চক্ষু,রেটিনা যে ভাবে কাজ করে পর্ব২৪(৪)

চক্ষু,রেটিনা যে ভাবে কাজ করে পর্ব২৪(৪)

1

চিত্র-১

Source of figure-  http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/1967/
বিজ্ঞানীদের চিত্র বাম হতে ডানে- ১)Ragnar Granit জন্ম: ৩০ অক্টোবর ১৯00, হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড। মৃত্যু: ১২ই মার্চ১৯৯১, স্টকহোম, সুইডেন। পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্মরত ছিলেন: Karolinska Institutet, স্টকহোম, সুইডেন।

২) Haldan Keffer Hartline জন্ম: ২২ডিসেম্বর ১৯০৩ , Bloomsburg, PA, USA মৃত্যু: ১৭ইমার্চ ১৯৮৩, Fallston, MD, USA পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্মরত ছিলেন: Rockefeller University, New York, NY, USA

৩) George Wald জন্ম:: ১৮ই নভেম্বর ১৯০৬, New York, NY, USA মৃত্যু: ১২ইএপ্রিল ১৯৯৭, Cambridge, MA, USA পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্মরত ছিলেন: Harvard University, Cambridge, MA, USA উপরোক্ত ৩ জন বিজ্ঞানী রেটিনার ফিজিওলজিক্যাল এবং কেমিক্যাল এর উপর কাজ করিয়া মেডিসিন অথবা ফিজিওলজীতে ১৯৬৭ সনে নোবেল বিজয়ী হন। (১)

রেটিনা কী?

পূর্বেই বলা হয়েছে,একটি ক্যামেরার অভ্যন্তরে ছবি ধারনের জন্য যেমন ফিল্ম থাকে, যেখানে বস্তুটির ছবিটি পতিত হয়, চোখের রেটিনাটাও ঠিক তেমনি বাহিরের বস্তুটি হতে আলোক রশ্মী রেটিনার উপর পতিত হয়ে বস্তুটির ছবি তৈরী হয়।চিত্র-২

চোখের অভ্যন্তরে বস্তু হতে প্রতিফলিত  আলোক রশ্মীর ভ্রমন এপর্যন্ত শেষ। কিন্তু তখনো আমরা কোন বস্তু দেখতে পারিনা। কারন, মূলতঃ আমাদের শুধু মাত্র এই চক্ষুগোলকের দ্বারা কোন কিছু ই দেখা সম্ভব নয়, যতক্ষন না মস্তিস্কের দৃষ্টি-কেন্দ্র কাজ করতেছে।।

আমাদের চক্ষু গোলক টি নিম্ন লিখিত দায়িত্ব গুলী পালন করে থাকে, যেমন-

১)আলোক রশ্মীকে  প্রতিসরিত করে এবং এই কাজটি করে থাকে কর্ণিয়া , লেন্স ,Aqous Humor ও Vitreous Humor.

২) রেটিনা চক্ষু গোলকটির একটি অংশ এবং এর কাজ হলো বস্তুর ছবিকে বৈদ্যুতিক প্রবাহে রুপান্তরিত করা।

৩) আইরিস চক্ষু গোলকটির একটি অংশ এবং এর কাজ হলো আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রন করা , অনেকটা ক্যামেরার এপার্চারের মতো।

৪) স্কেলেরার কাজ হলো আশ পাশ থেকে চক্ষু গোলকের অভ্যন্তরে আলো প্রবেশ না করতে দেয়া।

এ সবগুলো কাজই নিখুত ও পরিস্কার ছবির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যা কিছু দেখি আমাদের মস্তিস্ক দেখে, আমাদের মস্তিস্কের সর্ব পিছনের দিকে Visual Cortex ব দৃষ্টি-কেন্দ্র নামক একটি কেন্দ্র আছে (চিত্র-২) সেই সব কিছু দেখে। অতএব দেখার জন্য আলোক রশ্মী পৌছানো উচিৎ ছিল মস্তিস্কের পিছনে অবস্থিত Visual Cortex নামক স্থানে। সেটা সম্ভব হলে অনেক ধরনের জটিল পদ্ধতি এড়ানো সম্ভব হতো। কিন্ত তা মোটেই সম্ভব নয়। সেখানে আলোক রশ্মী পৌছাবার কোন পথ ই নাই। আর তা ছাড়াও এটা অত্যন্ত স্পর্ষ কাতর ও গুরুত্বপুর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এটা কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের অংস বিশেষ। এর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরী। তাহলে তার সর্ববিধ নিরাপত্তা রক্ষা করে কী ভাবে রেটিনার আলোক চিত্র গ্রহন করে? হ্যাঁ, তার জন্য অত্যন্ত সুন্দর, নিশ্চিত,অথচ অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কী সেই অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থা? জী হ্যাঁ, Visual Cortex বা দৃষ্টি কেন্দ্র বিশেষ বৈদ্যুতিক তার যার নাম Optic স্নায়ু (একটি বিশেষ ধরনের স্নায়ু) পাঠিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ্ রেটিনা জুড়ে জাল বিস্তার করে দিয়ে রেখেছে।

একটি স্নায়ু কোষ কী ভাবে কাজ করে বিস্তারিত জানতে ১৭ তম পর্ব দেখুন।(৫)
রেটিনাতে রয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন বিশেষ ধরনের গ্রহন-কারী স্নায়ু কোষ (Receptor) যার নাম Rods & Cones Cell (রড ও কোন্ কোষ) (চিত্র-৪)

কী করে এই রড ও কোন কোষ?

একেবারে সোজা সাপ্টা উত্তর । আর তা হল এই বিশেষ Receptor কোষগুলী, রেটিনার উপর পতিত আলোক রশ্মীকে সরাসরি বৈদ্যুতিক প্রবাহে রুপান্তরিত করিয়া, সেখানে Visual Cortex হতে প্রেরিত বিশেষ স্নায়ু Optic স্নায়ু তারের মধ্যদিয়ে Visual Center (দৃষ্টি কেন্দ্র) কে পাঠিয়ে দেয়।

তখন Visual Cortex (Secondary)- (২য় দৃষ্টি কেন্দ্র) এই বিদ্যুৎ প্রবাহ টিকে  বিশ্লেষন করে  বস্তুটির আকৃতি, অবস্থান ও গতি বিধি  নিরুপন করে ফেলে।(৩) কেবল মাত্র তখনি আমরা বস্তুটিকে দেখতে সক্ষম হই।

কী ভাবে এই রডছ ও কোন কোষ আলোক চিত্রকে বি্দ্যুৎ প্রবাহে রুপান্তরিত করে ও দৃষ্টি-কেন্দ্র ও সেই বিদ্যুৎ প্রবাহ কে পুনরায় আলোক চিত্রে রুপান্তরিত করে?

একে বারে সোজা উত্তর। এরা অন্য কোষের মত সাধারন কোষ নয়। এরা বিশেষ ইজ্ঞিনীয়ারিং কৌশল সম্পন্ন ভাবে গঠিত কোষ।

এরা Transducer বা এক শক্তি কে অন্য শক্তিতে রুপান্তর কারী হিসাবে তৈরীকৃত হয়েছে। রেটিনায় অবস্থিত রড ও কোন কোষ আলোক শক্তিকে সোজাসুজি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারে।

তখন Visual Cortex (secondary)- (২য় দৃষ্টি কেন্দ্র) এই বিদ্যুৎ প্রবাহ টিকে  বিশ্লেষন করে  বস্তুটির আকৃতি, অবস্থান ও  গতি বিধি  নিরুপন করে ফেলে।(২,৩,৪,৫,)

এ ব্যাপরে বিস্তারিত জানতে পর্ব-২২ (২) দেখুন।

এই ইজ্ঞিনীরিং কৌশলটি আমরাও দৈনন্দিন জীবনে অনবরত কাজে লাগাচ্ছি। যেমন ধরুন, আপনি যখন ঢাকায় বসে আপনার লন্ডনে অবস্থিত এক বন্ধুর সংগে SKYPE এ ফোনালাপ করছেন বা টেলিভিষন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করছেন।

তখন আপনার লন্ডন প্রবাশী বন্ধু আপনাকে তার কম্পিউটার বা টেলিভিষন পর্দায় হুবহু আপনার ছবিকে দেখতে পাচ্ছে।

কারন এখানেও ঠিক একই ঘটনা ঘটতেছে। অর্থাৎ ঢাকার টেলিভিষন কেন্দ্রের বা আপনার কম্পিউটারের ট্রান্সফর্মার আপনার বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মীকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরিত করে বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দিচ্ছে, আর আপনার লন্ডনে অবস্থিত বন্ধুটির কম্পিউটার বা টেলিভিষন এর ট্রান্সফর্মারটি ঐ তরঙ্গটিকে ধরে পুনরায় আলোক শক্তিতে রুপান্তরিত করিয়া আপনার বন্ধুটিকে হুবহু আপনার চিত্র অঙ্কন করে দিচ্ছে।

আর তাই আপনার বন্ধু লন্ডনে বসে আপনার হুবহু চিত্রটি দেখতে পাচ্ছেন।

আর যেহেতু দৃষ্টি-কেন্দ্রটি মস্তিস্কের একেবারে পিছনে অবস্থিত, তাই ওখানে কখনো খুব জোরে আঘাত লাগলে, ওটা অকেজো হয়ে গেলে চির জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই সাবধান!
2

Source of figure- https://en.wikipedia.org/wiki/Eye#/media/File:Schematic_diagram_of_the_human_eye_en.svg

 

চিত্র—২ চক্ষু গোলকের ছেকসন।

 

3

source  of figure –  http://thebrain.mcgill.ca/flash/d/d_02/d_02_cr/d_02_cr_vis/d_02_cr_vis.html

 

চিত্র-৩ (মস্তিস্কের পিছনে রেটিনা হতে 0ptic স্নায়ুর মাধ্যমে কোন বৈদ্যুতিক বার্তা Visual Cortex বা (দৃষ্টি কেন্দ্র) নামক স্থানে পৌছিলেই আমরা সেই বস্তু দেখতে সক্ষম হই।
4

Source of figure-  http://health.howstuffworks.com/mental-health/human-nature/perception/eye2.htm

চিত্র-৪ রড ও কোন (Rods & Cone) কোষ

চলতে থাকবে- অন্যান্য পর্ব গুলী এখানে দেখতে পাবেন। www.chkdr02.wordpress.com/

 

Updated- 3/22/2017

২৪ তম পর্বের রেফারেন্স সমূহ- ১) http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/1967/ ২) http://en.wikipedia.org/wiki/Retina RETINAL WORK ৩) NURO SCIENCE FOR KIDS http://faculty.washington.edu/chudler/retina.html

৪) http://www.webmd.com/eye-health/amazing-human-eye

৫) ১৭ তম পর্ব (স্নায়ূ কোষ)

https://chkdr02.wordpress.com/2014/02/22/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A7%A7%E0%A7%AD-%E0%A6%A4%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A5%A4-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%93/

 

 

 

About DR. ABDUL HAKIM CHAKLADAR

I AM A DOCTOR AND MICROBIOLOGIST. I LIVE IN NEW YORK, U.S.A. SINCE AUGUST 29.1997.

Leave a comment