হৃদপিন্ড কী?হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে? চেক ভালভ, পর্ব-৩৪(৩)

 

বুকের মধ্যখানে অবস্থান করে অনবরত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাকে জীবনভর বাচিয়ে রাখতেছে, যে হৃদপিন্ড নামক বস্তুটি, তার সম্পর্কে কী আপনি কিছু জানতে আগ্রহী ? তাহলে এই সিরিজ পড়ুন।

আপনারা পূর্বের পর্বে হৃদপিন্ড কী ভাবে কাজ করে তার কিছুটা জানতে পেরেছেন।

মানুষের রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র একটা CLOSED CIRCUIT. অর্থাত হৃদপিন্ডের সংকোচন সম্প্রসারনের সময় যে রক্তটা সমগ্র শরীরের প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষকে খাদ্য অক্সিজেন (O2) সরবরাহ করে একই সংগে এই কোষ গুলী হতে বর্য্য পদার্থ কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)বহন করে আনে, তা কিছু বড় বড় অসংখ্য ক্ষুদ্র সরু শিরা,উপশিরা ধমনীর ভিতরে থেকে আবর্তন করার মধ্য দিয়ে হতে থাকে।

অর্থাত রক্ত কখনই শিরা ধমনীর CIRCUIT এর বাইরে যায়না।

কখনো কখনো অতিরিক্ত রক্ত চাপের কারণে বা দুর্ঘটনার কারণে, মস্তিস্কের এই ক্ষুদ্র শিরা ফেটে রক্ত এই CIRCUIT এর বাহিরে বেরিয়ে পড়লে সে স্থানে রক্ত সরবরাহ ব্যহত হয়ে যায় মস্তিকের কাজ ব্যহত হয়ে যায়।

তখন আমরা একে BRAIN STROKE হয়েছে বলে থাকি।

একারণে বয়স ৪০ পেরুলেই প্রত্যেকের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো রক্তচাপ অনবরত নিয়ন্ত্রনে রাখা একান্ত প্রয়োজনীয়।

একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি .. লিটার রক্ত ধারন করেন।()

আর এইযে অসংখ্য শিরা উপশিরা রয়েছে এর  সব চাইতে সরু গুলিকে CAPILLARY বলে। এগুলী চুলের মত সরু। এর মধ্যদিয়ে একটি মাত্র রক্তকোষ RBC একদিকে যেতে পারে।

আর সমগ্র শিরা গুলী যদি একত্র করে লম্বা লম্বি ভাবে যোগ করা যায়, তাহলে কী অনুমান করতে পারেন এর দৈর্ঘ কত হবে?

এর দৈর্ঘ হবে প্রায় ৬০,০০০ মাইল যা আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটাকে বার পরিবেস্টিত করার পরও কিছু অবশিষ্ট থেকে যাবে।()

তাহলে এবার বুঝুন আমাদের সমগ্র শরীরে রক্ত সরবরাহের জন্য কতবড় দীর্ঘ শিরা উপশিরা অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটা কোষে রক্ত সঞ্চালনের জন্য কতবড় উন্নত প্রযুক্তি কাজ করতেছে!!

এতবড় সুদীর্ঘ CLOSED CIRCUIT পাইপ এর মধ্য দিয়া হৃদপিন্ডকে সঠিক ভাবে কার্য চালনার জন্য CIRCULATION (প্রবাহ)টাকে সব সময় এক মূখী রাখতে হয়।

তা না করলে অক্সিজেন (O2)মিশ্রিত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত রক্ত একত্র মিশ্রিত হয়ে গিয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে, যা কিছু কিছু হৃদপিন্ডের রোগের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে ( সম্পর্কে পরে কোন এক পর্বে আলোচনা করা হবে)

যে পদ্ধতি অনুসরন করে হৃদপিন্ডকে কাজ চালাতে হয়

)সব সময় শরীরের কোষগুলীকে ফুসফুস হতে বিশুদ্ধ (অক্সিজেন (O2) মিশ্রিত) রক্ত এনে, সরবরাহ করতে হবে।

) সব সময় শরীরের সমগ্র কোষ হতে দুষিত (কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)মিশ্রিত) রক্ত বহন করে এনে, ফুসফুস কে এই  কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) বের করে দেওয়ার উদ্যেশ্যে সরবরাহ করতে হবে।

) এই কাজটি করতে গেলে হূদপিন্ডকে রক্তের একমুখী সঞ্চালনের নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে। অর্থাত রক্ত কখনোই পিছন মুখে ফিরতে (REGURGITATE) করতে পারবেনা।

REGURGITATE এর ঘটনা ঘটলেই শরীরের কোষে বিশুদ্ধ রক্তের স্থলে দুষিত রক্ত পৌছে জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।

)পাম্পের সময় REGURGITATE ঠেকাতে গেলে হার্টের যথোপযুক্ত জায়গায় নিজস্ব CHECK VALVE ফিট করে রাখতে হবে। রক্ত সম্মুখে এগুবার সময় CHECK VALVE খুলে যায়।আর রক্ত  পিছনে যেতে চাইলেই, ভালভে  চাপ পড়ার কারণে ভালভটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে, পথটি বন্ধ করে ধরে।

হৃদপিন্ড এই CHECK VALVE এর ছোট্ট অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ MECHANISM টা ব্যবহার করে রক্তকে সব সময় এক মুখী প্রবাহের নিশ্চয়তা বিধান করে।

তাহলে দেখলেনতো হৃদপিন্ড CHECK VALVE এর ব্যবহার আমাদের জন্মের পূর্বেই আয়ত্ব করে নিয়ে কাজ চালিয়ে আসছে।

) যেহেতু উভয় রক্ত  অর্থাত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) মিশ্রিত (দুষিত) রক্ত অক্সিজেন (O2)মিশ্রিত (বিশুদ্ধ) রক্ত, উভয়কেই হৃদপিন্ড তার প্রকোষ্ঠের অভ্যন্তরে আনয়ন করে পরিচালনা করতেছে, অতএব এই দুই সম্পুর্ণ ভিন্ন ধরনের রক্ত যাতে সামান্য পরিমান মিশ্রিত না হতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা লাগবে, এই কারনে একই হৃদপিন্ডের এদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক রুম থাকতে হবে। উভয়ের মাঝখানে শক্ত প্রাচীর থাকতে হবে।

হৃদপিন্ডের VALVE কী?

ভালভ কোন তরল পদার্থের গতিপথ কে নিয়ন্ত্রন করে একমুখী বা শুধু সম্মুখগামী করে দেয়। এটা আমরা ব্যবহারিক জীবনেও প্রয়োগ করে থাকি।

উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে, টিউব ওয়েল এর কথা (চিত্র)।আপনারা অনেকেই এটা গ্রামে হয়তো দেখে থাকবেন।

কিন্তু এটা কী ভাবে কাজ করে, তাকী জানেন?

ভালভ কী ভাবে কাজ করে সেটা বুঝাবার জন্য নীচে টিউব ওয়েল এর ছোট্ট একটি উদাহরণ দিলাম

লক্ষ করুন, চিত্রে ( নং) লাল চিহ্নিত অংশে একটা CHECK VALVE বসানো থাকে। এই ভালবটিতে একটি উঠানামা করতে পারে এমন একটি ঢাকনা আছে। টিউব ওয়েলের হ্যান্ডেল নীচের দিকে চাপ দিলে টিউব ওয়েল এর মধ্যে অবস্থিত প্লাঞ্জার ওয়াসার টি উপরের দিকে উঠে আসে।এই এই সময়ে প্লাঞ্জার এর নীচে ভালভ এর উপরে  নিগেটিভ চাপের সৃষ্টি হয়  যার ফলে   CHECK VALVE টির ঢাকনা টি উপরের দিকে উঠে আসে, পাইপের মুখ খুলে গিয়ে মাটির নীচের পানি টিউব ওয়েলের বডিতে ঢুকে যায়। আর তখন টিউব ওয়েল থেকে পানির একটা অংশ বেরিয়ে আসতে থাকে।আর একটি অংশ পানি টিউব ওয়েলে VALVE এর উপরে সব সময় থেকে যায়।

এই পানিটা আর মাটির নীচের দিকে কখনোই ফেরত যেতে পারেনা,আবার হাতল উপরের দিকে উঠালে, প্লাজ্ঞার টি নীচের দিকে চলে যায়  নিগেটিভ চাপ চলে যায়।

তখনো ভালভের নীচে পানী থাকে।

কারণ?

কারন ইতিমধ্যে উপরে উঠা পানিটার নিম্ন মুখী চাপে ভালভের ঢাকনাটি দ্বারা টিউব ওয়েলের পাইপ এর মুখটাকে স্বয়ং ক্রিয় ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

আবার হাতলে চাপ দিলে একই ভাবে ভালভ এর মুখ খুলে গিয়ে নীচে থেকে পানি আনবে পানি বেরুবে।

এভাবে এই একই চক্র চলতে থাকে।

এতে পানির গতি সব সময় উর্ধমুখী থাকে, কখনোই নিম্ন মুখি হতে পারেনা। এই কাজটি করে টিউব ওয়েল এর চেক ভালভ এ।

যদি ওখানে চেক ভালভ বসানো না থাকতো তাহলে কী ঘটতো?

যদি চেক ভালভ না থাকতো তাহলে ভিতেরের নিগেটিভ চাপ চলে যাওয়ার সংগে সংগেই টিউব ওয়েল এর নীচের অংসের সমস্ত পানিটা ধপাস করে পাতালে চলে যেত।

আর হাতলে চাপ দিলেও টিউব ওয়েল থেকে কোন পানি সহজে বেরুত না।

কারন তখন টিউব ওয়েল এর নীচের অংশে তো কোনই পানি অবশিষ্ট নাই।

আশা করি এই উদাহরন দ্বারা আপনারা ধরতে পেরেছেন যে VALVE MECHANISM কি ভাবে তরল পদার্থের গতিপথ এক মুখী করে উদ্যেশ্য সফল করায়।

হৃদপিন্ড ঠিক আমাদের হাতে তৈরী টিউব ওয়েলের ভালভ ব্যবহার করার মত করে রক্তের গতিপথকে একমুখী রেখে তার উদ্যেশ্য সাধন করায়।

তবে টিউব ওয়েল এর কাজ থেকে হৃদপিন্ডের কার্য উদ্যেশ্য কিছুটা জটিল আছে, যেমন

টিউব ওয়েলএকটি OPEN SYSTEM পদ্ধতি। অর্থাত পানিটা বাইরে একবার বের করে দিলেই তার দায়িত্ব শেষ। পানি কোথায় গেল তার খোজ রাখার দরকার হয়না। পানিটা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবহার করার পর এর মধ্যে সৃষ্ট  দুষিত বর্জ দুরীভূত করে প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ উপাদান মিশিত করিয়া পুনরায় সেই পানি জায়গায় ব্যবহার করার কোন ঝামেলা নাই।

তাই টিউব ওয়েল একটি মাত্র ভালভ ব্যবহার করে তার সরল সাধারণ

কাজ চালাতে পারে।

আর সেক্ষেত্রে হৃদপিন্ড?

হৃদপিন্ডকে CLOSED CIRCUIT ব্যবহার করতে হয়। কারণ তাকে তার একটি অংশ দ্বারা ফুসফুস হতে  বিশুদ্ধ (অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত) সংগ্রহ করে শরীর কে দিতে হয়। যা হৃদপিন্ডের বাম পার্শের অংস করে।

এবং আর একটি অংস দ্বারা শরীর হতে দুষিত(CO2 মিশ্রিত) রক্ত সংগ্রহ করে অক্সিজেন মিশ্রনের কাজের জন্য ফুসফুসে পাঠাতে হয়। যা হৃদপিন্ডের ডান পার্শের অংস করে।

তাই এই জটিল কাজ সমাধানের জন্য, রক্তের গতিপথ সঠিক রাখার জন্য হৃদপিন্ডকে টি  ভালভ ব্যবহার করা লাগে।

সংগে থাকুন, পরের পর্বে হৃদপিন্ড তার এই চারটি ভালভ ব্যবহার করে কী ভাবে রক্ত সঞ্চালন চালায় তা বর্নণা করা হবে।

এক সংগে বেশী জানতে গেলে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে, তাই পর্ব ছোট করা হল।

 

৩৪

Source of figure- http://users.physics.harvard.edu/~wilson/arsenic/conferences/Feroze_Ahmed/Sec_3.htm

চিত্র, টিউবওয়েল এর ভালভ, কী ভাবে পানির গতিপথ শুধু মাত্র উর্ধ মুখী রাখিয়া নিয়ন্ত্রন করে, তা দেখানো হয়েছে। হৃদপিন্ডের ভালভ ঠিক একই ভাবে রক্তের গতিপথ এক মুখী রাখিয়া নিয়ন্ত্রন করে।

 

Source of figure– http://health.howstuffworks.com/human-body/systems/circulatory/heart-pictures.htm

 2

চিত্রএকটি হৃদপিন্ডকে যে ভাবে দেখায়।

3

Source of figure- http://www.dummies.com/education/science/anatomy/capillaries-and-veins-returning-blood-to-the-heart/

চিত্র, সমগ্র শরীরে রক্তের শিরা, উপরিরা, ধমনী গুলী জাল বিস্তার করে ছড়িয়ে আছে।(2)

পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন

http://www.chkdr02.wordpress.com/

 

Updated on- 8/28/2017

৩৪ তম পর্বের রেফারেন্স সমুহ

  1. FULL HEART DIAGRAM

http://www.cdc.gov/heartdisease/about.htm

2.HEART SECTION DIADRAM

. http://en.wikipedia.org/wiki/Circulatory_system

3 Circulatory System

http://www.texasheart.org/HIC/Anatomy/

 

About DR. ABDUL HAKIM CHAKLADAR

I AM A DOCTOR AND MICROBIOLOGIST. I LIVE IN NEW YORK, U.S.A. SINCE AUGUST 29.1997.

Leave a comment