Archive | CLONING RSS for this section

“ডলি” কে যে ভাবে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম পদ্ধতিতে CLONING(কপি) করে উৎপাদন করলেন। ২০ তম পর্ব।

“ডলি” কে যে ভাবে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমপদ্ধতিতেCLONING (কপি) করেউৎপাদনকরলেন।২০তমপর্ব

DOLLY (SHIP)

1

Figure source- http://www.lifeofguangzhou.com/node_981/node_989/node_994/node_1024/2011/03/31/130154109886258.shtml

চিত্র, Sir Ian Wilmut তাদেরকৃত্রিমউপায়েউৎপাদিতডলি ( স্ত্রীভেড়া)

জন্ম-৭ই জুলাই, ১৯৪৪, Hampton Lucy, England,(EMBRYOLOGIST).

এই পর্বটি ভাল ভাবে বুঝার জন্য ১৫ তম পর্বটি আর একবার পড়ে নিলে এটা বুঝতে সহজ হবে।

১৫ তম পর্বটির সংগে এই পর্বটি সরাসরি সম্পর্কিত।

সেখানে Sir John B. Gurdon ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচির উপর একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত করে পুনরায় হুবহু নুতন ব্যাঙাচি ও ব্যাঙ তৈরী করা যায়।  (PLURIPOTENT STEM কোষ কী? বিস্তারিত জানতে ১৪ তম পর্ব দেখুন)

এর উপর তিনি ২০১২ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এটা আপনারা ১৫ তম পর্ব পড়ে

বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

Sir John B. Gurdon এরপর আর কোন স্তন্যপায়ী প্রানীর উপর এ পরীক্ষা করেন নাই।

তবে তারই  আবিস্কৃত পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে,১৯৯৬ সনের ৫ই জুলাই, ROSLIN INSTITUTE এ সর্বপ্রথম Sir Ian Wilmut , Keith Campbell  ও EDINBURGH ইউনিভার্সিটির অন্যান্য সহযোগিরা ডলি” নামক স্ত্রী ভেড়াকে উৎপাদন করিয়া বিশ্বে সাড়া জাগিয়ে ফেলেন। (উপরে তাদের চিত্র-১ দেখুন)

বিশ্বে এইটাই ছিল সব চাইতে বিখ্যাত ভেড়া। সমস্ত মিডিয়াতে এটা অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ফলাও করে স্বাড়ম্বরে প্রচার করেছিল। আপনারা কেহ কেহ তা হয়তো দেখেওছিলেন।

ডলি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৬টা বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল।

ডলি ফুসফুস সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬ বৎসর বয়সে ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০০৩ সালে।(১)

ডলির উৎপাদন কৌশল-

 

2

Figure source-https://scholarblogs.emory.edu/philosophy316/2014/01/27/the-hype-about-dolly/

চিত্র-২,

যে ভাবে ডলিকে উৎপাদন করা হয়ে ছিল।

উপরে চিত্র -২ লক্ষ করুন।

১।

ধরুন সর্বোপরি বামের স্ত্রী ভেড়াটির নাম “A”। A ভেড়াটির স্তন কোষ হতে একটি কোষ সংগ্রহ করিয়া তার থেকে তার নিউক্লিয়াছ সংগ্রহ করা হয়। এই নিউক্লিয়াছটির মধ্যের ক্রোমোজোম টাই ভাবী উৎপাদিত “ডলি” নামক শিশু ভেড়াটির  ক্রোমোজোম হইবে। আর যেহেতু A ভেড়াটির CHROMOSOME এর দ্বারা শিশু ভেড়াটি উৎপন্ন করা হইবে তাই শিশু ভেড়াটি এই A ভেড়াটির CLONE (কপি) কৃত ভেড়াটি GENETICALLY  হুবহু একই রুপ হইবে।

কিন্ত এটা একটা পূর্ণ বয়স্ক বিশেষায়িত (DIFFERENTIATED) কোষের ক্রোমোজোম।

পূর্বে ধারনা করা হইত, পূর্ণ বয়স্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোমকে BACK GEAR করে ভ্রুণের প্রারম্ভিক TOTI POTENT STEM কোষে ফিরিয়ে লওয়া সম্ভব নয়।

TOTIPOTENT STEM কোষ ঐ সমস্ত কোষকে বলা হয়, যে কোষগুলী ভ্রনের জন্মের ৪-৫ দিন পর্যন্ত থাকে, যার থেকে শিশুর বৃদ্ধির সংগে সংগে সমস্ত বিশেষায়িত কোষ, যেমন ,ফুল (PLACENTA), অস্থিকোষ, স্নায়ুকোষ , হৃদপিন্ড কোষ,লিভার কোষ, পেশী কোষ, ইত্যাদি রকমের অন্ততঃ ২২০ রকমের বিশেষায়িত কোষ উৎপন্ন হয়ে থাকে। (TOTIPOTENT STEM কোষ কী? বিস্তারিত জানতে ১৪ তম পর্ব দেখুন)

কিন্তু Sir John B. Gurdon  ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রমান করিয়ে দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে একটা পুর্ণ বয়স্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজমকে, একটি ডিম্বকোষের নিউক্লিয়াছ কে বের করে ফেলে, তার মধ্যে ঐ বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোম সহ নিউক্লিয়াছকে স্থাপন করিয়া, অন্য কারো জরায়ূতে স্থাপন করিয়া দিলে, তখন এটা TOTIPOTENT বা PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হয়ে,ভ্রুণটি সম্পূর্ণ একটা নূতন শিশু হিসাবে জন্মাতে থাকে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ১৫ তম পর্ব দেখুন)।

২)চিত্রে লক্ষ করুন, A স্ত্রী ভেড়াটির ঠিক নীচের এবং মাঝের স্ত্রী ভেড়াটির দিকে। এই ভেড়াটির নাম ধরুন “B”. এবার এই B ভেড়াটির ডিম্বাশয় হতে একটা ডিম্বকোষ সংগ্রহ করিয়া সেই ডিম্বকোষের নিউক্লীয়াছ (CHROMOSOME সমেত) বের করে ফেলা হল। এই ডিম্ব কোষটির এখন শুধুমাত্র ছাইটোপ্লাজম (নিউক্লিয়াছ ছাড়া) রহিল।

৩) এবার A ভেড়ার স্তন হতে সংগৃহিত কোষের নিউক্লীয়াছকে, B ভেড়া হতে সংগৃহিত ডিম্বকোষ (যার নিউক্লীয়াছ ইতিপূর্বে বের করে ফেলা হয়েছে) একত্রে রেখে বৈদ্যুতিক সক এর দ্বারা মিশিয়ে FERTILIZED (নিষিক্ত) করা হল। এই  FERTILIZED (ZYGOTE) কোষটি বিভাজন হতে হতে ৬-৮ টা কোষে পরিণত হল। এরা TOTIPOTENT STEM কোষ। এই নব TOTIPOTENT STEM কোষ উপযুক্ত পরিবেশ (জরায়ুর অভ্যন্তর) পেলেই একটা নব- জন্ম প্রাণী উৎপন্ন করতে সক্ষম। (চিত্র-২ এর ডান দিকে দেখুন)

৪)এবার সর্ব নিম্নের সারির ডান দিকের বড় স্ত্রী ভেড়াটির দিকে লক্ষ করুন। এই ভেড়াটির নাম দিন “C”।

এই স্ত্রী ভেড়াটিকে SURROGATE MOTHER বা অন্যের ভ্রুণ-গর্ভ ধারক মাতা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এবার পুর্বের উৎপাদিত ভ্রুণকে  (যা ৬-৮ টা কোষে ইতিমধ্যে বিভাজিত হয়েছে) C ভেড়ার জরায়ুতে ইনজেক্ট করিয়া স্থাপন করা হইল।

পদ্ধতি সমাপ্ত।

এবার লক্ষ করুন , নীচের  সারির বায়ে ছোট স্ত্রী ভেড়াটার দিকে।  এই ভেড়াটাই যথা সময়ে C ভেড়ার গর্ভ হতে জন্ম লওয়া আমাদের সেই বিশ্ব বিখ্যাত “ডলি” নামের স্ত্রী ভেড়াটি।

আশা করি বিষয়টি আপনাদের নিকট পরিস্কার হয়েছে। (১-৩)

এটা  কৃত্রিম উপায়ে CLONING (প্রাণীকে কপি করার) পদ্ধতির  একটা পদ্ধতি, যার পথপ্রদর্শক হচ্ছেন বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon.(১৫ তম পর্ব দেখুন)।

ঠিক এভাবেই আপনি নিজেকে অথবা আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরণীর বুকে রেখে দিতে পারেন। কিন্তু মানব জাতি CLONING বা কপি করা আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ।

এটা নিষিদ্ধ করা না হলে আমরা এতদিনে আমাদের সমাজে অসংখ্য কপিকৃত-মানব দেখতে পেতাম। আপনি ইচ্ছা করলে দেখতে পেতেন আপনারই হুবহু রুপের আর একজন মানুষকে। কী মজা হইতো, তাই নয়কী?

এবার দেখা যাক এই পদ্ধতিটা কতটুকু নিরঙ্কুস।

এই পদ্ধতি কী সম্পুর্ণ সমস্যা মুক্ত?

উত্তর-“না”

এতে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে ও একেবারে নিরঙ্কুস ও নয়।। যেমন ধরুন উৎপাদিত শিশু ডলি হুবহু A ভেড়ার CHROMOSOME পেয়ে ঠিক যেমনটা হুবহু তারমত হয়ে নব জন্ম নিয়েছে, ঠিক তেমনই একই সংগে ডলি, A ভেড়াটির DNA এর TELOMERE হতে অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়া বয়সটিও, ডলির নিজের DNA তে লয়ে জন্মেছে।

অন্য ভাবে, ডলি জন্মের দিক দিয়ে নব-জন্ম হইলেও বয়সের দিকদিয়ে সে, A ভেড়াটির TELOMERE এর ক্ষয় প্রাপ্ত বয়সের পর অবশিষ্ট থাকা বয়সের সম পরিমান TELOMERE ও তার আনুপাতিক বয়স বা আয়ু সংগে লয়ে জন্ম গ্রহন করেছে।

এই কারনেই ডলিকে ৬ বছর বয়সে অগ্রিম মৃত্যু বরন করতে হয়েছে। ভেড়ার পূর্ণ বয়স ১২ বৎসর। A ভেড়াটির ৬ বছর বয়সের সময় CHROMOSOME লয়ে ডলিকে CLONE করা হয়েছিল।

তাহলে তার আর আয়ু থাকল ১২-৬=৬ বৎসর।

ঠিক ডলিও সেভাবে ৬ বৎসর আয়ু লয়ে ৬ বছরের মধ্যেই অগ্রিম বয়োবৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেছে।

এ পদ্ধতিটাকে এ ভাবে তুলনা করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে ট্রেন ও বাস চলাচলের জন্য ১২ দিন মেয়াদী একটা UNLIMITED মেট্রকার্ড ক্রয় করলেন। ক্রয় করার দিন হতে ঠিক ১২ দিন পর্যন্ত আপনি যতবার খুশী ট্রেন-বাস ভ্রমন করতে পারবেন।

৬দিন গত হওয়ার পর আপনার ঐ কার্ডটি আপনার সন্তানকে চলাচল করার জন্য তার হাতে তুলে দিলেন। এক্ষেত্রে ঐ কার্ডটির আয়ুস্কাল অবশিষ্ট ৬ দিন থাকার কারনে, আপনার সন্তান ও ঐ কার্ড দ্বারা অবশিষ্ট ৬ দিন ই মাত্র চলতে পারবে। কারণ ঐ কার্ডের ব্যবহার কারী যেই হউকনা কেন,তার আয়ুস্কাল কার্ডের মধ্যে পুর্ব হতেই নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।

এখানেও ঠিক তদ্রুপ ঘটনা ঘটেছে। ডলি, A ভেড়াটি হতে ৬ বৎসর গত হওয়া, ও অবশাষ্ট ৬ বৎসর আয়ু থাকা ডিএনএ ব্যবহার করে জীবন শুরু করেছিল। তাই সে ৬ বৎসরের মধ্যেই তার বার্ধক্য এসে মৃত্যু এসে যায়।

কী ভাবে ডলির আয়ু নির্দ্ধারিত হল?

আমাদের আয়ু অতিক্রম করার সংগে সংগে ঘড়ির কাটার মত আমাদের DNA প্রান্তের TELOMERE ও ক্ষয় হতে থাকে। যেহেতু ডলির সৃষ্টি হয়েছে TELOMERE ক্ষয় প্রাপ্ত DNA দ্বারা, তাই তাকে জন্ম হতেই ক্ষয় প্রাপ্ত TELOMERE লয়েই জন্মাতে হয়েছে। (TELOMERE এর সংগে আমাদের সরাসরি আয়ুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে  পর্ব-৫ পড়ুন)

আরো একটা পশ্ন থেকে যায়।

ডলি কী নিরঙ্কুস ভাবে ১০০%  “A” ভেড়াটির CHROMOSOME লয়ে CLONE (কপি) হয়েছে?

উত্তর- না।

কারন, লক্ষ করুন, ডলি A ভেড়াটির শুধুমাত্র কোষের নিউক্লীয়াছ এর ১০০% CHROMOSOME ঠিকই লয়েছে। কিন্তু কোষের মধ্যে নিউক্লীয়াছের বাইরে ছাইটোপ্লাজমে কিছু কিছু MITOCHONDRIAL DNA ও থেকে যায়, সেইটা ডলি A ভেড়া হতে পায় নাই। (MITOCHONDRIAL DNA কী, তা জানতে ৯ম পর্ব পড়ুন)

যেহেতু ডলি B ভেড়ার ডিম্ব কোষ হতে সাইটোপ্লাজম গ্রহণ করেছে ,তাই তার MITOCHONDRIAL DNA ও B ভেড়া হতে এসেছে।

ডলি এভাবে ঠিক A ভেড়ার ১০০%  জেনেটিক কপি না হয়ে সামান্য কিছুটা B ভেড়াটার MITOCHONDRIAL DNA এর ও জেনেটিক কপি  হয়েছে।

আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। (১)

অন্যান্য পর্ব গুলী পড়তে এখনে ক্লিক করুন-    www.chkdr02.wordpress.com

Updated on- 6/25/2016

 

২0 তম পর্বের সূত্র সমূহ-

DOLLY (THE SHEEP)

১)http://en.wikipedia.org/wiki/Dolly_(sheep)

CLONING

২) http://en.wikipedia.org/wiki/Cloning

৩)  Sir Ian Wilmut

http://www.lifeofguangzhou.com/node_981/node_989/node_994/node_1024/2011/03/31/130154109886258.shtml

 

যখন টেষ্ট টিউবে শিশুকে জন্মানো হয় (IVF)। ১৯ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১০ এর নোবেল বিজয়ী।

১৯ তম পর্ব। যখন টেষ্ট টিউবে শিশুকে জন্মানো হয়। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১০ এর নোবেল বিজয়ী।

যখন টেষ্ট টিউবে শিশুকে জন্মানো হয় (IVF)। ১৯ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১০ এর নোবেল বিজয়ী।

1

Figure source- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2010/

চিত্র-১

Robert G. Edwards

জন্ম: ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯২৫, Batley, United Kingdom

মৃত্যু: ১০ এপ্রিল  ২০১৩, Cambridge, United Kingdom

Robert G. Edwards ২০১০ সালে মেডিসিন এর উপর নোবেল বিজয়ী হন, টেস্ট টিউব এর মধ্যে শিশুর জন্ম পদ্ধতি আবিস্কারের উপর।  (১)

এই পদ্ধতিকে IVF (IN-VITRO FERTILIZATION) বলে। এর অর্থ শরীর (জরায়ু) এর বাইরে ডিম্ব নিষিক্ত করন।

জী হা, বর্তমানে একটি বিরাট সংখ্যক শিশু টেষ্ট টিউবে জন্ম নিয়ে থাকে। কিন্তু টেষ্ট টিউবে শিশুর জন্ম বুঝতে হলে আগে শিশুর প্রাকৃতিক জন্ম পদ্ধতিটা একটু জানার দরকার আছে।

এজন্য নীচের চিত্রটি একটু দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কী ভাবে একটি শিশু জন্ম লচ্ছে।

2

Figure source- http://www.medindia.net/surgicalprocedures/tubectomy_print.htm

চিত্র-২

উপরের ২নং চিত্রে দেখানো হয়েছে কী ভাবে স্বাভাবিক প্রদ্ধতিতে জরায়ূতে একটি পুরুষ প্রজনন কোষ (SPERMATOZOA) একটি স্ত্রী প্রজনন কোষকে (OOCYTE)  জরায়ুর (UTERUS) এর FALLOPIAN TUBE এর FUNDUS নামক প্রশস্ত স্থানে, নিষিক্ত (FERTILIZED) করিয়া ,শিশুর  সর্ব প্রথম ZYGOTE নামক কোষটি  জন্ম দিচ্ছে।  এরপর এই ZYGOTE টি বিভাজিত হতে হতে FALLOPIAN TUBE এর মধ্য দিয়ে জরায়ুতে পৌছে যায়। তারপর জরায়ু গাত্রে শিকড় গেড়ে, ক্রমান্বয়ে শিশুটি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর ৯ মাস ১০ দিন পর শিশুটি জন্ম লয়।

এটা একটু বিস্তারিত জানতে ১৪ তম পর্বটি আর একবার পড়ে লউন।

3

Figure source- https://mannatfertility.wordpress.com/tag/test-tube-baby-procedure/

চিত্র-৩

এই চিত্রে টেষ্টটিউব এর ব্যবহার দেখানো হয়েছে।

4

Figure source-   http://pgdfrantz.blogspot.com/

চিত্র-৪,

এখানে পেট্রিডিস এর ব্যবহার দেখানো হয়েছে।

চিত্র-৩ ও ৪, এখানে দেখানো হয়েছে, কীভাবে স্ত্রী প্রজনন কোষকে একটি পেট্রিডিস বা টেষ্টটিউব এর মধ্যে পুরুষ প্রজনন কোষ দ্বারা নিষিক্ত (FERTILIZED) করা হচ্ছে ও তারপর ZYGOTE টি বিভাজিত হওয়ার পর সিরিঞ্জ দ্বারা কোষগুলী জরায়ুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পদ্ধতি

উপরে চিত্র দেখুন-

১. ডিম্বাশয়ের (OVARY) ডিম্বকে FSH হরমোন ইনজেকশন করে উত্তেজিত করে একাধিক ডিম্বকোষ উৎপাদন করা হয়। (২)

২. একটি টেষ্টটিউবে (বা পেট্রিডিসে) NUTRITION BROTH (এক ধরনের কালচার মেডিয়া) পূর্ব হতে তৈরী করে রাখা হয়। সিরিঞ্জ দ্বারা ডিম্বাশয় হতে ডিম্ব সংগ্রহ করিয়া পেট্রিডিস বা টেষ্ট টিউব এর মধ্যে ঢুকানো হয়।

৩. এবার এই পেট্রিডিসে বা টেষ্টটিউবে পূর্ব হতে সংগৃহিত ও সংরক্ষিত পুরুষ প্রজনন কোষ (SPERM) সিরিঞ্জ দ্বারা ঢুকিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

৪. পেট্রিডিসে বা টেষ্টটিউবে স্ত্রী প্রজনন কোষ SPERM দ্বারা নিষিক্ত ( FERTILIZED) হয়ে  একটি এক কোষী ZYGOTE এ পরিণত হয়ে যায়।

৫. এবার এই এক কোষী ZYGOTE নামক ভ্রুণটি MITOTIC পদ্ধতি তে বিভাজন হতে থাকে। (MITOTIC কী ৭ম পর্ব দেখুন)।

৬. এই ভ্রুণ কোষ গুলী সংখ্যায় ৮ টায় পৌছে গেলে, তখন এগুলীকে সিরিঞ্জ দ্বারা জরায়ূর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। (২)

এরপর এই পেট্রিডিসে বা  টেষ্ট টিউবে জন্ম লওয়া ভ্রুনটি জরায়ুতে স্বাভাবিক ভাবে বর্ধিত হতে থাকে ও ভুমিষ্ঠ হয়।

এই শিশুটাকেই বলা হয় টেষ্ট টিউব শিশু।(২)

IVF এর প্রয়োজনীয়তা কী?

বন্ধা যুগলদের সন্তান প্রদান করাই এর উদ্যেশ্য। ১০% যুগলদের বন্ধা হতে দেখা যায়। এরা জরায়ুর অভ্যন্তরে স্ত্রী প্রজনন কোষকে নিষিক্ত করতে সক্ষম হননা। তাদের জন্য IVF পদ্ধতি পূর্ণ মাত্রায় সফল পদ্ধতি।

ভ্রুণটির কোষ জ্বীনগত কোন সমস্যা বহন করতেছে কীনা তা জরায়ূতে স্থাপনের পূর্বেই ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করিয়া দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। একে PGD বা Pre-Implantation Genetic Diagnosis বলে।। (৩)

 

IVF কখন হতে আরম্ভ হয়েছে?

Edwards ১৯৫০ সন হতে IVF এর উপর কাজ আরম্ভ করেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ২৫ শে জুলাই বিশ্বে সর্ব প্রথম , Louise Brown, নামে  টেষ্ট টিউব শিশুটিকে উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেন।

এর পর Edwards বিশ্বে তার অন্যান্য সহকর্মীদেরকে সংগে লয়ে পদ্ধতির আরো উন্নতি সাধন করে একত্রে কাজ চালাতে থাকেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ মিলিয়নের মত টেষ্ট টিউব শিশু জন্মানো হয়েছে।

এর মাধ্যমে তিনি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উপর একটা বড় ধরনের অবদান রাখেন।

আজ বিশ্বে সর্বত্র IVF পদ্ধতির চিকিৎসা পূর্ণ মাত্রায় চালু রয়েছে।

বেশ কিছু প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে তাকে এগুতে হয়েছিল।

১৯৫০ সনে যখন তিনি এই গবেষনা আরম্ভ করলেন, তখন মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল তার গবেষনার ফান্ড বন্দ করে দিলেন।

তখন একটা প্রাইভেট অর্গানাইজেশন তার এই গবেষনার কাজে ফান্ড প্রদান করতে এগিয়ে এসেছিল।

ধর্মীয় , সামাজিক ও আইন সংস্থা গুলী তার এ কাজের কঠোর বিরোধিতা মুলক সমালোচনা আরম্ভ করেছিল। তারা এ পদ্ধতিকে অনৈতিক বলে দাবী করতে থাকলেন।

কিন্তু তিনি এর মধ্য দিয়ে কাজ চালিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন।

কাজের পদ্ধতির দিক দিয়েও পথম দিকে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এজন্য তিনি Gynecologist Patrick Steptoe, এর সংগে যোগাযোগ করে সহযোগিতা গ্রহন করেন।তিনি সার্জারীর মাধ্যমে ডিম্বাশয় হতে ডিম্বকোষ সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করেন।

বর্তমানে এই পদ্ধতিকে অনেক উন্নত করা হয়েছে। এখন ULTRA SOUND দ্বারা পরিপক্ক ডিম্বকোষকে OVARY তে সনাক্ত করা হয় এবং মাইক্রোসিরিঞ্জ দ্বারা সেটাকে সংগ্রহ করা হয়।

এবং  মাইক্রোসিরিঞ্জ দ্বারা শুক্রানুকে টেষ্ট টিউব (বা পেট্রি ডিস)এর ডিম্বকোষে সরাসরি ইনজেক্ট করিয়া FERTILIZE  করা হয়।

 

PGD বা Pre-Implantation Genetic Diagnosis

কী?

এই পদ্ধতিতে জরায়ূতে কোষ ঢুকানোর পূর্বে, এই কোষে কোন জ্বীনগত ত্রুটি আছে কিনা তা ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করিয়া লওয়া হয়। এর ফলে পিতামাতা মারাত্মক জেনেটিক ত্রুটিপূর্ণ শিশু, যেমন Cystic fibrosis, Sickle Cell Anemia ও Thalassemia সহ মারাত্মক জ্বীনগত ত্রুটি পূর্ণ শিশু গ্রহন না করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

চিকিৎসক গণ ২টা পদ্ধতিতে জ্বীনগত ত্রুটি নির্ণয় করে থাকেন, যেমন-

·         FISH (Fluorescent in situ Hybridization)

·       PCR

IVF পদ্ধতিতে  কী কোন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?

জী হ্যা,

নিম্ন লিখিত সমস্যাগুলী হতে পারে যেমন-

·         একাধিক কোষ জরায়ূতে ঢুকানোর ফলে একাধিক শিশু জন্মাতে পারে।

  • OHSS: Ovarian Hyper- stimulation Syndrome: এতে অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রশ্রাব হওয়া, কীডনী নষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
  • তলপেট প্রদাহ

(৩)

(নীচের ভিডিও গুলী দেখুন)

এছাড়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দুই একটা  পূর্ব-প্রসব হওয়া ছাড়া আর তেমন কোনই ক্ষতি এ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। এই পদ্ধতিতে যারা জন্ম লয়েছে তারা অনেকেই আজ পূর্ণ বয়স্ক ও সন্তান সন্ততির পিতা মাতা হয়ে সচ্ছন্দ জীবন যাপন করিতেছেন।আমেরিকায় ১৯৮১ সনে IVF ও এই জাতীয় পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ২,০০০০০ শিশু জন্মেছে।(২)

 

 পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-

http://www.chkdr02.wordpress.com

Updated 0n-

 

ভিডিওগুলী দেখুন-

১।

Fertility Clinics IVI – Pre-implantational Genetic Diagnosis PGD (EU, 2014)

https://www.youtube.com/watch?v=zUXmRSjj1Os

২।

3D animation of how IVF works

https://www.youtube.com/watch?v=GeigYib39Rs

৩।

In Vitro Fertilization (IVF)

https://www.youtube.com/watch?v=uXsCngh89fI

 

১৯ তম পর্বের সূত্র সমুহ-

১. NOBEL PRIZE

http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2010/

২. WEB MD

http://www.webmd.com/infertility-and-reproduction/guide/in-vitro-fertilization

PGD

৩. http://pgdfrantz.blogspot.com/

 

 

 

ডিএনএ কী? ১৫ তম পর্ব, আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরনীর বুকে রেখে দিতে পারেন,কৃত্রিম CLONING কী?(৩)।

ডিএনএ কী? ১৫ তম পর্ব, আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরনীর বুকে রেখে দিতে পারেন,কৃত্রিম CLONING কী?(৩)।

 

 

1

 

Figure source- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/

Figure-1

Sir John B. Gurdon (বামে)
জন্ম: ১৯৩৩, Dippenhall, United Kingdom

Shinya Yamanaka (ডানে)
জন্ম: ১৯৬২,Osaka, Japan

তারা ২০১২ সালে মেডিসিন বা ফিজিওলজীর উপর এর সংগে একত্রে নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন।

Sir John B. Gurdon কী আবিস্কার করেছিলেন?

এই পর্বটি বুঝতে পর্ব ১৩ ও ১৪ আর একবার দেখে নিলে বুঝতে সহজ হবে।

আগে বিশ্বাষ করা হত একটা PLURIPOTENT STEM কোষের যাত্রা একমুখী ও অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ যেমন ধরুন আমাদের ভ্রণের PLURIPOTENT STEM কোষ হতে আমাদের শরীরের যাবতীয় বিশেষায়িত কোষ যেমন মস্তিস্ক কোষ,হার্ট কোষ,লিভার কোষ ইত্যাদি জন্মায় ও শুধু মাত্র সম্মুখে অর্থাৎ বার্ধক্য ও মৃত্যুর (APOPTOSIS) দিকেই অগ্রসর হতে থাকে। ( ১৪ তম পর্ব দেখুন)

এই বিশেষায়িত কোষ গুলী আর কখনো BACK GEAR করে ভ্রণ জীবনের PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হতে পারেনা। আর যদি তা পারে তার অর্থ ঠিক এইরুপ দাড়ায় যেমন একজন ১০০ বৎসরের বৃদ্ধ তার জীবন চক্রকে BACK GEAR করে সে তার জন্ম কালের বয়সে ফিরিয়ে নিতে পারার মত একটি ঘটনা ঘটে যাওয়া।

Sir John B. Gurdon ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচির উপর একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত করে পুনরায় হুবহু নুতন ব্যাঙাচি ও ব্যাঙ তৈরী করা যায়।

এর কী অর্থ দাড়ালো সেটা কী একটু অনুধাবন করতে পেরেছেন?

এর অর্থ দাড়ালো একজন ১০০ বৎসরের বৃদ্ধ, তারই শরীরের ১০০ ট্রিলিয়নের যে কোন একটি কোষ সংগ্রহ করে, সেই কোষের নিউক্লীয়াসের মধ্যের তারই CHROMOSOME কে ব্যবহার করে তারই মত হুবহু একজনকে নব জন্ম দেওয়া সম্ভব হল।

কী ভয়ংকর কথা,একটু ভেবে দেখুন তো!!!

এটা কী বাস্তবে সম্ভব?

জী, হ্যাঁ,

সম্ভব। এই বিজ্ঞানীদ্বয় এহেন অসম্ভব বিষয়কে সম্ভবে পরিণত করেছেন।

তবে, বিশ্ব সমাজ, বিজ্ঞানীদেরকে বলেছে, তোমরা অন্ততঃ মানব জাতির উপর এই পরীক্ষা নীরিক্ষাটা চালিওনা, মানব সৃষ্টির ক্ষমতাটা নিজেদের হাতে লইওনা, তা করলে মানুষ সৃষ্টির পদ্ধতিকে ভূল পথে চালিত করে দিয়ে এই পৃথিবী হতে মানব জাতিকে ধংস করে দিবে।

এ কারণে মানব CLONING করাটা আইন করে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের উপর মানব CLONING নিষিদ্ব করা না হলে, এতদিনে আমরা অজস্র CLONE(কপি) মানব সমাজে চলা ফিরা করতে দেখতে পেতাম।

তবে অন্য প্রাণীদের উপর যত পার করতে বাধা নাই।

তার সেই থিওরীর উপর ভিত্তি করেই আজ উন্নত বিশ্বে অহরহ পশু এর CLONING করে উৎপাদন চলতেছে। সেই পশুর মাংসও বাজারজাত করা চলতেছে।

তাছাড়া সম্প্রতি , শুধু মাত্র প্রাণীর MUSCLE STEM কোষ উৎপাদন করে, সেই STEM কোষ হতে, প্রাণী হত্যা ব্যতিরেকেই, মাংস উৎপাদন করিয়া, সেই মাংসও ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচে্ছ। তবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চালু হতে আরো বেশ কিছু সময় লাগবে।

বিজ্ঞানীরা চাচ্ছেন মাংসের জন্য অনবরত প্রাণী হত্যা করার মত বাড়তি ঝামেলা না পোহায়ে, পরিবেশ দুষণ না করে, মাংসের চাহিদাটা, শুধু ফ্যাক্টরীর ল্যাবরেটরীতে উৎপাদিত মাংস দ্বারা পুরণ করা যায় কিনা। মন্দ নয় ধারনাটা।তবে চাহিদা মেটানোর মত পরিমান উৎপন্ন করে সহজলভ্য করাটা এখনো বেশ কিছু দুরের ব্যাপার (২)

Sir John B. Gurdon এর পরীক্ষাটা কী ছিল?

তিনি একটি ব্যাঙের অপরিপক্ক ডিমের NUCLEUS কে বের করে ফেলে দিয়ে, সেই ডিম্বের মধ্যে একটি ব্যাঙাচির পরিপাক তন্ত্রের নাড়ীর (INTESTINE) পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি পর্যবেক্ষন করে দেখতে পেলেন ডিম হতে ঠিকই হুবহু ব্যাঙাচি জন্মও নিল এবং বর্ধিত হয়ে পূর্ণ ব্যাঙেও পরিণত হল। এরুপ অনেক গুলো পরীক্ষা করেছিলেন চিত্র-১ (১)

Sir John B. Gurdon এর এই ছোট্ট একটা পরীক্ষায় কতবড় রহস্যের দ্বার উন্মোচন হল তা কী ধরতে পেরেছেন?

এটা ভাল ভাবে বুঝতে গেলে, আসুন আগে আমরা কিছু কাল্পনিক নাম ধরে লই, তাহলে বুঝতে সহজ হবে।যেমন-

উক্ত অপরিপক্ক ব্যাঙের ডিম্ব হতে যদি NUCLEUS টি বের করে না ফেলা হত, ধরে নিন তাহলেও ঐ ডিম্ব হতে একটি ব্যাঙাচি ও ব্যাঙের সৃষ্টি হত, ধরা যাক উক্ত সম্ভাব্য ব্যাঙটির নাম “A’

যে ব্যাঙাচিটির পরিপাক তন্ত্রের নাড়ীর বিশেষায়িত কোষ হতে NUCLEUS সংগ্রহ করে উক্ত ডিমের মধ্যে বসিয়েছেন, সেই ব্যাঙাচিটির নাম ধরুন “B”

ডিমের NUCLEUS ফেলে দিয়ে ‘B” ব্যাঙাচির নাড়ীর বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকিয়ে দেওয়ার পর যে ব্যাঙাচিটি বা ব্যাঙটি উৎপন্ন হল, ধরুন তার নাম “C”।

মনে রাখতে হবে NUCLEUS এর মধ্যেই CHROMOSOME, যা প্রানীটির BLUE PRINT বা মডেল অবস্থিত থাকে। প্রানীটি ঠিক যেমন CHROMOSOME টি পাইবে, সে হু-বহু ঠিক তদ্রুপ ই হইবে। ক্রোমোজমের বাইরে তার কিছুই গড়ার ক্ষমতা নাই।

এবার তাহলে একটু চিন্তা করুনতো প্রথম সম্ভাব্য ব্যাঙ “A” ও তৃতীয় বাস্তব উৎপাদিত ব্যাঙ “C”এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?

এদের পার্থক্য মূল জায়গায় ক্রোমোজোমে। সম্ভাব্য “A’ ব্যাংটির একটা স্বাভাবিক নিজস্ব CHROMOSOME ও বৈশিষ্ট্য থাকত। যেটা ডিম্ব হতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তার মধ্যে “B” ব্যাঙাচির CHROMOSOME ঢুকিয়ে দিয়ে বাস্তব “C” ব্যাঙাচি উৎপন্ন করা হয়েছে।
এর অর্থ দাড়াল “C’ ব্যাঙাচি টি “B” ব্যঙাচিটির একটি কপি বা হুবহু অনুরুপ প্রানী উৎপাদিত হইল। কারণ তাদের উভয়ের ক্রোমোজোম একই।
তাহলে এই পরীক্ষাটা কী কী রহস্য উন্মোচন করল?

১) এই পরীক্ষায় প্রমাণিত করল যে,আমরা একটি প্রানীর অনুরুপ কপি আর একটি প্রানী উৎপাদন করতে পারি।
কারন, একটি প্রানীর জীবনের সব কিছুই তার ক্রোমোজোমের মধ্যেই থাকে। আর এখানে একটি প্রানীর ক্রোমোজোম সংগ্রহের মাধ্যমেই আর একটি প্রানী উৎপাদন করা হল। অতএব “C” ব্যাঙাচির ক্রোমোজোম ও “B”ব্যাঙাচির ক্রোমোজোম হুবহু একই। তাই এরা একটা আর একটার হুবহু কপি প্রাণী।

২) আবার এই পরীক্ষায় এটাও প্রমাণিত করল যে,আমরা বয়স্ক বিশেষায়িত কোষকে ভ্রণের STEM কোষে পরিণত করতে পারি।
কারণ, “B” ব্যাঙাচির নাড়ী হতে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোম সংগ্রহ করে নিউক্লীয়াছ-শূন্য ডিম্বের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলে “C” ব্যাঙাচির জন্ম হয়েছে। এই নব জন্ম লওয়া “C” ব্যাঙাচিতে আর কোন পরিপক্ক বিশেষায়িত নাড়ীর কোষ নাই। যদিও তাকে সংগ্রহ করা হয়েছে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষ নাড়ী হতে।

এখন এই নব জন্মিত “C” কোষে যত কোষ আছে সবই STEM কোষ।এরা অতি সত্বর সব PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হয়ে, নূতন “C” ব্যাঙের জন্ম দিল। (পর্ব-১৪ দেখুন)

অতএব এই পরীক্ষায় এটাও প্রমাণিত হল যে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষ অপরিবর্তনীয় নয়। বরং একে, এর আদি প্রাথমিক জীবনের কোষে (PLURIPOTENT STEM CELL) পত্যাবর্তন করানো যায়।(পর্ব-১৪ দেখুন)

2.png

Source of Figure-  http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/press.html

চিত্র-২, উপরের অংশে, বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon এর ব্যাঙাচির উপর পরীক্ষা। নীচের অংশে, বিজ্ঞানী Shinya Yamanaka এর পরীক্ষা ।

3

Source of Figure-  http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/press.html

চিত্র-৩

চিত্র-৩ এ দেখানো হয়েছে কীভাবে একটি বিশেষায়িত কোষে জ্বীন ঢুকিয়ে IPS (INDUCED PLURIPOTENT STEM CELL)তৈরী করা হয়।

উপরের চিত্র-২ এ লক্ষ করুন, বামে একটি ব্যাঙের ডিম্ব, যার মধ্য থেকে NUCLEUS বের করে ফেলা

একটু ডানে,NUCLEUS শুণ্য ডিম্বটির মধ্যে অন্য একটি ব্যাঙাচির নাড়ীর পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকানো হচ্ছে (২ নং)।

তার একটু ডানে, ডিম্বটি FERTILIZED হয়ে একটা ZYGOTE এ পরিণত হয়ে STEM কোষের ভ্রুণে পরিণত হয়ে গেছে (৩ নং) ।
তার ডাইনেই ডিম্বটি হতে প্রথমে ব্যাঙাচি ও পরে ব্যাঙের বাচ্চায় পরিণত হয় গেছে।

ঠিক এর নীচেই (২নং চিত্র) এই থিওরী প্রয়োগ করে পশু CLONING দেখানো হয়েছে।(পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)।(১)

এটাই কৃত্রিম CLONING , যার পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon.

IPS বা INDUCED PLURIPOTENT STEM CELL কী

এটা একটা কৃত্রিম স্টেম কোষ, যা সরাসরি জ্বীন ঢুকিয়ে করা হয়। একে IPS বা INDUCED PLURIPOTENT STEM CELL বলা হয়।

Shinya Yamanaka কী আবিস্কার করেছিলেন?

২০০৬ সালে Shinya Yamanaka একটি চর্মের পরিপক্ক বিশেষায়িত (FIBROBLAST) কোষে Oct3/4, Sox2, c-Myc, Klf4 নামক চারটি TRANSCRIPTION FACTOR জ্বীন ঢুকিয়ে দিয়ে EMBRYONIC PLURIPOTENT কোষে ফিরিয়ে লইতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এই কৃত্রিম কোষ গুলিকেই IPS বা INDUCED PLURIPOTENT কোষ বলা হয়।

এই কৃত্রিম কোষ গুলী সঠিক জ্বীন গুলী পেয়ে যাওয়ার কারণে প্রাকৃতিক EMBRYONIC PLURIPOTENT কোষ গুলীর মতই এরা যে কোন বিশেষায়িত কোষে পরিণত হতে পেরেছিল।

Oct3/4, Sox2, c-Myc, Klf4 এই ৪টি এবং Oct3/4, Sox2, Nanog , Lin28, এই ৪টি, এই মোট ৮টি TRANSCRIPTION FACTOR জ্বীন, সাধারণ কোষকে PLURIPOTENT STEM কোষ হওয়ার যোগ্য করায়, যে PLURIPOTENT STEM কোষ হতে অন্য সমস্ত বিশেষায়িত কোষ তৈরী হয়।(পর্ব-১৪ দেখুন)

এভাবেও প্রানীকে CLONING করা যায়।

মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।

অন্যান্য পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-  https://chkdr02.wordpress.com/

Edited on- 12/4/2015

৫ তম পর্বের সূত্র সমূহ-

১)NOBEL PRIZE 2012
http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/
২)STEM CELL MEAT
http://www.americanthinker.com/2013/09/cultured_meat_peta_and_mandels_cow.html