“ডলি” কে যে ভাবে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম পদ্ধতিতে CLONING(কপি) করে উৎপাদন করলেন। ২০ তম পর্ব।
“ডলি” কে যে ভাবে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমপদ্ধতিতেCLONING (কপি) করেউৎপাদনকরলেন।২০তমপর্ব।
DOLLY (SHIP)
Figure source- http://www.lifeofguangzhou.com/node_981/node_989/node_994/node_1024/2011/03/31/130154109886258.shtml
চিত্র– ১, Sir Ian Wilmut ওতাদেরকৃত্রিমউপায়েউৎপাদিতডলি ( স্ত্রীভেড়া)
জন্ম-৭ই জুলাই, ১৯৪৪, Hampton Lucy, England,(EMBRYOLOGIST).
এই পর্বটি ভাল ভাবে বুঝার জন্য ১৫ তম পর্বটি আর একবার পড়ে নিলে এটা বুঝতে সহজ হবে।
১৫ তম পর্বটির সংগে এই পর্বটি সরাসরি সম্পর্কিত।
সেখানে Sir John B. Gurdon ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচির উপর একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত করে পুনরায় হুবহু নুতন ব্যাঙাচি ও ব্যাঙ তৈরী করা যায়। (PLURIPOTENT STEM কোষ কী? বিস্তারিত জানতে ১৪ তম পর্ব দেখুন)
এর উপর তিনি ২০১২ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এটা আপনারা ১৫ তম পর্ব পড়ে
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
Sir John B. Gurdon এরপর আর কোন স্তন্যপায়ী প্রানীর উপর এ পরীক্ষা করেন নাই।
তবে তারই আবিস্কৃত পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে,১৯৯৬ সনের ৫ই জুলাই, ROSLIN INSTITUTE এ সর্বপ্রথম Sir Ian Wilmut , Keith Campbell ও EDINBURGH ইউনিভার্সিটির অন্যান্য সহযোগিরা ‘ডলি” নামক স্ত্রী ভেড়াকে উৎপাদন করিয়া বিশ্বে সাড়া জাগিয়ে ফেলেন। (উপরে তাদের চিত্র-১ দেখুন)
বিশ্বে এইটাই ছিল সব চাইতে বিখ্যাত ভেড়া। সমস্ত মিডিয়াতে এটা অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ফলাও করে স্বাড়ম্বরে প্রচার করেছিল। আপনারা কেহ কেহ তা হয়তো দেখেওছিলেন।
ডলি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৬টা বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল।
ডলি ফুসফুস সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬ বৎসর বয়সে ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০০৩ সালে।(১)
ডলির উৎপাদন কৌশল-
Figure source-https://scholarblogs.emory.edu/philosophy316/2014/01/27/the-hype-about-dolly/
চিত্র-২,
যে ভাবে ডলিকে উৎপাদন করা হয়ে ছিল।
উপরে চিত্র -২ লক্ষ করুন।
১।
ধরুন সর্বোপরি বামের স্ত্রী ভেড়াটির নাম “A”। A ভেড়াটির স্তন কোষ হতে একটি কোষ সংগ্রহ করিয়া তার থেকে তার নিউক্লিয়াছ সংগ্রহ করা হয়। এই নিউক্লিয়াছটির মধ্যের ক্রোমোজোম টাই ভাবী উৎপাদিত “ডলি” নামক শিশু ভেড়াটির ক্রোমোজোম হইবে। আর যেহেতু A ভেড়াটির CHROMOSOME এর দ্বারা শিশু ভেড়াটি উৎপন্ন করা হইবে তাই শিশু ভেড়াটি এই A ভেড়াটির CLONE (কপি) কৃত ভেড়াটি GENETICALLY হুবহু একই রুপ হইবে।
কিন্ত এটা একটা পূর্ণ বয়স্ক বিশেষায়িত (DIFFERENTIATED) কোষের ক্রোমোজোম।
পূর্বে ধারনা করা হইত, পূর্ণ বয়স্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোমকে BACK GEAR করে ভ্রুণের প্রারম্ভিক TOTI POTENT STEM কোষে ফিরিয়ে লওয়া সম্ভব নয়।
TOTIPOTENT STEM কোষ ঐ সমস্ত কোষকে বলা হয়, যে কোষগুলী ভ্রনের জন্মের ৪-৫ দিন পর্যন্ত থাকে, যার থেকে শিশুর বৃদ্ধির সংগে সংগে সমস্ত বিশেষায়িত কোষ, যেমন ,ফুল (PLACENTA), অস্থিকোষ, স্নায়ুকোষ , হৃদপিন্ড কোষ,লিভার কোষ, পেশী কোষ, ইত্যাদি রকমের অন্ততঃ ২২০ রকমের বিশেষায়িত কোষ উৎপন্ন হয়ে থাকে। (TOTIPOTENT STEM কোষ কী? বিস্তারিত জানতে ১৪ তম পর্ব দেখুন)
কিন্তু Sir John B. Gurdon ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রমান করিয়ে দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে একটা পুর্ণ বয়স্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজমকে, একটি ডিম্বকোষের নিউক্লিয়াছ কে বের করে ফেলে, তার মধ্যে ঐ বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোম সহ নিউক্লিয়াছকে স্থাপন করিয়া, অন্য কারো জরায়ূতে স্থাপন করিয়া দিলে, তখন এটা TOTIPOTENT বা PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হয়ে,ভ্রুণটি সম্পূর্ণ একটা নূতন শিশু হিসাবে জন্মাতে থাকে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ১৫ তম পর্ব দেখুন)।
২)চিত্রে লক্ষ করুন, A স্ত্রী ভেড়াটির ঠিক নীচের এবং মাঝের স্ত্রী ভেড়াটির দিকে। এই ভেড়াটির নাম ধরুন “B”. এবার এই B ভেড়াটির ডিম্বাশয় হতে একটা ডিম্বকোষ সংগ্রহ করিয়া সেই ডিম্বকোষের নিউক্লীয়াছ (CHROMOSOME সমেত) বের করে ফেলা হল। এই ডিম্ব কোষটির এখন শুধুমাত্র ছাইটোপ্লাজম (নিউক্লিয়াছ ছাড়া) রহিল।
৩) এবার A ভেড়ার স্তন হতে সংগৃহিত কোষের নিউক্লীয়াছকে, B ভেড়া হতে সংগৃহিত ডিম্বকোষ (যার নিউক্লীয়াছ ইতিপূর্বে বের করে ফেলা হয়েছে) একত্রে রেখে বৈদ্যুতিক সক এর দ্বারা মিশিয়ে FERTILIZED (নিষিক্ত) করা হল। এই FERTILIZED (ZYGOTE) কোষটি বিভাজন হতে হতে ৬-৮ টা কোষে পরিণত হল। এরা TOTIPOTENT STEM কোষ। এই নব TOTIPOTENT STEM কোষ উপযুক্ত পরিবেশ (জরায়ুর অভ্যন্তর) পেলেই একটা নব- জন্ম প্রাণী উৎপন্ন করতে সক্ষম। (চিত্র-২ এর ডান দিকে দেখুন)
৪)এবার সর্ব নিম্নের সারির ডান দিকের বড় স্ত্রী ভেড়াটির দিকে লক্ষ করুন। এই ভেড়াটির নাম দিন “C”।
এই স্ত্রী ভেড়াটিকে SURROGATE MOTHER বা অন্যের ভ্রুণ-গর্ভ ধারক মাতা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এবার পুর্বের উৎপাদিত ভ্রুণকে (যা ৬-৮ টা কোষে ইতিমধ্যে বিভাজিত হয়েছে) C ভেড়ার জরায়ুতে ইনজেক্ট করিয়া স্থাপন করা হইল।
পদ্ধতি সমাপ্ত।
এবার লক্ষ করুন , নীচের সারির বায়ে ছোট স্ত্রী ভেড়াটার দিকে। এই ভেড়াটাই যথা সময়ে C ভেড়ার গর্ভ হতে জন্ম লওয়া আমাদের সেই বিশ্ব বিখ্যাত “ডলি” নামের স্ত্রী ভেড়াটি।
আশা করি বিষয়টি আপনাদের নিকট পরিস্কার হয়েছে। (১-৩)
এটা কৃত্রিম উপায়ে CLONING (প্রাণীকে কপি করার) পদ্ধতির একটা পদ্ধতি, যার পথপ্রদর্শক হচ্ছেন বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon.(১৫ তম পর্ব দেখুন)।
ঠিক এভাবেই আপনি নিজেকে অথবা আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরণীর বুকে রেখে দিতে পারেন। কিন্তু মানব জাতি CLONING বা কপি করা আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ।
এটা নিষিদ্ধ করা না হলে আমরা এতদিনে আমাদের সমাজে অসংখ্য কপিকৃত-মানব দেখতে পেতাম। আপনি ইচ্ছা করলে দেখতে পেতেন আপনারই হুবহু রুপের আর একজন মানুষকে। কী মজা হইতো, তাই নয়কী?
এবার দেখা যাক এই পদ্ধতিটা কতটুকু নিরঙ্কুস।
এই পদ্ধতি কী সম্পুর্ণ সমস্যা মুক্ত?
উত্তর-“না”
এতে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে ও একেবারে নিরঙ্কুস ও নয়।। যেমন ধরুন উৎপাদিত শিশু ডলি হুবহু A ভেড়ার CHROMOSOME পেয়ে ঠিক যেমনটা হুবহু তারমত হয়ে নব জন্ম নিয়েছে, ঠিক তেমনই একই সংগে ডলি, A ভেড়াটির DNA এর TELOMERE হতে অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়া বয়সটিও, ডলির নিজের DNA তে লয়ে জন্মেছে।
অন্য ভাবে, ডলি জন্মের দিক দিয়ে নব-জন্ম হইলেও বয়সের দিকদিয়ে সে, A ভেড়াটির TELOMERE এর ক্ষয় প্রাপ্ত বয়সের পর অবশিষ্ট থাকা বয়সের সম পরিমান TELOMERE ও তার আনুপাতিক বয়স বা আয়ু সংগে লয়ে জন্ম গ্রহন করেছে।
এই কারনেই ডলিকে ৬ বছর বয়সে অগ্রিম মৃত্যু বরন করতে হয়েছে। ভেড়ার পূর্ণ বয়স ১২ বৎসর। A ভেড়াটির ৬ বছর বয়সের সময় CHROMOSOME লয়ে ডলিকে CLONE করা হয়েছিল।
তাহলে তার আর আয়ু থাকল ১২-৬=৬ বৎসর।
ঠিক ডলিও সেভাবে ৬ বৎসর আয়ু লয়ে ৬ বছরের মধ্যেই অগ্রিম বয়োবৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেছে।
এ পদ্ধতিটাকে এ ভাবে তুলনা করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে ট্রেন ও বাস চলাচলের জন্য ১২ দিন মেয়াদী একটা UNLIMITED মেট্রকার্ড ক্রয় করলেন। ক্রয় করার দিন হতে ঠিক ১২ দিন পর্যন্ত আপনি যতবার খুশী ট্রেন-বাস ভ্রমন করতে পারবেন।
৬দিন গত হওয়ার পর আপনার ঐ কার্ডটি আপনার সন্তানকে চলাচল করার জন্য তার হাতে তুলে দিলেন। এক্ষেত্রে ঐ কার্ডটির আয়ুস্কাল অবশিষ্ট ৬ দিন থাকার কারনে, আপনার সন্তান ও ঐ কার্ড দ্বারা অবশিষ্ট ৬ দিন ই মাত্র চলতে পারবে। কারণ ঐ কার্ডের ব্যবহার কারী যেই হউকনা কেন,তার আয়ুস্কাল কার্ডের মধ্যে পুর্ব হতেই নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।
এখানেও ঠিক তদ্রুপ ঘটনা ঘটেছে। ডলি, A ভেড়াটি হতে ৬ বৎসর গত হওয়া, ও অবশাষ্ট ৬ বৎসর আয়ু থাকা ডিএনএ ব্যবহার করে জীবন শুরু করেছিল। তাই সে ৬ বৎসরের মধ্যেই তার বার্ধক্য এসে মৃত্যু এসে যায়।
কী ভাবে ডলির আয়ু নির্দ্ধারিত হল?
আমাদের আয়ু অতিক্রম করার সংগে সংগে ঘড়ির কাটার মত আমাদের DNA প্রান্তের TELOMERE ও ক্ষয় হতে থাকে। যেহেতু ডলির সৃষ্টি হয়েছে TELOMERE ক্ষয় প্রাপ্ত DNA দ্বারা, তাই তাকে জন্ম হতেই ক্ষয় প্রাপ্ত TELOMERE লয়েই জন্মাতে হয়েছে। (TELOMERE এর সংগে আমাদের সরাসরি আয়ুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পর্ব-৫ পড়ুন)
আরো একটা পশ্ন থেকে যায়।
ডলি কী নিরঙ্কুস ভাবে ১০০% “A” ভেড়াটির CHROMOSOME লয়ে CLONE (কপি) হয়েছে?
উত্তর- না।
কারন, লক্ষ করুন, ডলি A ভেড়াটির শুধুমাত্র কোষের নিউক্লীয়াছ এর ১০০% CHROMOSOME ঠিকই লয়েছে। কিন্তু কোষের মধ্যে নিউক্লীয়াছের বাইরে ছাইটোপ্লাজমে কিছু কিছু MITOCHONDRIAL DNA ও থেকে যায়, সেইটা ডলি A ভেড়া হতে পায় নাই। (MITOCHONDRIAL DNA কী, তা জানতে ৯ম পর্ব পড়ুন)
যেহেতু ডলি B ভেড়ার ডিম্ব কোষ হতে সাইটোপ্লাজম গ্রহণ করেছে ,তাই তার MITOCHONDRIAL DNA ও B ভেড়া হতে এসেছে।
ডলি এভাবে ঠিক A ভেড়ার ১০০% জেনেটিক কপি না হয়ে সামান্য কিছুটা B ভেড়াটার MITOCHONDRIAL DNA এর ও জেনেটিক কপি হয়েছে।
আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। (১)
অন্যান্য পর্ব গুলী পড়তে এখনে ক্লিক করুন- www.chkdr02.wordpress.com
Updated on- 6/25/2016
২0 তম পর্বের সূত্র সমূহ-
DOLLY (THE SHEEP)
১)http://en.wikipedia.org/wiki/Dolly_(sheep)
CLONING
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Cloning
৩) Sir Ian Wilmut
http://www.lifeofguangzhou.com/node_981/node_989/node_994/node_1024/2011/03/31/130154109886258.shtml