ট অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ MECHANISM টা ব্যবহার করে রক্তকে সব সময় এক মুখী প্রবাহের নিশ্চয়তা বিধান করে।
তাহলে দেখলেনতো হৃদপিন্ড CHECK VALVE এর ব্যবহার আমাদের জন্মের পূর্বেই আয়ত্ব করে নিয়ে কাজ চালিয়ে আসছে।
৫) যেহেতু উভয় রক্ত অর্থাত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) মিশ্রিত (দুষিত) রক্ত ও অক্সিজেন (O2)মিশ্রিত (বিশুদ্ধ) রক্ত, উভয়কেই হৃদপিন্ড তার প্রকোষ্ঠের অভ্যন্তরে আনয়ন করে পরিচালনা করতেছে, অতএব এই দুই সম্পুর্ণ ভিন্ন ধরনের রক্ত যাতে সামান্য পরিমান ও মিশ্রিত না হতে পারে তার ও নিশ্চয়তা বিধান করা লাগবে, এই কারনে একই হৃদপিন্ডের এদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক রুম ও থাকতে হবে। উভয়ের মাঝখানে শক্ত প্রাচীর ও থাকতে হবে।
হৃদপিন্ডের VALVE কী?
ভালভ কোন তরল পদার্থের গতিপথ কে নিয়ন্ত্রন করে একমুখী বা শুধু সম্মুখগামী করে দেয়। এটা আমরা ব্যবহারিক জীবনেও প্রয়োগ করে থাকি।
উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে, টিউব ওয়েল এর কথা (চিত্র–১)।আপনারা অনেকেই এটা গ্রামে হয়তো দেখে থাকবেন।
কিন্তু এটা কী ভাবে কাজ করে, তা–কী জানেন?
ভালভ কী ভাবে কাজ করে সেটা বুঝাবার জন্য নীচে টিউব ওয়েল এর ছোট্ট একটি উদাহরণ দিলাম–
লক্ষ করুন, চিত্রে (১ নং) লাল চিহ্নিত অংশে একটা CHECK VALVE বসানো থাকে। এই ভালবটিতে একটি উঠা–নামা করতে পারে এমন একটি ঢাকনা আছে। টিউব ওয়েলের হ্যান্ডেল নীচের দিকে চাপ দিলে টিউব ওয়েল এর মধ্যে অবস্থিত প্লাঞ্জার ও ওয়াসার টি উপরের দিকে উঠে আসে।এই এই সময়ে প্লাঞ্জার এর নীচে ও ভালভ এর উপরে নিগেটিভ চাপের সৃষ্টি হয় যার ফলে CHECK VALVE টির ঢাকনা টি উপরের দিকে উঠে আসে, ও পাইপের মুখ খুলে গিয়ে মাটির নীচের পানি টিউব ওয়েলের বডিতে ঢুকে যায়। আর তখন টিউব ওয়েল থেকে পানির একটা অংশ বেরিয়ে আসতে থাকে।আর একটি অংশ পানি টিউব ওয়েলে VALVE এর উপরে সব সময় থেকে যায়।
এই পানিটা আর মাটির নীচের দিকে কখনোই ফেরত যেতে পারেনা,আবার হাতল উপরের দিকে উঠালে, প্লাজ্ঞার টি নীচের দিকে চলে যায় ও নিগেটিভ চাপ ও চলে যায়।
তখনো ভালভের নীচে পানী থাকে।
কারণ?
কারন ইতিমধ্যে উপরে উঠা পানিটার নিম্ন মুখী চাপে ভালভের ঢাকনাটি দ্বারা টিউব ওয়েলের পাইপ এর মুখটাকে স্বয়ং ক্রিয় ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
আবার হাতলে চাপ দিলে ঐ একই ভাবে ভালভ এর মুখ খুলে গিয়ে নীচে থেকে পানি আনবে ও পানি বেরুবে।
এভাবে এই একই চক্র চলতে থাকে।
এতে পানির গতি সব সময় উর্ধমুখী থাকে, কখনোই নিম্ন মুখি হতে পারেনা। এই কাজটি করে টিউব ওয়েল এর চেক ভালভ এ।
যদি ওখানে চেক ভালভ বসানো না থাকতো তাহলে কী ঘটতো?
যদি চেক ভালভ না থাকতো তাহলে ভিতেরের নিগেটিভ চাপ চলে যাওয়ার সংগে সংগেই টিউব ওয়েল এর নীচের অংসের সমস্ত পানিটা ধপাস করে পাতালে চলে যেত।
আর হাতলে চাপ দিলেও টিউব ওয়েল থেকে কোন পানি সহজে বেরুত না।
কারন তখন টিউব ওয়েল এর নীচের অংশে তো কোনই পানি অবশিষ্ট নাই।
আশা করি এই উদাহরন দ্বারা আপনারা ধরতে পেরেছেন যে VALVE MECHANISM কি ভাবে তরল পদার্থের গতিপথ এক মুখী করে উদ্যেশ্য সফল করায়।
হৃদপিন্ড ও ঠিক আমাদের হাতে তৈরী টিউব ওয়েলের ভালভ ব্যবহার করার মত করে রক্তের গতিপথকে একমুখী রেখে তার উদ্যেশ্য সাধন করায়।
তবে টিউব ওয়েল এর কাজ থেকে হৃদপিন্ডের কার্য ও উদ্যেশ্য কিছুটা জটিল আছে, যেমন –
টিউব ওয়েল– একটি OPEN SYSTEM পদ্ধতি। অর্থাত পানিটা বাইরে একবার বের করে দিলেই তার দায়িত্ব শেষ। পানি কোথায় গেল তার খোজ রাখার দরকার হয়না। পানিটা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবহার করার পর এর মধ্যে সৃষ্ট দুষিত বর্জ দুরীভূত করে প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ উপাদান মিশিত করিয়া পুনরায় সেই পানি ও ঐ জায়গায় ব্যবহার করার কোন ঝামেলা নাই।
তাই টিউব ওয়েল একটি মাত্র ভালভ ব্যবহার করে তার সরল সাধারণ
কাজ চালাতে পারে।
আর সেক্ষেত্রে হৃদপিন্ড?
হৃদপিন্ডকে CLOSED CIRCUIT ব্যবহার করতে হয়। কারণ তাকে তার একটি অংশ দ্বারা ফুসফুস হতে বিশুদ্ধ (অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত) সংগ্রহ করে শরীর কে দিতে হয়। যা হৃদপিন্ডের বাম পার্শের অংস করে।
এবং আর একটি অংস দ্বারা শরীর হতে দুষিত(CO2 মিশ্রিত) রক্ত সংগ্রহ করে অক্সিজেন মিশ্রনের কাজের জন্য ফুসফুসে পাঠাতে হয়। যা হৃদপিন্ডের ডান পার্শের অংস করে।
তাই এই জটিল কাজ সমাধানের জন্য, ও রক্তের গতিপথ সঠিক রাখার জন্য হৃদপিন্ডকে ৪ টি ভালভ ব্যবহার করা লাগে।
সংগে থাকুন, পরের পর্বে হৃদপিন্ড তার এই চারটি ভালভ ব্যবহার করে কী ভাবে রক্ত সঞ্চালন চালায় তা বর্নণা করা হবে।
এক সংগে বেশী জানতে গেলে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে, তাই পর্ব ছোট করা হল।
Source of figure- http://users.physics.harvard.edu/~wilson/arsenic/conferences/Feroze_Ahmed/Sec_3.htm
চিত্র–১, টিউবওয়েল এর ভালভ, কী ভাবে পানির গতিপথ শুধু মাত্র উর্ধ মুখী রাখিয়া নিয়ন্ত্রন করে, তা দেখানো হয়েছে। হৃদপিন্ডের ভালভ ও ঠিক একই ভাবে রক্তের গতিপথ এক মুখী রাখিয়া নিয়ন্ত্রন করে।
Source of figure– http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory/heart-pictures.htm
চিত্র–২, একটি হৃদপিন্ডকে যে ভাবে দেখায়।
Source of figure- http://www.dummies.com/education/science/anatomy/capillaries-and-veins-returning-blood-to-the-heart/
চিত্র–৩, সমগ্র শরীরে রক্তের শিরা, উপরিরা, ও ধমনী গুলী জাল বিস্তার করে ছড়িয়ে আছে।(2)
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন–
http://www.chkdr02.wordpress.com/
Updated on- 8/28/2017
৩৪ তম পর্বের রেফারেন্স সমুহ–
- FULL HEART DIAGRAM
http://www.cdc.gov/heartdisease/about.htm
2.HEART SECTION DIADRAM
. http://en.wikipedia.org/wiki/Circulatory_system
3 Circulatory System
http://www.texasheart.org/HIC/Anatomy/
হৃদপিন্ড কী?হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে? পর্ব-৩৩(২)
বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ? তাহলে এই সিরিজ পড়ুন।
আপনারা পূর্বের পর্বে মানব দেহে হৃদপিন্ডের অবস্থান জানতে পেরেছেন।
আসলে হৃদপিন্ড কী? আর এর কাজই বা কী?
হ্যাঁ, এটা শুধু মাত্র একটা মেসিন (যন্ত্র)।
কিসের মেসিন?
এটা একটা নিছক পাম্প মেসিন মাত্র।
হৃদপিন্ড মানব দেহের রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র(CIRCULATORY SYSTEM)এর একটি প্রধান পাম্প করার অর্গান।এর কাজ শুধু আজীবন নিয়মিত ভাবে (৭২ বার/মিনিটে) পাম্প করা।আর এই সংকোচন ও সম্প্রসারনের পরিমান (VOLUME) একটা নিরোগ হৃদপিন্ডে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় একই পরিমানের হতে হবে।
ধরুন কাকেও তার সাজা হিসাবে শাস্তি দিয়ে বলা হল, তোমাকে এখন থেকে বিরামহীন ভাবে ২৪ ঘন্টা আজীবন এক হাতের মুষ্ঠি প্রতি মিনিটে ৭২ বার করে একবার খুলবে ও একবার চেপে ধরবে।এর মধ্যেই তোমার জীবন নিহিত রয়েছে। তুমি যখনি এটা বন্ধ করে দিবে সাথে সাথে তোমার মৃত্যু ঘটানো হবে।
সে কখনোই দীর্ঘক্ষন এটা করতে পারবেনা। কারন তার হাতের বা শরীরের মাংস পেশী এমন ভাবে সৃষ্ট যে এই কাজটি করতে করতে করতে তার হাতের মাংস পেশী ও মস্তিস্ক কিছক্ষন পর ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তখন তাকে কাজ বন্ধ দিতে হবে।
সেখানে হৃদপিন্ডের মাংসপেশী কীভাবে অনবরত সারাটা জীবন এই কাজটি করে যায়?
হ্যাঁ, কারণ আছে। হৃদপিন্ডের মাংস পেশী আর শরীরের অন্য জায়গার মাংস পেশীর গঠন এক নয়। এবং এর সংকোচন ও সম্প্রসারন মস্তিস্ক ও করেনা।
সেক্ষেত্রে আমাদের শরীরের মাংসপেসী হতে হৃদপিন্ডের মাংস পেশী (CARDIAC MUSCLE)
ভিন্ন ধরনের ও অনেক বেশী শক্তিশালী। এটা এমন ভাবে তৈরী যে মৃত্যু পর্যন্ত বিনা বিশ্রামে অনবরত কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
আর এর এই সংকোচন–সম্প্রসারন করার বৈদ্যুতিক শক্তিটা মস্তিস্ক হইতে সরবরাহ হয়না।
তাহলে হৃদপিন্ড কার্যপরিচালনা করতে কোথা হতে বিদ্যুত শক্তি পায়?
হ্যাঁ, হূদপিন্ড কেন্দ্রীয় বিদ্যুত কেন্দ(মস্তিস্ক)এর বিদ্যৎ সরবরাহের উপর তার এই জটিল ও গুরুত্ব পূর্ণ কাজ চালানোর জন্য পূর্ণ মাত্রায় নির্ভরশীল নয়, যদিও মস্তিস্কের HEART BEAT বাড়ানো কমানোর উপর একটা নিয়ন্ত্রন আছে।কিন্তু তার অনবরত এই সংকোচন ও সম্প্রসারনের কাজ চালাবার জন্য তার নিজস্ব অত্যন্ত শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (GENERATOR)রয়েছে। এর দ্বারাই হৃদপিন্ড তালে তালে অনবরত সংকোচন ও সম্প্রসারন হচ্চে।
এই বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের নাম SINO ATRIAL NODE (SA)। এটা হৃদপিন্ডের ডান পার্শের উপরি প্রকোষ্ঠের উপরি অংশে অবস্থিত।
এটাকে PACE MAKER ও বলে।এটা একটা জীবন্ত অথচ অত্যন্ত শক্তিশালী ব্যাটারী। যা সারা জীবন অনবরত ভাবে হৃদপিন্ডকে বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম করে তৈরী।
এটা অনবরত হৃদপিন্ড মাংসপেশীকে সঠিক ও নিয়মিত ভাবে বিদ্যুত সরবাহ করার মাধ্যমে হৃদপিন্ডকে সঠিক ভাবে পরিচালচনা করিতেছে। একই সংগে এই বিদ্যৎ আমাদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তেছে।(চিত্র–১) (১)
ELECTRO CARDIOGRAPH,(ECG) মেসিন দ্বারা এই বিদ্যুৎ প্রবাহের ধরন DETECT করে চিকিৎসক গন হৃদ পিন্ডের রোগ নির্ণয় করে থাকেন।
এ ব্যপারে পরবর্তী কোন এক পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তাহলে এবার দেখা যাক হৃদপিন্ড কী পাম্প করে? কেন প্রতিমূহুর্ত এভাবে পাম্প করে? প্রতিমূহুর্ত এভাবে পাম্প করে কাকে কী সরবরাহ করে? এভাবে সরবরাহ করার প্রয়োজনীয়তাই বা কী?
হ্যাঁ, এই প্রশ্নগুলীর উত্তর জানতে পারলেই আপনারা হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে যাবেন।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে বুঝতে কিছুটা সহজ হতে পারে।
যেমন ধরুন একজন কৃষক তার ৬০০ একর শুস্ক খরা পীড়িত জমিতে ১০০ট্রিলিয়ন ধানের চারা জন্মিয়েছে। কৃষক যদি এই চারা গুলীর বেচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের দিকে সদা সর্বদা সচেষ্ট না থাকে তাহলে কী এগুলী কখনো আপনা আপনি বেচে থাকতে পারে?
কখনই না।
কৃষককে অবশ্যই পাম্প মেসিন দ্বারা প্রতিদিন এই চারার গোড়ায় জল ও খাদ্য ও এদের বেচে থাকার সকল প্রয়োজনীয় বস্তু পৌছাইয়া দিতে হবে। আর এই চারা গুলীকে এই খাদ্য ব্যবহারের জন্য বায়ু মন্ডল হতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ও পেতে হবে। আর এদের মধ্যে উৎপাদিত অক্সিজেন ও বায়ু মন্ডলে ছাড়তে হবে।
অন্যথায় এই চারা গুলী শীঘ্রই মারা যাইবে।
অর্থাত বৃক্ষ আমাদের বেচে থাকার সহযোগিতা করতেছে, ও আমাদেরই দ্বারা উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষন করে লয়ে ভূমন্ডলের উষ্ণতা কমিয়ে ভূমন্ডল কে রক্ষা করিতেছে। আর আমরাই এই আমাদেরই মহোপকারী বন্ধুকে নিধন করে দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ধংস আনয়ন করছি।
উন্নত বিশ্বে কেহ একটি সরকারী দখলের বৃক্ষ কাটলে তার জন্য ১৫ বছরের জেল খাটার নিশ্চিত ব্যবস্থা রয়েছে। আর আমাদের দেশে? বনের পর বন উজাড় হয়ে গেলেও তা দেখার কেহ থাকেনা।
এখানে বৃক্ষ ও মানুষের মধ্যে একটা বিষয় পার্থক্য আছে, যেমন আমাদের বেচে থাকার জন্য প্রতিটা কোষের অক্সিজেন প্রয়োজন, আর একই সংগে প্রতিটা কোষে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইড পরিত্যাগ করার প্রয়োজন, আর বৃক্ষাদির ক্ষেত্রে ঠিক এর বিপরীত।
আর বৃক্ষ এই কাজটি সরাসরি বায়ুমন্ডলের সংস্পষে করতে সক্ষম। বৃক্ষ এ ভাবেই সৃষ্ট।
কিন্তু আমাদের সৃষ্টি পদ্ধতি আরো জটিল হওয়ার কারনে, আমাদের কোষ গুলী বায়ুমন্ডল হতে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহন করতে ও বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাই পরিত্যাগ করতে সক্ষম নয়।
তাহলে আমাদের শরীরের কোষ গুলী কীভাবে এই বায়ুমন্ডলীয় কাজ্ সমাধান করে?
হ্যাঁ, হৃদপিন্ডই এই কাজটি অর্থাত প্রতিটা কোষে খাদ্য, পানীয়,অক্সিজেন ইত্যাদি রক্ত সষ্ণালন প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে করে থাকে।
হৃদপিন্ডের দু পার্শে অবস্থিত দুইটি ফুসফুস রক্ত হতে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিয়ে রক্তে অক্সিজেন মিশ্রিত করে দেয়।(চিত্র–২)
এখানে আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করুন।
কৃষকের পাম্প মেসিনটা শুধু জল পাম্প করে দিলেই ৬০০ ট্রিলিয়ন চারায় সমান ভাবে জল পৌছায় না। এর জন্য পাম্প মেসিন হতে জল প্রতিটা চারার গোড়ায় সমান ভাবে পৌছানোর জন্য অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পাইপ বা নল লাগাতে হবে।
তাহলে কী করতে হবে?
পাম্প মেসিন টিকে ৬০০ একর জমির মধ্যখানে বসাতে হবে। পাইপ থেকে পাম্পের দ্বারা বেরিয়ে আসা সবটুক জল সর্ব প্রথমে একটা সবচাইতে মোটা পাইপে ঢুকতে হবে।এরপর ১০০ ট্রিলিয়ন চারার প্রত্যেকটির গোড়ায় জল ও খাদ্য বস্তু সুসম ভাবে পৌছে দিতে হবে। এই কাজটি করার জন্য এই মোটা পাইপ টাকে ক্রমান্বয়ে শাখা প্রশাখায় বিভক্ত ও সরু করে করে প্রতিটা চারার গোড়ায় পৌছাতে হবে।
এভাবে এত সূক্ষ্ম সরু নল তৈরী করে প্রতিটা চারা পর্যন্ত নল পৌছানোটা যে এক প্রকার অত্যধিক উন্নত প্রযুক্তির দরকার তা নিশচয়ই অনুভব করতে পারছেন।
আর এটা তো করতেই হবে, নইলে তো চারা বাচবেনা।
এ করা ছাড়া অন্য কোন ম্যাজিক বা মন্ত্র তন্ত্রের দ্বারা চারা বাচানো যাবেনা। (2,3)
(চিত্র–২ দেখুন)
এতক্ষনে তাহলে কিছুটা অনুমান করতে পেরেছেন, যে আমাদের হৃদপিন্ডটিও ঠিক ঐ কৃষকের ক্ষেতের পাম্প মেসিনটির মত প্রতি মিনিটে ৭২ বার প্রচন্ড শক্তি শক্তি প্রয়োগ এর মাধ্যমে সংকোচন করে পাম্প করে করে তার সংগে সংযুক্ত ধমনী (ARTERY)এর মধ্য দিয়ে অসংখ্য শাখা প্রশাখার মধ্য দিয়ে যা ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে হয়ে আমাদের শরীরের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের প্রত্যেকটি কোষে রক্ত সঞ্চালন করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জীবিত রাখার উপাদান, যেমন, খাদ্য,পানীয়, অক্সিজেন, হরমোন ইত্যাদি সরবরাহ করিয়া কোষ গুলী তথা আমাদেরকে জীবিত রাখিতেছে।
হৃদপিন্ড রক্ত সঞ্চালন করার জন্য ১ নং অর্গান হইলেও সে নিজে নিজে একাই তার এই উদ্যেশ্য সম্পাদন করতে পারেনা।
তার এই কাজ পরিচালনা করতে আর কোন কোন বস্তু কে কাজ করতে হয়?
তার এই কাজে সয়ায়তা করে, যেমন–
১) বুকের দুই পার্শের দুইটা ফুসফুস–এরা নিষ্বাসের সময় বায়ুমন্ডল হতে অক্সিজেন ধমনীর (ARTERY) রক্তে মিশিয়ে দেয় ও কোষের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া ক্ষতিকর পদার্থ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস যা শিরায় (VEIN)মিশ্রিত করে দেয়, সেটাকে প্রস্বাসের সংগে বাইরে বায়ু মন্ডলে বের করে দেয়।
২) ধমনী (ARTERY) নেট ওয়ার্ক– এর মাধ্যমে হৃদপিন্ড, ফুসফুস হতে সংগৃহিত অক্সিজন সহ অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান সমগ্র কোষ কে সরবরাহ করে।
৩) শিরা (VEIN)- কোষের মধ্যে জৈব ক্রীয়া চলা কালে ঊৎপন্ন হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড শিরার রক্তের মধ্যে মিশে যায়।একারনে শিরা গুলী দেখতে কালো দেখায়।হৃদপিন্ড যখন প্রসারিত হয় তখন এই শিরার রক্ত হৃদ পিন্ডের ডান পার্শের প্রকোষ্ঠে চলে আসে।(2,3)
এরপর হৃদপিন্ড সংকোচন করলে, এই কার্বন ডাই অক্সাই মিশ্রিত রক্ত একটি রক্ত নালী (PULMONARY ARTERY) এর মধ্য দিয়া ফুসফুসে প্রেরন করে দেয়।ফুসফুস তখন এই কার্বন ডাই অক্সাইড প্রস্বাষের মাধ্যমে বাইরের বায়ুমন্ডলে বের করে দেয় ও বায়ুমন্ডল হতে নিস্বাষের মাধ্যমে এই রক্তে অক্সিজেন মিশিয়ে দেয়।(3)
হৃদপিন্ড সম্প্রসারিত হলে তখন একটি রক্তনালী (PULMONARY VEIN) এর মধ্য এই অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত হৃদ পিন্ডের বাম পার্শের প্রকোষ্ঠে চলে আসে, বাম পার্শের প্রকোষ্ঠ হতে, হৃদপিন্ডের সংকোচনের সময় একটি মোটা ধমনী (AORTA) এর মাধ্যমে এই রক্ত শরীরের সমগ্য কোষে সরবরাহ করে দেয়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে হৃদপিন্ড ঠিক ঐ কাজটিই করে যে কাজটি কৃষকের পাম্প মেসিন টি করে।
এ ছাড়া হৃদপিন্ডের আর কোনই কাজ নাই।
এইভাবে হৃদপিন্ড অনবরত রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের কোষ গুলীতে রক্তের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য, অক্সিজেন(যা ফুসফুসের মাধ্যমে বায়ুমন্ডল হতে সংগ্রহ করে ও অন্যান্য জটিল রাসায়নিক পদার্থ যেমন বিভিন্ন ধরনের হরমোন ইত্যাদি পাম্প করে আমাদের শরীরের প্রতিটা কোষে পৌছে কোষ কে তথা আমাদেরকে জীবন্ত রাখে।
একজন জীবিত ব্যক্তির হৃদপিন্ডের এই অনবরত সম্প্রসারন ও সংকোচন STETHOSCOPE বুকে লাগিয়ে আমরা লাব–ডাপ শব্দ আকারে শুনতে পাই, আবার হাতের ও শরীরের আরো কিছু কিছু যায়গায় টিপে ধরে PULSE আকারে অনুভব করতে পারি।
এক জন মৃত ব্যক্তির হৃদপিন্ডে কখনোই এই শব্দ শোনা অথবা PULSE অনুভব করা যাবেনা।
এ কারণে একজন অজ্ঞান ব্যক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে তার হৃদপিন্ড ও ফুসফুস চালু রেখে কোষকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে তার বার্ধক্য এসে স্বভাবিক মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল জীবিত রাখা সম্ভব।
রক্ত সষ্ণালন পদ্ধতি পরবর্তি পর্বে আরো পরিস্কার করা হবে।
Source of figure- http://www.beltina.org/health-dictionary/atrioventricular-av-node.html
চিত্র–১, হৃদপিন্ডের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (GENERATOR) SA NODE , AV NODE ও বিদ্যুত প্রবাহের তার সমূহ A-V BUNDLE BRANCH, LEFT BUNDLE BRANCH,RT BUNDLE BRANCH PURKINJI FIBERS সমগ্র হৃদপিন্ডের প্রতিটা মাংস পেশীর মধ্যে বিস্তারিত রয়েছে।(1)SA NODE বিদ্যুৎ উৎপাদন করে AV NODE কে উত্তেজিত করে দেয়। তখন AV NODE, AV BUNDLE এর মধ্য দিয়ে LEFT BUNDLE BRANCH,RT BUNDLE BRANCH ও PURKINJI FIBERS এর মধ্য দিয়ে হৃদপিন্ডের প্রতিটা মাংস পেশীতে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে দেয়।
এই ফাইবার (আঁস) গুলী বিদ্যুৎ প্রবাহের তার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।(1)
Source of figure-http://droualb.faculty.mjc.edu/Course%20Materials/Elementary%20Anatomy%20and%20Physiology%2050/Lecture%20outlines/respiratory%20system.htm
চিত্র–২, লক্ষ করুন বুকের মধ্যখানে ২ টি ফুসফুসের মাঝ খানে হৃদপিন্ড অবস্থিত।আর এই হৃদপিন্ডের ডান পার্শের নিম্ন প্রকোষ্ঠ হতে (LEFT VENTRICLE) হতে ধমনী গূলী (ARTERY)(লাল রংএর) বেরিয়ে শরীরের শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হইয়া শরীরের প্রতিটা কোষকে বাচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহ করতেছে।
আর শিরাগুলী (VEIN) (নীল রংএর)শরীরের সমগ্র কোষ হতে কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত রক্ত বহন করে হৃদপিন্ডের ডান পার্শের উপরের প্রকোষ্ঠে (RIGHT ATRIUM)এ আনতেছে।(2)
আগের পর্ব সমূহ–
https://chkdr02.wordpress.com/
UPDATED 0N-8/24/2017
৩৩ তম পর্বের সূত্র সমূহ–
- PACE MAKER
http://www.beltina.org/health-dictionary/atrioventricular-av-node.html
2 Circulatory System
http://www.texasheart.org/HIC/Anatomy/
- Wikipedia
http://en.wikipedia.org/wiki/Human_heart
হৃদপিন্ড কী? হৃদপিন্ডের গঠন, পর্ব-৩২(১)
হৃদপিন্ড কী? হৃদপিন্ডের গঠন, পর্ব–৩২(১)
কবি বলেন “ আমার বুকের মধ্যখানে মন যেখানে হৃদয় যেখানে।
সেই খানে আমাকে রেখ, আর কোথাও যাবনা জীবনে।”
কথাটা কী সঠিক?
মোটেই সঠিক নয়। বুকের মাঝখানে বা মধ্যখানে এমন কোন অর্গান ই নাই যা দিয়ে,কেউ কাকেও সেখানে ধরে রাখতে পারে।
মানুষের বুকের মাঝখানে বা মধ্যখানে হৃদপিন্ড (HEART)অবস্থিত। তাহলে সত্যিই কী বুকের মধ্যখানে হৃদয় বা মন অবস্থিত? যার দ্বারা আমরা মন মানসিকতার কাজ যেমন ভালবাসা,,ঘৃনা,সন্দেহ, রাগ,বিশ্বাষ, অবিশ্বাষ ইত্যাদি করতে পারি?
মোটেই নয়। হৃদপিন্ড কখনোই মন মানসিকতার কাজ করতে পারেনা।
মন–মানসিকতার কাজ করতে সক্ষম একমাত্র মস্তিস্ক।
কবিদের ঐ ধারনা সম্ভবতঃ মানব দেহ বিজ্ঞান (ANATOMY, PHYSIOLOGY) আবিস্কৃত হওয়ার পূর্বে কবিদের কলপনা হতে এসেছে। বাস্তবের সংগে এর কোনই মিল নাই।
তাহলে আসুন এই গুরুত্বপূর্ণ অর্গান HEART (হৃদপিন্ড) সম্পর্কে আমরা কিছু জানি।
হৃদপিন্ডের কাজ কখন আরম্ভ হয়?
ভ্রনের ৬ সপ্তাহ কাল হতে হৃপিন্ডের শব্দ শোনা যায়।(২)(চিত্র–১) । এবং মৃত্যুর পৃর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত দিবা রাত্র কখনোই এক মুহূর্ত বিশ্রাম নাই।আমাদের বাচিয়ে রাখার জন্য একে অনবরত কাজ চালিয়ে যেতে হয়। ম্যাজিকের মত এমন কোন ব্যবস্থা সম্ভব নয় যে হৃদপিন্ড স্তব্ধ থাকবে আর একই সংগে আমরা জীবিত থাকব।
হৃদপিন্ডের কিছু সাধারণ গুনাবলী
হৃদপিন্ডের ওজন প্রায় ২০০–৪২৫ গ্রাম। আকারে আমাদের হাতের মুষ্ঠি হতে একটু বড়। প্রতিদিন এটা প্রায় ১০০,০০০ বার বিট (সংকোচন–সম্প্রসারণ) দিয়ে থাকে ও প্রায় ৭৫৭১ লিটার রক্ত পাম্প করে থাকে।সারা জীবন ভর প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বার বিট দিয়ে থাকে।প্রতি মনিটে ৭২ বার বিট দেয়(৩)
শরীরের বহি আবরণের সংগে হৃদপিন্ডের সম্পর্ক (SURFACE ANATOMY) দেখতে চিত্র–২ দেখুন। (১)
হৃদপিন্ডের অবস্থান
হৃদপিন্ড টি বুকের সম্মখের হাড্ডি (STERNUM)এর পিছনে বাম পার্শে একটু বেশী অংশ সহ বুকের মধ্যখানে দুই ফুস ফুসের মাঝে ডায়াফ্রামের(যে পর্দা বুক ও পেটকে পৃথক করে রাখে) উপরে মেরুদন্ডের সম্মুখে অবস্থান করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বুকের মধ্যখানের এই অঞ্চলটাকে MEDIASTINUM বলে। এখানে হৃদপিন্ড, বড় বড় শিরা, ধমনী, গ্লান্ড ইত্যাদি আছে।
এটা একটা ভাজ করা পর্দার আবরণে ঢাকা থাকে। এর নাম PERICARDIUM।এর একটি ভাজ হৃদপিন্ডের মাংসের সংগে আটানো থাকে একে বলা হয় EPICARDIUM।
PERICARDIUM এর দুই ভাজের মাঝে একটা পিচ্ছিল তরল পদার্থ (SEROUS FLUID) বিরাজ করে যা হৃদপিন্ড এর সংকোচন–সম্প্রসারণ কে সহায়তা করে।(২)
হৃদপিন্ডের গঠন
হৃদপিন্ডের প্রাচীর ৩টি লেয়ারে গঠিত, এগুলী বাহির দিক হতে –
১) EPICARDIUM- এটা PERICARDIUM এর ভিতরের স্তর যা হৃদপিন্ডের মাংস পেশীকে আচ্ছাদিত করে রাখে। এই খানে কোন জীবানু সংক্রমন হলে তাকে PERICARDITIS বলা হয়।তখন PERICARDIUM এর দুই আবরনের মধ্যে পানি জমে যায়।
২) MYOCARDIUM- এই স্তর টি হৃদপিন্ডের মাংস পেশী দ্বারা তৈরী। এখানে কোন জীবানু সংক্রমন হলে তাকে MYOCARDITIS বলা হয়।
৩) ENDOCARDIUM- সবচেয়ে আভ্যন্তরীন EPITHELIUM কোষের স্তর। এই স্তরের উপর শরীরের সমস্ত রক্ত পাম্প হয়।
এখানে কোন জীবানু সংক্রমন হলে তাকে ENDOCARDITIS বলে।(2)
চলতে থাকবে–সংগে থাকুন।
চিত্র–১, ৬ সপ্তাহের ভ্রুণ এরুপ থাকা অবস্থায় হৃদপিন্ডের বিট আরম্ভ হয়।(২)
Source of figure- http://www.baby2see.com/development/week6.html
চিত্র–২, এখানে দেখতে পারেন হৃদপিন্ড আমাদের শরীরের বহি আবরনের কোন লেভেলে আছে বা একে SUFACE ANATOMY বলে।(১)
Source of figure- http://www.med.umich.edu/lrc/coursepages/m1/anatomy2010/html/surface/thorax/hsounds.html
চিত্র–৩, এই চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন, হৃদপিন্ড কীভাবে সমস্ত শরীরে রক্ত সরবরাহ করে।(৬)
Source of figure- http://www.texasheart.org/HIC/Anatomy/
Updated on-8/18/2017
পূর্বের পর্ব গুলী এখানে দেখুন- https://chkdr02.wordpress.com/
৩২ তম পর্বের সূত্র সমূহ–
1 Surface anatomy of heart
http://www.med.umich.edu/lrc/coursepages/m1/anatomy2010/html/surface/thorax/hsounds.html
2 When heart starts beating
http://www.baby2see.com/development/week6.html
3 Heart Anatomy-
http://www.texasheartinstitute.org/HIC/Anatomy/anatomy2.cfm
4 Wikipedia
http://en.wikipedia.org/wiki/Human_heart
5 Heart diseases-
http://www.webmd.com/heart/picture-of-the-heart
6 Circulatory System
http://www.texasheart.org/HIC/Anatomy/