৫৯ তম পর্ব। কী আবিস্কার করিয়া এই বিজ্ঞানীত্রয় রসায়ন শাস্ত্রে ২০১৮ এর নোবেল বিজয়ী হলেন? এরা জীব বিবর্তনের শক্তিকে নিয়ন্ত্রনে এনে ও এর প্রয়োগের মাধ্যমে বহু প্রকারের মানব কল্যানমূলক কাজে প্রয়োগ করে মানব জাতির অসাধারণ উপকার সাধন করেছেন।এমনকি ক্যানসার চিকিৎসার ও উন্নয়ন সাধন করেছেন।
1.Frances H. Arnold . 2. George P. Smith. 3. Sir Gregory P. Winter
Source of figure- https://www.nobelprize.org/prizes/chemistry/2018/summary/
From left to right
1.Frances H. Arnold
Born: 25 July 1956, Pittsburgh, PA, USA
Affiliation at the time of the award: California Institute of Technology (Caltech), Pasadena, CA, USA
Prize motivation: “for the directed evolution of enzymes.”
Prize share: 1/2
2. George P. Smith
Born: 10 March 1941, Norwalk, CT, USA
Affiliation at the time of the award: University of Missouri, Columbia, USA
Prize motivation: “for the phage display of peptides and antibodies.”
Prize share: 1/4
3. Sir Gregory P. Winter
Born: 14 April 1951, Leicester, United Kingdom
Affiliation at the time of the award: MRC Laboratory of Molecular Biology, Cambridge, United Kingdom
Prize motivation: “for the phage display of peptides and antibodies.”
Prize share: 1/4
এই বিজ্ঞানীত্রয় কী আবিস্কার করিয়া রসায়ন শাস্ত্রে (Chemistry) নোবেল বিজয়ী হলেন?
বিজ্ঞানীগন এটা লক্ষ্য করেছেন যে এই বিশ্বে জীব জগতে সর্বত্র ও সর্বদা বিবর্তন শক্তি (Evolution) কাজ করে চলেছে। আর এই বিবর্তন ঘটার মূল শক্তি হল জ্বীন এর mutation বা পরিবর্তন ঘটানো। যেমন ধরুন আপনি আহারের জন্য একটি রেস্তোরায় প্রবেশ করিলেন। সেখানে তাক এর উপর বিভিন্ন ধরনের স্বাদ এর সুস্বাদু খাদ্য স্তরে স্তরে সাজানো দেখতে পেলেন।
এই বিভিন্ন ধরনের স্বাদ এর মূল কারণ এদের মূল উপাদান যা পাচক মিশ্রিত করে করে খাদ্যটি তৈরী করেছেন।
ঠিক তদ্রুপ এই বিশ্বে প্রতিটা প্রানীরই মূল বৈশিষ্ট নিহিত থাকে তার প্রতিটা কোষ এর অভ্যন্তরে নিউক্লীয়াস এর মধ্যে নিহিত ক্রোমোজোম,ডি এন এ ও জ্বীন এর উপর। (ক্রোমোজোম,ডি এন এ ও জ্বীন কী তা বুঝতে আমার পর্ব ১-১১ পর্যন্ত পড়ুন)
তাহলে কী দাড়ালো?
খাদ্যের উপাদান পরিবর্তন করে যেভাবে খাদ্য বস্তুটাকে পরিবর্তন করা যায় ঠিক সেই একই ভাবে ক্রোমোজোম,ডিএনএ বা জ্বীন পরিবর্তন করিয়া দিলেও জ্বীন দ্বারা উৎপন্ন প্রোটীন (আমিশ) এর ও পরিবর্তন ঘটে যায়।
(জ্বীন কী ভাবে প্রোটীন উৎপাদন করে তা জানতে আমার ১১ তম পর্ব পড়ুন)
জ্বীন এর পরিবর্তন ঘটা বা ঘটানোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় Mutation বলা হয়। (কী ভাবে জ্বীন এর Mutation হয় তা জানতে আমার ১২ তম পর্ব পড়ুন)
প্রোটীন কী? প্রোটীন Amino acid দ্বারা গঠিত একটি জৈব যৌগ। Amino acid এর বহুবিধ রকম সংযুক্তিতে এর প্রকার যেমন অসীম তেমনি গুনাগুন ও কার্য প্রণালীর প্রকার ও অসীম।
আর ডিএন এ বা জ্বীন প্রোটীন এর এই বহুমুখী কার্যক্ষমতাকে তার প্রয়োজন অনুসারে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে স্তরে স্তরে বংশানুক্রমিক পরিবর্তন ঘটাতে থাকে, যাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় Evolution বলা হয়।
এই বিজ্ঞানী ত্রয় কী করেছেন?
এরা এক কথায় ডি এন এর এই অন্দরমহলের কাজ কামের উপর রীতিমত হস্তক্ষেপ করে ফেলছেন । কী মারাত্মক ব্যাপার, তাই নয় কী?
এরা কী করেছেন? একটা মানুষ যেমন জঙ্গলের অতি শক্তিশালী হস্তি প্রানীকে বসে এনে নিজেদের স্বার্থে অনেক বড় বড় কাজ করিয়ে নিতে পারে, এরাও ঠিক ডি এন এ যেমন জ্বীন এর পরিবর্বর্তন (Mutation) ঘটিয়ে প্রানী জগতের বিবর্তন (Evolution) ঘটায়, ঠিক তেমনি ভাবে লক্ষ্য ঠিক রেখে ডি এন এ এর জ্বীন এর পরিবর্তন (Mutation) ঘটিয়ে ও Evolution এর কৌশলকে অবলম্বন করে ও প্রয়োগের মাধ্যমে এমন Enzyme, Protein ও Antibody উৎপাদন করেছেন যা মানব জাতির অপরিসীম কল্যানকর কাজে আসতেছে। Enzyme কী, তা পরবর্তীতে আলোচোনায় আসতেছে।
মানব জীবনে এই আবিস্কারের কল্যানকরের ক্ষেত্র বহুমখী যেমন, জৈব জ্বালানী উৎপাদন করে পরিবহন খাতে প্রয়োগ করে বিশ্বের পরিবেশ রক্ষা করা, অনেক বড় বড় জটিল Autoimmune রোগের যেমন Arthritis, psoriasis,Chronic Gastroenteritis ইত্যাদি এর ঔষধ তৈরী করা। এর উপর ভিত্তি করে Adalimumab নামক তৈরী ঔষধটি ইতিমধ্যে ২০০২ সনে সরকারী অনুমোদন পেয়েছে।
এদের Phage- Display পদ্ধতিতে উৎপাদিত Antibody দ্বারা Metastatic Cancer বা ছড়িয়ে যাওয়া ক্যান্সার ও নিরাময় করতে পারে। Phage-Display কী, তা পরবর্তীতে আলোচোনায় আসতেছে।
Enzyme কী?
এনজাইম একটি বৃহৎ অনুর জৈবযৌগ যা রসায়ন প্রতিক্রিয়ার সময় Catalyst হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে রসায়ন প্রতিক্রিয়ায় অল্প শক্তি ব্যবহার করে রসায়ন প্রতিক্রিয়া ঘটাকে অতিশয় দ্রুত করে দেয়। ফলে অল্প সময়ে PRODUCT তৈরী হয়ে যায়।
রসায়ন প্রতিক্রিয়ার সময় Enzyme যে পদার্থের উপর কাজ করে তাকে Substrate বলা হয়। রসায়ন প্রতিক্রিয়ার পর যে নূতন পদার্থ তৈরী হয় তাকে Product বলে।
অধিকাংস Enzyme প্রোটীন দ্বারা নির্মিত হয়।
Enzyme এর ব্যবহার—Enzyme শিল্পক্ষেত্রে বহু রকম যৌগপদার্থ তৈরীতে, ফার্মাসিউটিকালে ঔষধ নির্মানে ও প্রাণীর দেহের বহুবিধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈবরাসায়নিক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। (২)
Catalyst কী?
Catalysis এমন একটি প্রক্রিয়ার নাম যেখানে কোন একটি পদার্থ কোন একটি রাসায়নিক প্রকৃয়ার সময় উপস্থিত থাকিয়া নিজে অপরিবর্তিত থাকিয়া, অল্প শক্তি ব্যয় করে রাসায়নিক প্রকৃয়াটাকে অতি দ্রুত ঘটাতে সহযোগিতা করে। যে পদার্থ এই কাজটি করে তাকে Catalyst বলে। (৩)
২০১৮ এর রসায়নের নোবেল পুরস্কারের অর্ধেকটা বিজ্ঞানী Frances H. Arnold.কে প্রদান করা হয়েছে। ১৯৯৩ সনে তিনি সর্বপ্রথম Evolution প্রকৃয়ার ন্যায় জ্বীন এর মধ্যে Mutation বা জ্বীন এর code sequence এর পরিবর্তন প্রবেশ করিয়ে এমন একটি প্রোটীন উৎপাদন করতে সক্ষম হন যা একটা বিশেষ রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় Catalyst হিসাবে ব্যবহার যোগ্য হয়।
পরবর্তিতে তিনি তার এই পদ্ধতিকে পরিমার্জিত ও আরো উন্নত করে আরো কার্যোপযোগী বহুপ্রকারের প্রোটীন বা Enzyme বা catalyst তৈরী করতে থাকেন।
এই সমস্ত catalyst দ্বারা বহুপ্রকারের গুরুত্বপূর্ণ chemicals বা রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হতে থাকে।
এই সমস্ত রাসায়নিক পদার্থগুলী সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব হয়। এ সমস্ত Chemicals এখন যেমন পরিবহন খাতে biofuels বা জৈব জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আবার কিছু pharmaceuticals বা ঔষধ নির্মান কারখানায় ঔষধ নির্মান কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
নীচের চিত্রটিতে এই প্রকৃয়াটি সহজে দেখানো হয়েছে।
Source of picture (edited)- https://www.nobelprize.org/prizes/chemistry/2018/press-release/
উপরের চিত্রের বর্ণনা- ( মনে রাখতে হবে,বিষয়টি সম্পূর্ণ ল্যাবরেটরীতে practical কাজের বিষয়।)
১) উপরে বায়ে, একটি স্বাভাবিক DNA চিত্র। তার ডানে এই DNA এর মধ্যে ENZYME উৎপাদনের লক্ষে RANDOM MUTATION বা পরিবর্তন (লাল রং এর) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২) উপরে ডানে, এবার এই RANDOM MUTATED GENE দ্বারা RANDOM MUTATED ENZYME উৎপাদনের লক্ষ্যে এই MUTATED GENE কে BACTERIA (জীবানুর)এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ল্যবরেরীতে এভাবে GENE এর উপর গবেষনার কাজ করা হয়।
৩) এবার উৎপাদিত পরিবর্তিত ENZYME গুলিকে প্লেট এর উপর পরীক্ষা করা হল। এর মধ্যে যেগুলীকে কাংখিত রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত পাওয়া গেল (লাল রংএর) সেগুলীকে রেখে অকেজো গুলীকে (কালো রংএর) ফেলে দেওয়া হল।
৪) পুনরায় নুতন MUTATIONS ঢুকানো হল এবং এই চক্র চলতে থাকল।
এই পর্বে বিজ্ঞানী Frances H. Arnold কী ভাবে gene এর পরিবর্তন ঘটিয়ে তার কাংখিত enzyme উৎপাদন করে, তাকে catalyst হিসাবে ব্যবহার করে তার কাংখিত জৈবযৌগ রসায়ন উৎপাদন করিয়া Green house transport,ও ঔষধ উৎপাদনে ভূমিকা রেখে মানব কল্যানে অপরিসীম অবদান রেখেছেন তা বর্ণনা করা হল।
পরবর্তী পর্বে বাকী ২ জন বিজ্ঞানীদের আবিস্কারের কথা বর্ণনা করা হবে।
সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন- http://www.chkdr02.wordpress.com
References for chapter 59
1, https://www.nobelprize.org/prizes/chemistry/2018/press-release/
2, Enzyme- https://en.wikipedia.org/wiki/Enzyme
3, Catalysis– https://en.wikipedia.org/wiki/Catalysis